মুমিনরা যুদ্ধে পরাজিত হয় কেন? কেনই বা মুমিনদের ওপর বিপর্যয় আসে??

লিখেছেন লিখেছেন আলীনূর ফাহাদ ১৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৩৯:০৫ রাত

সকল প্রশংসা আল্লাহ তালার। আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যাতিত ইবাদতের আর কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ তালার গোলাম এবং প্রেরিত রাসুল। সালাত ও সালাম পেশ করছি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর তার পরিবারের উপর এবং তার সাহাবাগনের উপর।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সত্তুরজন সাহাবি শহীদ হয়েছিলেন এক বিশেষ যুদ্ধে(আল্লাহ তাদের ওপর রাজি খুশি হয়ে যাক ) , সর্ব শ্রেষ্ঠ সাহাবী গনের মধ্যে সত্তর জন সাহাবী যারা জীহাদ করছিলেন। কিন্তু এরকম কেন হল? এই সত্তুর জন সাহাবী জাদের মধ্যে ছিল হামযা (রাঃ) যিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চাচা ছিলেন, মুসাব বিন উমায়ের (রাঃ) যিনি যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনীর ঝান্ডা বহন করছিলেন, আরো অনেকেই ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং এই যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং তার অনেক সাহাবী (রাঃ) ও আহত হয়েছিলেন। প্রশ্ন আসে কেন এই বিপর্যয় তাই না?



বাহ্যিক ভাবে দেখলে এই বিপর্যয়কে বেশ খারাপ মনে হয় সত্যি কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই বিপর্যয়ের মধ্যেই অনেক কল্যান লুকায়িত ছিল। এটা আল্লাহর হুকুম তার নিয়ম; বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানো। একদিন মুমিনরা জয়লাভ করবে একদিন কাফিররা আর শেষমেশ ফলাফল মুসলিমদের পক্ষেই যাবে। শেসে জয়ই মুমিনরাই হবে। জয় পরাজয়ের এই রদবদল করা হয় যাতে আলাদা করা যায় কারা সত্যিকার অর্থেই ভালো এবং আন্তরিক এবং কারা মুমিনদের আরালে মুনাফেক। যুদ্ধের সময় মুনাফেকরা যুদ্ধের সেই ময়দান থেকে পালিয়ে ছিল তাই বলা যায় এটা সত্য মিথ্যার পৃথক কারি।

[q]আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ মুমিনদের কে কখনই এমন ভাবে ছেরে দেবেন না যেভাবে এখন তোমরা আছ। যতক্ষণ পর্যন্ত না ভালো কে খারাপ থেকে পৃথক করছেন...” আল ইমরান আয়াত ১৭৯[/q]



এই যুদ্ধটি ছিল সেই সব জিহাদ সমুহের একটা যা মুনাফিকদের চিহ্নিত করে দিয়েছিল। এটা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছিল যাতে মুসলিমরা মুসলমান নামধারি মুনাফিকদের চিনতে পারে। এবং যাতে মুমিনরা যুদ্ধের সময় আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করতে পারে এবং বিপদে ধৈর্জ ধারন করতে শেখে।

আল্লাহ যদি তাদেরকে সব সময়ই বিজয়ি করত তাহলে তারা হয়ত অহংকারি হয়ে যেত। সেই ভাবে যদি আল্লাহ তার বান্দাদের সবসময় ধনি বানিয়ে রাখতেন তাহলে হয়ত তারা সীমা লংঘন করত। কিন্তু আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ওপরো বিপদ দেন , আল্লাহ তার বান্দাদের ভালো মতই চেনেন। আল্লাহ তার বান্দাদের কে যেমন কস্টের মধ্যে নিমজ্জিত করেন তেমনি কষ্ট থেকে পরিত্রানও দেন। আল্লাহ তার বান্দাদের কখনো ধন সম্পদ দেন, কখনো তা নিয়ে নেন। আবার সুখ সাচ্ছন্দ দেন আবার নিয়ে নেন এই সবকিছুর মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের পরিক্ষা করেন।

জিহাদে আল্লাহ জয় পরাজয়, সংখ্যার সল্পতা অথবা সংখ্যার আধিখ্য দিয়েও পরিক্ষা করেন

আল্লাহ বলেনঃ “...হোনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যধিক্য তোমাদের প্রফুল্ল করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি...” সুরা তাওবা আয়াত ২৫


যখন আল্লাহ তালা তার বান্দাদেরকে বিজয় দিতে চান তখন প্রথমে তাদেরকে বিপর্যয় বা পরাজয়ের মুখমুখি করেন , যাতে তারা নম্র হয়। যাতে তারা নম্র ভাবে আল্লাহর সামনে দারায় এবং সব অহংকার অহমিকা বসর্জন দিয়ে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। এরপর আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত বিজয়দান করেন যেমনটা তারা আল্লাহর কাছে চেয়েছিল।

এছারাও এই জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তালা শহীদের মর্যাদা দান করেন তার নির্বাচিত বান্দাদের। শহীদের মর্যাদা আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া এক সউচ্চ মর্যাদা।

শহীদ দের সম্বন্ধে আল্লাহ বলেনঃ “আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই।” সুরা আল ইমরান আয়াত ১৬৯-১৭০


এই ভাবেই মুমিনদের ওপর বিপর্যয়ও আসে তাদের কল্যানের জন্যে। যেমন বড় বড় কিছু মুসলিম স্কলারদের (ইবনে তাইমিয়া , আস সারকাসি প্রমুখ) জেলের বন্দি জীবন। তাদের বন্দি জীবনের ফলাফল অসাধারন অনেক বই যা তারা উপহার দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহকে । তাদের সময় তাদের এই অবস্থাকে বিপর্যয় মনে হলেও এর ফলাফল হয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্যে দারুন উপকারি।

আর বিপর্যয় যেমনই হক যেভাবেই মুসলিম উম্মার উপর আসুক মনে রাখতে হবে সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই সে করেন,

আল্লাহ বলেনঃ “...আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তারা পরস্পর লড়াই করতো না , কিন্তু আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন...”সুরা বাকারা আয়াত ২৫৩


তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনের একমাত্র উদ্দ্যেশ হোওয়া উচিত আল্লাহকে খুশি করা। আর সাময়িক জয়ে যেমন বেশি উচ্চাভিলাষী হওয়া উচিত নয় আবার পরাজয়েও তেমনি ভেঙ্গে পরা উচিত নয়। কারন মনে রাখতে হবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ বিজয় মুসলিমদের পক্ষেই রেখেছেন।

পুরো পৃথিবীর মুসলিমরা এখন এক বিশেষ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশো এর ব্যতিক্রম নয়। মনে রাখতে হবে , আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেনই এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু দেখার বিষয় এই বিজয়ে আমাদের অংশ গ্রহন কতটুকু। আর সেটার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতের জীবনের সফলতা।

আসুন নিজেদেরকে প্রশ্ন করি এবং জানার চেষ্টা করি ইসলাম প্রতিষ্ঠার এই প্রক্রিয়ায় আমাদের অবস্থানটা আসলে কোথায়??

[শেইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদের খুৎবা অবলম্বনে]

find it on facebook

বিষয়: বিবিধ

১৬৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File