দুই বালতির গল্প
লিখেছেন লিখেছেন আলীনূর ফাহাদ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৪:২৫ রাত
এক লোকের দুইটা বালতি ছিল। একটা খুবই নিখুত কোণ ত্রুটি ছাড়া আরেকটায় ছিল একটা ফুটা (ছিদ্র) , এই লোক যে মালিকের বাসায় কাজ করত। পুকুর ঘাট থেকে সেই বাসা বেস খানিকটা পথ।
লোকটা দুই বালতি ভর্তি করে পানি নিয়ে গেলেও মালিকের বাসায় পৌছতে পৌছতে ফুটা ওয়ালা বালতি থেকে প্রায় অর্ধেক পানিই পথে পরে যেত।
পুরো দুই বছর ধরে এই ভাবেই চলতে থাকল। লোকটা সেই ফুটা বালতিটার কারনে দেড় বালতি পানির বেশি তার মালিকের বাসায় কখনওই নিয়ে জেতে পারত না।
আর সেই জন্য নিখুত বালতিটা সব সময়ই খুব পার্টে থাকত। আর ফুটা ওয়ালাটাকে প্রায়ই টিটকারি মারত।
তাই সবসময়ই ফুটা বালতিটার মন থাকত বেশ খারাপ। তার অসম্পূর্নতার জন্যে সে সবসময়ই ছিল লজ্জিত, এবং সবসময়ই নিজেকে খুব ছোট মনে হত।
যে কাজের জন্যে তাকে তৈরি করা হয়েছে তার সে কাজের অর্ধেকটাই সে করতে পারছে, (সে এক অমানবিক প্যারা)
দুই বছর পার হওয়ার পর ফুটা বালতিটা একদিন আর সহ্য করতে না পেরে পুকুর থেকে পানি ওঠাণোর সময় লোকটাকে বললঃ
“আমি খুবই দুঃখিত। আর আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”
লোকটা ফুটাবালতি কে জিজ্ঞেস করলঃ কেন? তুমি দুঃখিত কেন?
ফুটা বালতি বললঃ
“আমার এই ছিদ্রটার কারনে তুমি আমার ভেতর পুরো পানি ভর্তি করে নিলেও জেতে জেতে পথেই প্রায় অর্ধেক পানিই পরে যাচ্ছে। আর তাতে তুমি এত কষ্ট করার পরো তোমার কাজের ঠিক মুল্যটা পাচ্ছ না।”
ফুটা বালতির কথা শুনে লোকটার কিছুটা খারাপ লাগল সে সহমর্মিতার সুরে বললঃ
“শোণ আমি যখন তোমাকে নিয়ে আমার মালিকের বাসায় জাব। আমি চাই তুমি তখন পথের পাশের সুন্দর ফুল গুলো দিকে লক্ষ কর। ওদেরকে দেখ। ”
এই বলে লোকটা পানি সহ দুই বালতি নিয়ে হাটা শুরু করল। ফুটাবালতিটা দেখল পথের পাশেই কত সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। কত সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটেছে। তার মন ভালো হয়ে গেল। কিন্তু তারপর আবারো যেই লাউ সেই কদু - মালিকের বাসায় পৌছতে পৌছতেই তার ভেতর থেকে অর্ধেক পানি আবারো পরে গেল। তাই সে আবার মন মরা হয়ে লোকটার কাছে ক্ষমা চাইল।
লোকটা তখন বললঃ “আচ্ছা তুমি কি আসার সময় লক্ষ করেছ যে সুন্দর সুন্দর ফুল গুলো ,ফুলের গাছ গুলো রাস্তার শুধু এক পাশে হয়েছে। তোমার পাশে। যেই বালতিটা ভালো সেই বালতি আমি যেই পাশে নিয়ে আসি সেই পাশে একটাও গাছ নেই।
ফুটা বালতি অবাক হয়ে লক্ষ করল কথা সত্য।
লোকটা বললঃ
এর কারন কি জান। এর কারন হল, আমি তোমার এই ত্রুটি টা সম্পর্কে আগেই জানতাম আর আমি তোমার এই দুর্বলতাটাকেই কাজে লাগিয়েছি। আমি যেই পাশে তোমাকে নিয়ে আসি সেই পাশে বিভিন্ন ফুলের বীজ লাগিয়ে ছিলাম। আর আমি যখনই পুকুর থেকে পানি তুলে আমার মালিকের বাসায় জেতাম তখন তুমিই এদেরকে পানি দিতে। আর তোমার কারনেই এই দুই বছর ধরে আমি আমার মালিকের বাসাকে সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখতে পেরেছি।
শোন ফুটা! তুমি এখন যেমন আছ যদি এমন না হতে তাহলে এত সুন্দর ফুল এই পথে কখনই হত না আর আমার মালিকো তার ঘরকে এত সুন্দর করে সাজাতে পারত না।”
মরালঃ আল্লাহ আমাদের জাকে যেমনই বানিয়েছেন, এর কোন না কোন কারন রয়েছে আর মজার ব্যাপার হল আমাদের যে দুর্বলতা রয়েছে তার মধ্যেও আল্লাহ শক্তি দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কাজ হল শুধু সেই শক্তিটাকে খুজে বের করা। আর সকল পরিস্থিতিতে বলা আলহামদুলিল্লাহ।
বিঃদ্রঃ ফুটা দেখলেই সুপার গ্লু খোজা শুরু কইরা দিয়েন না , মাঝে মাঝে ফুটাও কাজে লাগে।কি ঠিক বললাম না ভুল বললাম!!
ফেইসবুক
বিষয়: বিবিধ
৩২১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন