১৫ই আগস্ট : জাতীয় শোক দিবস নাকি ইসলামী শিক্ষা দিবস?
লিখেছেন লিখেছেন মাহমুদুন নবী ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ১১:০২:৫০ সকাল
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ঘটেছিল ইতিহাসের এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন কতক বিদ্রোহী সেনা সদস্যের হাতে।
তাদেরকে বিদ্রোহী অবশ্য বললে ভুল হবে। কারণ তাঁরা বিদ্রোহ করেছিল এক স্বৈরশাসকের বিরূদ্ধে। যিনি স্বাধীনতা বা ক্ষমতা চাননি, কেবল চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ যেন সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু তিনি এই সুখটুকু দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর তাই জনগনও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। আর তখন তিনি ক্রোধের বশে এমন কিছুই কাজ করেন যা সাধারন মানুষ এবং সেনাবাহিনী উভয়কেই তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছিল। আর তার মাশুল দিতে তাকে সপরিবারে নিহত হয়ে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য শোকের; কিন্তু তার চেয়ে বেশি শিক্ষার।
১৯৬৯ সালের ১৫ ই আগস্ট ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের জন্য এক অপূরনীয় ক্ষতির দিন। এদিন ঘাতকের নির্মম আঘাতে জর্জরিত হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ তিনি আমাদের সবার প্রিয় - আব্দুল মালেক ভাই।
আব্দুল মালেক ভাইয়ের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনা সব কিছুতেই ছিল ইসলামী আদর্শের পরিস্ফুটন। তৎকালীন বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা সেদিন বুঝতে পেরেছিল- যদি আব্দুল মালেক ভাইয়ের মত এমন একজন মানুষ বেঁচে থাকে, তবে তাদের যে ষড়যন্ত্র- এ দেশকে ধর্মনিরপেক্ষরূপে গড়ে তোলা, তা কোনদিনই বাস্তবায়িত হবেনা। আর তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্র-শিক্ষকের প্রানের প্রিয় আব্দুল মালেককে সেদিন তাঁরা বাচতে দেয়নি।
১৯৬৯ সালে শহীদ আব্দুল মালেকসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের ততকালীন শিক্ষা মন্ত্রী এয়ার মর্শাল নুর খানের সাথে সাক্ষাত করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে খসড়া যে শিক্ষানীতি বের হয় তাতে এই দাবির বেশ কিছু প্রতিফলিত হয়। তখন বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যাবস্থার দাবীদারদের টনক নড়ে ওঠে। এ অবস্থায় জনমত জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এরই অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২ রা আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় এক সেমিনারের। সেখানে বাম এবং বিরোধীদের বক্তব্যের মাঝে আব্দুল মালেক ভাইকে ৫ মিনিটের বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হয়। ইসলামী শিক্ষা ব্যাবস্থার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি অসাধারন এক বক্তব্য দেন। অসাধারণ বাগ্মী এই বক্তার ৫ মিনিটের বক্তব্যে বিরোধীদের চিন্তারাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তির বিষয়ে তিনি সে দিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন-
“Pakistan must aim at ideological unity, not at ideological vacuum- it must impart a unique and integrated system of education which can impart a common set of cultural values based on the precepts of Islam. We need Common set of cultural values, not one set of cultural values.”
পূর্বের আলোচনা সভায় বাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ডাকসু-র নামে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্দেশ্যে ১২ ই আগস্ট আবার সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে মালেক ভাইকে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। উপরন্তু এক ছাত্র ইসলামী শিক্ষা ব্যাবস্থাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয়। আর তাতে উপস্থিত ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ওঠে। সাথে সাথে বাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ক্যাডাররা হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শহীদ আব্দুল মালেক তার সাথীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এসময় সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক ২/৩ জন সাথীকে সাথে নিয়ে টিএসসির পাশ দিয়ে তার হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের উপর মাথা রেখে উপরে ইট ও লোহার রড- হকিস্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। আব্দুল মালেক ভাইকে আহত এবং সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার তিনদিন পর ১৫ আগস্ট তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। আর তখন থেকেই ১৫ ই আগস্ট পালিত হয়ে আসছে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসেবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন