রাজনৈতিক বিবেক !
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ সাহিল ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৫১:৩৩ বিকাল
সৈয়দ সাহিল : রাজার নীতি নাকি নীতির রাজা এই নিয়ে খোদ রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মাঝে যথেষ্ঠ মত পার্থক্য বিদ্যমান । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোন উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয় । তবে যদি সেটি হয় তাহলে দেশের জাতীয় নেতাদের নৈতিকতায় নিমজ্জিত হতে হবে কি? কেন এই দেশটা আজও তার গন্তব্যে পৌছতে পারেনি ? তবে আমরা জানি সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজও তার বাস্তব কোন প্রতিফলন সমাজে দেখা যায় না। পাকিস্তানে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আমেরিকার সাংবাদিক জন পার্ল সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয় এবং তার দেশ ও সরকার তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি স্মৃতি সৌদ নির্মাণ করে । তবে দেশের রাজনৈতিক বিবেক তা কি করতে পেরেছে । মুক্তিযুদ্ধে নিহত সাংবাদিক সেলিনা পারভীন হত্যার বিচার কি হয়েছে ? কিন্তু আমার দেশের প্রকৃতি যতটা সরল তার চেয়ে বেশি মমতাময়ী ঐ পচাশি ভাগ মানুষ । যারা পল্লী গাঁয়ে দুমুঠো ভাতের জন্য জীবন যুদ্ধে লিপ্ত । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ অবদি তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি । বরং পরিবর্তন হয়েছে এই রাজনীতিবীদদের । ঐ গ্রামের সাধারন মানুষ গুলো সাংবাদিকদের মন থেকে মূল্যায়ন করে ও ভালবাসে । আর সাংবাদিকরা এই মানুষ গুলোর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করেন । রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, দূর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সেখানে জাতীর বিবেকের কলমের মাধ্যমে জন সম্মুখে উঠে আসে। আর এই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক গৌতম দাস লিখতে গেলে বিনিময়ে সন্ত্রাসীরা তাকে ফরিদপুর সমকাল অফিসে নির্মম ভাবে হত্যা করে ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর। অনেক লেখালেখি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় । কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কারণে কোন কিছুই সাফল্যের রাজ্যে পৌছতে পারেনা। অবশেষে ২০১৩ সালে দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা পেলাম একজন সাংবাদিক গৌতম হত্যার বিচার। ধন্যবাদ দুই নেত্রীর অধীনে কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশ প্রশাসনকে। স্বাধীন বাংলাদেশে যদি কিছু দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণে দুই নেত্রীকে জাতীর বিবেকের কাঠ গড়ায় প্রশ্ন করা হয় আপনারা কি সত্যিই বাংলাদেশটাকে ও বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের চাকা বদলাতে চান? যদি আপনাদের হৃদয় দিয়ে দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করেন তাহলে কিভাবে প্রতিদিনই সারাদেশে আপনাদের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অধীনে কোন না কোন ভাবে সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে। কেন আজ সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে নিহত সকল সাংবাদিকদের সুষ্ঠ বিচার হচ্ছে না? সাংবাদিকতা মানে সত্য নিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করা। হোক সে সরকারী বা বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীর দূর্নীতি বা সমাজের কোন ভাল উন্নয়নমূলক কাজ। তবে আজ দুঃখের বিষয় দূর্নীতির কাছে সমাজের ভাল কাজ গুলো পরাজিত। সাংবাদিকের কাজ হলো সংবাদ সংগ্রহ করা। এ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কত শত শত সাংবাদিক প্রাণ দিতে হয়েছে। কত মহিলা সাংবাদিক লাঞ্চিত হতে হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কলামিস্ট ও আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রয়ারি গানের রচিয়তা আব্দুল গফফার চৌধুরী জীবনের বেচে থাকার তাগিদে লন্ডনে অবস্থান নিয়েছেন । তিনি ওয়ান ইলিভেন সরকারের আমলে দেশে গিয়ে বলেছিলেন অনেক দিন পর প্রাণ খোলে দেশের মাঠিতে হাটতে পারলাম । আজও কি রাজনৈতিক সরকার তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে ।
আমরা কবে পাব স্বাধীন মিডিয়া জগত ? সত্য কথা লেখার জন্য আজ আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক জেল হাজতে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। আর আমার দেশ পত্রিকার অফিসে জুলছে তালা। সরকার বলছে আমরা মিডিয়াকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়েছি। যদি স্বাধীনতা দিয়ে থাকে সরকার, তবে কেন ৫ মে কালো রাতে মতিঝিলে গণত্যার সময় দিগন্ত টিভি বন্ধ করে দিয়ে সকল সাংবাদিকদের সরিয়ে নিয়ে গেলেন এবং লাইট বন্ধ করে শুরু করলেন ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলা।
একজন সাংবাদিকের বিচার করে কি পরবর্তী ক্ষমতায় আসার চাবিকাটি বানালেন। আর শত শত সাংবাদিকের পরিবার তাদের স্বজন হারিয়ে যে পথে বসে তাদের কাছে কোন মুখ নিয়ে যাবেন আপনারা- সরকারী ও বিরোধী দলীয় ক্ষমতালোভী হিংস্র মানুষেরা।
আজ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকি। আর এ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও আমাদের জাতীর বিবেকরা কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিনিময়ে আমরা হারিয়েছি একটি করে তরতাজা জাতীর বিবেক। হয়ত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানের করুন মৃত্যু দেখিনি তবে, দেখেছি গত এক যুগে অনেক তরতাজা সাংবাদিকের গলিত লাশ। তার কিছুটা তালিকা পাবেন ১৮ই নভেম্বর, ২০০৫ইং সমকাল পত্রিকায় । ২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী সাগর রুনির কথা সবাই জানলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও জানেন না। ২০০২ সালের ৩রা আগষ্ট সৈয়দ ফারুক আহমদ নামের আরেক সাংবাদিকের গলিত লাশ পাওয়া যায়। তার দুই মাস পূর্বে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় থেকে তখন রঙ্গিন চশমা পরায় ব্যাপারটা নজরে আসেনি।
মাননীয় দুই নেত্রীকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যে সকল সাংবাদিকদের নির্মম ভাবে হত্যা করার পরও তাদের পক্ষে কথা বললে তাদেরকেও হত্যার পরিকল্পনা করছেন তা কিন্তু বেশি দিন চলবে না। মনে রাখবেন জাতীর বিবেক একদিন একত্রিত হয়ে প্রতিবাদী হবে । দেশের জনগন জাগ্রত হবে । সে দিন আপনারা পালাবার পথ খুজে পাবেন না । আর সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘ । সে যেভাবে পিতা-মাতাহীন বিষন্ন জীবন কাটাচ্ছে সেদিনের সেই কালো রাতকে কিভাবে ভূলে যাবে ? যার চোখের সামনে তার মা- বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মা-বাবা ভাইদের হারিয়েছেন, আরেকজন স্বামী। তারপরও কি একটুও আপনাদের মনে অনুভব হয়না সেই যন্ত্রনার ব্যথাটুকু……………..?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ঠ-ফ্রান্স ।
বিষয়: রাজনীতি
১৮৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন