অসমাপ্ত ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ সাহিল ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৫৪:২১ রাত
অভি ও সামিরা ছিল দুপথের পথিক ! কেউ কাউকে চিনতো না। তাদের প্রথম দেখা হয় একটি বিবাহ পা তে। সেদিন কিন্তু কথা হয়নি দুজনের মধ্যে। দুজন দুজনকে ভাল করে দেখেনি । পথের মাঝে হঠাৎ দেখার মত। কিšতু সে দেখাটা যে চার বছর পর ভালোলাগা ও ভালোলাগায় পরিণত হবে জানতো না দুজন । আজ দুজন দুজনকে ছাড়া কিছু বুঝে না । অভি একটু অগোছালো প্রকৃতির ছেলে। সামিরা এসে তার জীবনটাকে সাজাতে শুরু করল। শুরু হল দু-অবুঝ হৃদয়ের যাত্রা।
প্রতিটি রাত ভর তারা দু-জন সপ্ন বুনে।
অভি ও সামিরা তার উভয় জীবনের চেয়ে বেশি একে অপরকে ভালোবাসে। সামিরা সুযোগ পেলে ছুটে যেতে চাইতো। কিন্তু সে ভয় পেত। যদি তার পরিবারের কেউ জেনে যায়। তাই তার ভালবাসাকে বুকে চেপে রাখত। শত কষ্ঠ হলেও দুরে সরে থাকত । অভি তাকে পাগলের মত ভালবাসে। এখন যে নিঃশ্বাস নেয় তা শুধূু সামিরার জন্য । সামিরা আছে বলে সে আরো বেশি বছর বাঁচতে চায় । এই পৃথিবীতে তারা দুজন দুজনার । তারা দুজনে জানে দুজনের স্বপ্ন এক। কিন্তু এই যে পথে তারা হাঁঠছে তারা দুজনে জানে না । এই পথের শেষ কোথায় ? ভালবাসার এক প্রান্তে দাড়িয়ে অভি সামিরাকে আরো কাছে পেতে ছাইলো। ঠিক তখনই জীবনের তাগিদে অভিকে দেশের বাহিরে যেতে হলো। স্বপ্নের দেশ ফ্রান্সে আসার উদ্দেশ্যে যখন রওনা হলো ।
সে তখনও জানেনা তার জীবনে কি হতে যাচ্ছে ? ফ্রান্সের এয়ারপোট থেকে বেরিয়ে যখন দেখতে পারল সব কিছু নতুন । ফ্রান্সের চারিদিক অচেনা অজানা এক পৃথিবী। যখন সে বুঝতে পারল থাকে যে লোকটি এয়ারপোট থেকে রিসিভ করার কথা তিনি আসবেন না। টিক তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শাস নিয়ে নিজেকে অসহায় ভাবলো । সে চারিদিকে ঘুর অন্ধকার দেখলো । সে বাহিরের পরিবেশের দিকে অসহায়ের মত অনেক ক্ষণ তাকিয়ে ছিল। সে মুহুর্তে ফরাসি মহিলা তাকে জিজ্ঞাসা করলো-তুমি কি ঃধীর খোজছ?
অভি অসহায় চেহারা নিয়ে বলল গন্তব্যহীন মানুষের ঃধীর দিয়ে কি হবে?
আমি নিজেও জানি না কোথায় যাব?
তখন অবাক চোখে ফরাসি মহিলা অভির দিকে তাকিয়ে থাকল এবং জানতে চাইল অভির সর্ম্পকে।
অভি তার দূর্ঘটার কথা খোলে বললো । তখন ফরাসি মহিলার চোখ দিয়ে পানি চলে আসল।
তবে সব কিছু জানার পর ফরাসী মহিলা তার পরিচয় দিল । সে বললো আমি জওয়ানা । আমার বাবার বাড়ি আরব আমিরাতে আর মা ফরাসী। আমাদের ফ্রান্সে ব্যবসা বানিজ্য এবং প্যারিস শহরে আমরা বসবাস করি। তুমি চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি। আমার সাধ্য মত তোমার উন্নতির জন্য চেষ্ঠা করব। তখন অভি কিছু বোঝে না শোনে কোন উপায় না দেখে জওয়ানার সাথে চলল। সে তাদের একটি রেষ্টুরেন্ট এর উপরে ছোট একটি রুমে অভিকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য থাকার জায়গা দিল । তবে এখানে তুমি থাকতে পার কিন্তু আমি ত্মোাকে কাজের ক্ষেত্রে কোন সাহায্য করতে পারব না। তুমি নিজে কাজ খুজে নিতে হবে । যদি কোন কাজের সন্ধান পাউ তাহলে তুমি চলে যেও কিন্তু কাজ না পাওয়া পর্যন্ত থাকতে পার। সে এই কথা বলে একটা হাসি দিয়ে অভিকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বলে রুম থেকে চলে গেল ।
অভি তার বাস্তব জীবনের সাথে লড়তে গিয়ে সামিরার ও পরিবারের সাথে ব্যবধান হল । কিন্তু অভি আগের চেয়ে একটু বেশি সামিরাকে ভালবাসতে শুরু করে । অন্ধকার এই অসহায় জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে তাকে স্মরন করে । প্যারিসের ঠান্ডা হাওয়ার মাঝে এক বুক কস্ট যন্ত্রনা নিয়ে তার কথা মনে করে মাঝে মাঝে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ধাকে । ইচ্ছা থাকা সত্তেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না । কারন একটাই অভি ফরাসি ভাষা সম্পর্কে কোন ধারনা নেই । যেখানে ভাষার সমস্যা সেখানে কাজ খোজে নেওয়াটা খুব কষ্ঠকর । তার পরও অভি বসে নেই । সকাল থেকে রাত অবদি খেয়ে না খেয়ে কাজের তালাশ করে । কিন্তু একটি কাজ খোজে পাওয়ার কোন আশা নেই । এযেন সোনার হরিণ । এদিকে সামিরা তার জীবন চালিয়ে নিচ্ছে নিজের ইচ্ছে মত করে । সে অভিকে ভূল বুঝতে শুরু করে । সামিরা মনে করে অভি এখন অনেক টাকা-পয়সা,বাড়ি-গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত । তাই সে তার সাথে যোগাযোগ করছে না । সামিরা এখন ফেইস বুকে প্রায় সময় কাটায় । এর সাথে সাথে ফেইস বুকে তার অনেক বন্ধু জুটে । ফেইস বুকের বন্ধুরা তার অনেক খোজ খবর রাখে । তার মাঝে ফাহাদ একটু ব্যতিক্রম ছিল । সে ধীরে ধীরে তার মনের ঘরে প্রবেশ করে । তার সাথে সামিরা অকেটা ভাব বিনিময় হয় । সে অভির শূন্য স্থানটি দখল করে ফেলে । সে সামিরার জন্ম দিন উপলক্ষ্যে অনেক দামি উপহার পাঠিয়ে দেয় তার বাসায় । সামিরা তার নানা ভালবাসার কৈশলের কাছ হার মানে । এভাবে ফাহাদ বিভিন্ন উৎসবে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নানা উপহার পাঠায় । এক সময়ের কুলে দাড়িয়ে তারা উভয় জীবন রচনার সপ্নের সাগরের জাল বুনতে থাকে । সামিরা তাকে অনেক সহজে আপন করে নেয় এবং সে এখন অনেক খুশি । সে খুব সহজে অভির স্মৃতি গুলো ভূলে তার সাথে দিন কাঠাতে থাকে ।
ঠিক দুই বছর পর.....
আজ অভি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকটা দিন । অল্প কিছুক্ষণ পর ফ্রান্সের আদালত তার রায় ঘোষনা করবে । তার ভিতরে অজানা আশংকায় কম্পন হচ্ছে । তার পর আদালত তাকে ফ্রান্সের সকল সুযোগ-সুবিধাসহ বৈধতা প্রদান করে । ঠিক তখন অভি অনেক আবেগে আপ্লুত হয়ে তার পরিবারের কাছে ফোন দেয় । ফোনের রিং যখন বাজছে তখন তার মা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই তার কন্ঠ শুনে কেঁদে ফেলেন । সে প্রায় ঘন্টা খানেক পরিবার সদস্যদের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয় । আর সেই সময় সামিরার কথা তার মনের সংবিধানে ভীশন নাড়া দেয় । সে দ্বিতীয় ফোনটি সামিরার কাছে দেয় । মোবাইলে প্রথম রিং বাজছে তবে রিসিভ হল না । দ্বিতীয় রিং হওয়ার সাথে সাথে সে রিসিভ করলো-আর সে কোকিল কন্ঠে বললো আমি সামিরা বলছি । আপনি কাকে চান ? অভি তার কন্ঠ শুনে কয়েক মিনিট নিশ্চুপ হয়ে যায় । তার মনের অজান্তে চোখের কোনে জ্বল গড়িয়ে গেল । সামিরা ভিরক্ত হয়ে জুড়ে একটি ধমক দিয়ে বললো-কে কথা বলছেন না কেন ?
অভি নিচু স্বরে বললো-আমি অভি বলছি ।
তার কন্ঠ শুনে সামিরার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে । সে সাথে সাথে ফোনের লাইন কেটে দিয়ে সিমটি চিরতরে বন্ধ করে দেয় । অভি বার বার ফোনে চেস্টা করে সংযোগ না পেয়ে নিরাশায় রুমে চলে যায় । এভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে । সে তার কাছ থেকে সামিরার ব্যাপারে সব জেনে যায় । তবুও সে সামিরার সাথে একটি বার কথা বলার জন্য হাজারো চেষ্ঠা করে । সে জানতে চেয়ে ছিল আজও সে তাকে ভালবাসে কি না । তারপর সব দোয়ার বন্ধ হলে অভি মানষিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে । সে তাকে গিরে অনেক স্বপ্ন দেখে ছিল । তবে আজ সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়ে চুর-মার হয়ে গেল । এখন সে প্রতিটি রাত অন্ধকার জগতের সাথে খেলায় মেতে উঠে। আগের মত চাকুরীর নীল ফিতায় সময় ব্যয় করে না । প্রায় এক বছর পর একদিন গভীর রাতে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে সেই জোয়ানার সাথে দেখা হয় । সে তার এই অবস্থা দেখে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় । সে কয়েক মাস ডাক্তারের চিকিৎসায় নেশার জগত থেকে ফিরে আসে । তবে সে সম্পূর্ন রুপে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফ্রান্সের একটি মানষিক হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝে বন্ধি হয়ে গেল। সে আজও অচেতন অবস্থায় সামিরা-সামিরা বলে চিৎকার দিয়ে তাকে খোজে । সে জীবনের সব কিছু অর্জন করার পরও সামিরার ভালবাসার কাছে পরাজিত এক...............?
পাঠকঃ এই লেখাটি বাস্তব জীবন থেকে নেয়া । তবে কোন প্রশ্ন করবেন না ।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট-ফ্রান্স ।
বিষয়: সাহিত্য
১৫৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন