মুসলিম উম্মাহকে জীহাদের ময়দানে আল্লাহ কিভাবে সাহায্য করেন?? মুসলিমদের সাহায্য কারি আল্লাহর সৈনিকরা কারা??

লিখেছেন লিখেছেন আলীনূর ফাহাদ ১৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:০৬:০৩ দুপুর

সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের আর কেউ নেই। আর মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর গোলাম এবং প্রেরিত রাসুল। সালাত ও সালাম পেশ করছি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওপর , তার পরিবারের ওপর এবং তার সাহাবী গনের ওপর।



বদরের যুদ্ধের সময় যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর কাছে সাহাজ্যের মিনতি করছিল তখন জিবরাইল(আঃ) তার কাছে আসল। এসে তাকে বলল কাফেরদের দিকে ধুলো ছুড়ে মারতে এবং তিনি তাই করলেন। এই ধুলো প্রত্যেক কাফেরের চোখের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। এই একই ঘটনা ঘটেছিল হুনাইনের যুদ্ধেও। আল্লাহ ধুলোকে মুসলিমদের সহজোদ্ধা করে দিয়েছিলেন এবং এই ধুলো ও আল্লাহর প্রেরিত সৈনিক।

আল্লাহ মুসলিমদেরকে সাহায্যকরেন শত্রুদের অন্তরে মুমিনদের ভয় প্রবেশ করিয়ে দিয়ে।

আল্লাহ বলেনঃ “খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি…”আল ইমরান আয়াত ১৫১

আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন মুমিনদেরকে যে আল্লাহ মুমিনদের সাথে আছেন, যদি তারা আল্লাহর দ্বীনকে সমর্থন করেন তাহলে আল্লাহ এর বিনিময়ে মুমিনদেরকে দুনিয়াতে দৃঢ়পদ রাখবেন এবং কাফির (অবিশ্বাসী) দের অন্তরে মুমিনদের ভয় প্রবেশ করিয়ে দেবেন।

উহুদের যুদ্ধে মুসলিমদের পরাজয়ের পর আবু সুফিয়ান তার কিছু লোকের সাথে পরামর্শ করে ইচ্ছা পোসন করল যে আবার মুসলিমদের আক্রমন করে মুসলিমদের এ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। কিন্তু যখন তারা সেই কাজ করতে উদ্দত হল আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয় প্রবেশ করিয়ে দিলেন , যার ফলে তারা পিছ পা হয়ে গেল তাদের লক্ষ্য থেকে।

আল্লাহ মুসলিমদের যে বিজয় দান করেন তা আসে কয়েকটি পদ্ধতিতে।

১, আল্লাহ কাফেরদেরকে হত্যার মাধ্যমে মুসলিমদের বিজয় দান করেন

২, কাফেরদের অর্থনৈতিক, মানসিক এবং অন্যান্য এমন পরাজয় বহন করান যা তাদেরকে নিরাশ বা হতাশ হয়ে ফিরে জেতে বাধ্য করে।

৩, ওপরের উল্লেখিত দুই পদ্ধতি একসাথেও আল্লাহ কাফেরদের ওপর প্রয়োগ করেন।

আর মুমিনদের ক্ষেত্রে আল্লাহ মুমিনদের অন্তর এবং পা জিহাদের ময়দানে অবিচল রাখেন।

আল্লাহ বলেনঃ “যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে করে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পা গুলো। যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের, সেজন্য এই নির্দেশ। বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। [সুরা আল-আনফাল আয়াত ১১-১৩]

ঠিক এই ভাবেই আল্লাহ মুমিনদেরকে জীহাদের ময়দানে অবিচল রাখেন আর কাফিরদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেন ভয়। এই আতংক বা ভয় আল্লাহ এক বড় সৈন্য যা মুসলিম সৈন্যদের সাহায্যকারি হিসেবে জীহাদের ময়দানে কাজ করে।

হুনাইনের যুদ্ধের সময় ইয়াজিদ ইবনে আমির একজন কাফির ছিলেন। যখন সে পরে ইসলাম কবুল করে মুসলিম হলেন তখন কিছু সাহাবা (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “ সেই ভয় বা আতংক কেমন প্রকৃতির যা আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেন? আমাদের কাছে সেটা একটু বর্ননা করুন।”

এই প্রশ্ন শুনে তিনি(ইয়াজিদ বিন আমর রাঃ) একটা পাথরের টুকরো হাতে নিলেন এবং তা সজোরে নিক্ষেপ করলেন একটা লোহার পাত্রের ওপর। যার ফলে একটা বিকট শব্দ হল। তারপর তিনি বললেনঃ “ঠিক এই রকম আতংক /ভয় আমরা আমাদের অন্তরে অনুভব করতাম।”

আল্লাহর আরেক যোদ্ধা বা সৈন্য যা দ্বারা আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সাহায্য করেন তা হল বাতাস। হ্যা বাতাস।

আল্লাহ বলেনঃ “যারা ছিল আদ, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে? তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর ? বস্তুতঃ তারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করত।অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনার আযাব আস্বাদন করানোর জন্যে তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু বেশ কতিপয় অশুভ দিনে। আর পরকালের আযাব তো আরও লাঞ্ছনাকর এমতাবস্থায় যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।“ [সুরা ফুসিলাত আয়াত ১৫-১৬]

ঠিক এখনকার কাফেরদের মতই তখন কার আদ জাতীও নিজেদেরকে অধিক শক্তি শালী ভাবত তারা মনে করতো তাদের পরাজিত করার মত কেউ নেই আর আল্লাহ তাদেরকে পরাজিত করলেন বাতাস প্রবাহিত করে।

ঠিক একই ভাবে আল্লাহ খন্দকের যুদ্ধের সময়ও মুসলিমদের কে বাতাস দিয়ে সহায়তা করেন।

আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্চাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। [সুরা আহযাব-আয়াত ৯]

আল্লাহ মুমিনদেরকে তার সৈনিক দিয়ে সাহায্য করেন। কখনো ধুলো, কখনো বাতাস , কখনো ভয় বা আতংক আল্লাহর সৈনিক হিসেবে কাজ করে। মদিনায় হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাঃ) কে রক্ষা করতে আল্লাহর সৈনিক হিসেবে কাজ করেছিল মাকরশার ফিন ফানে জাল। মুসলিম রা যদি আল্লাহর দ্বীনকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে তো আল্লাহর ওয়াদা হচ্ছে আল্লাহ মুমিনদেরকে তাদের পথে দৃঢ়তা দান করবেন এবং কাফেরদের মনে ভয়ের সঞ্চার করবেন এবং কাফিরদেরকে পরাজিত করবেন।

এই সময় পুরো দুনিয়ায় মুসলিমদের সাথে কাফেরদের মনস্তাত্তিক বা ময়দানে যে যুদ্ধ চলছে , তা যদি কেউ একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তো তার কাছে আল্লাহর সাহাজ্যের ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাহ্যিক ভাবে দেখতে গেলে সুপার পাওয়ার কাফেরদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে সামান্য একে ৪৭ এর মত হালকা অস্ত্র নিয়ে মুজাহিদিনরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে অবিরত। আর প্রায় প্রত্যেক জায়গাতেই নাকে খদ দিতে হচ্ছে তথাকথিত সুপার পাওয়ারদের। অনেকেই মিশরের অবস্থা দেখে সংকিত। তাদের মনে রাখা উচিৎ আল্লাহ তার পছন্দের পদ্ধতিতেই ইসলামকে বিজয়ী করবেন। আর সেটার জন্যে হয়ত উম্মাহকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে যাতে উম্মা আবার আল্লাহর পছন্দনীয় পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের জন্যে পদচারনা শুরু করে।

আজকে মুসলিম উম্মাহর উচিৎ আল্লাহর রাহে নিজেদেরকে অবিচল রাখা। কারন বিজয় অতি সন্নিকটে ইন শা আল্লাহ ।

[শেইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদের খুৎবা অবলম্বনে]



find it on facebooknull

বিষয়: বিবিধ

৩৬৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File