একটি রাজনৈতিক খন্ড চিত্র

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৩৯:০৯ রাত

পাটিখাল ঘাটা ইউনিয়ন। বরিশালের ঝালকাঠী জেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। অসংখ্য ছোট বড় খাল বিলে ঘেরা ছোট একটি ইউনিয়ন। সরকারের পর সরকার বদল হয়েছে কিন্তু উন্নয়নের তেমন কোন ছোয়া লাগেনি এখানে। ইউনিয়নের সব রাস্তাঘাট আজও কাঁচা ও আধা পাকা রয়ে গেছে। একটি মাত্র পাকা সড়কের কাজ শেষ হতে না হতেই তা প্রায় অচলাবস্থা। ডিজিটাল যুগের এ পর্যায় এসেও বৈদ্যুতিক আলোর মুখ দেখতে পারেনি এ এলাকার মানুষ। এলাকার উন্নয়ন না ঘটলেও চুরি ডাকাতি, খুন ধর্ষন, আধিপত্য বিস্তার, হিংস্র রাজনীতিতে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে থানা জেলা পর্যায় বেশ পরিচিতি রয়েছে এই ছোট ইউনিয়নটির। ডাকাত সর্দার কাওসার ও সেলিম ভ্রাতৃদ্বয়ের কাছে এলাকার মানুষ জিম্মি। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের পর তাদের দৌরাত্ম অসহনীয় পর্যায় পৌছে যায়। শহরের ষ্টাইলে চলে চাঁদাবাজি। গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে তাঁদের মাসিক চাঁদা দিতে হয়। চুরি ডাকাতির পাশাপাশি ঘটতে থাকে একের পর এক খুনের ঘটনা। একে একে তাদের ও তাদের বাহিনীর হাতে খুন হয় পাটিখাল ঘাটা গ্রামের লোকমান মুন্সীর স্ত্রী সালেহা বেগম (১৯৯৭ সালে), একই গ্রামের আব্দুল মজিদ (১৯৯৭ সালে), মরিচ বুনিয়া গ্রামের হালিম শরীফের স্ত্রী, ছোনাউটা গ্রামের মেনহাজ উদ্দিন ( ১৯৯৮ সালে) আতঙ্ক বিস্তার করতে সংখ্যালগু সম্প্রদায়ের এক পথচারীকে হত্যার পরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয় (১৯৯৮ সালে), পাটিখাল ঘাটা গ্রামের সোনা মিয়াকে ২৭-০৬-১৯৯৮ সালে গলা কেটে হত্যা করা হয় তাঁর নিজ ঘরে। এ হত্যা কান্ডটি ব্যাপক আলোচিত হয়। তৎকালীন এ অঞ্চলের এমপি ও যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর হস্তক্ষেপে, মানুষের নিরাপত্তা দিতে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট পুলিশের রিজার্ব ফোর্সের সমন্বয় একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এ গ্রামে। তবুও গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয় কাওসার বাহিনীকে। দীর্ঘ দিন পরে ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়ার পরে আবার তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। জাতীয় পার্টির যুব সংহতি থেকে বিতাড়িত হয়ে যোগ দেয় আওয়ামীলীগে। আওয়ামীলীগের নেতা শিশির চন্দ্র তাদেরকে দলে টেনে তাদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠে প্রভাব শালী আওয়ামী নেতা। ২০০১ এর নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ঝিমিয়ে থাকা আরেক শক্তি বিএনপি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিএনপি’র ইউনিয়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক সাঈদুর রহমান দলীয় ক্ষমতা, জামায়াত শিবিরের হাফেজ মাসুম বিল্লাহ ও মাকসুদ বাহিনীর সহযেগীতায় আর প্রশাসনের সহায়তায় শিশির বাহিনীকে হটিয়ে এলাকার সন্ত্রাসী রাজত্বের মুকুট পড়ে নেয়। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পূর্বের দ্বারা চলতে থাকে সাঈদুর রহমানের নেতৃত্বে। তার তান্ডবে মানুষের জান মাল বিপন্ন হয়ে ওঠে। তৎকালীন প্রতি মন্ত্রী শাহজাহান ওমরের নির্দেশে শক্ত প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি’র নেতা কর্মীদের নিঃশেষ করে ফেলতে সাঈদ, মাসুম বিল্লাহরা ভয়ংকর কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধা ও শান্তিকামী সাহসী চেয়ারম্যান শাহ আলম চেষ্টা করেন এলাকার সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করার। এ কারনেই ২৩ জানুয়ারী ২০০৪ সালে রাতের বেলা বাড়ী ফেরার পথে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তৈরি হওয়া ইস্যুতে চাঙ্গা হয়ে ওঠে বিএনপি’র রাজনীতি। প্রভাব ও পরবর্তী চেয়ারম্যান বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী কামরুন নাহার চায়না বেগমকে নিজেদের আওতায় নেয়। এরপর থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে সাঈদুর রহমান শুরু করে গ্রেফতার বানিজ্য। এই মামলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হয়। এভাবে বিএনপি সাঈদুর রহমান সমাজের প্রতিটি সেক্টরকে তার হিংস্র হস্তক্ষেপ দ্বারা অশান্ত করে রাখে। বিএনপি’র মেয়াদ ফুরায়। আওয়ামীলীগ নেতা শিশির চন্দ্র কাওসার বাহিনীসহ সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন সাঈদ বাহিনী, জামায়াতের হাফেজ মাসুম বাহিনী ও মাহবুব, মাকসুদের শিবির বাহিনীকে উচ্ছেদ করে এলাকা দখল করতে। ফখরুদ্দিনের সরকার আমলেও ২টি খুন হয় এ এলাকায়। পশারীবুনিয়া গ্রামের সজিব নামের এক কিশোরের লাশ মেলে নদীতে (জুলাই ২০০৭), একই গ্রামের বিএনপি নেতা ধলু খাঁন খুন হন ২০০৮ সালে।

ক্ষমতার পালা বদলে আবার আওয়ামী নেতা শিশির চন্দ্র কাওসার বাহিনীকে নিয়ে পুনরায় শুরু করেন হারিয়ে যাওয়া রাজত্ব ফিরে পেয়ে। দলীয় প্রভাব ও সন্ত্রাসী শক্তির বলে প্রথম বারের মত ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৯ মার্চ ২০১১ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপরই কাওসার বাহিনীর প্রধান কাওসার প্রকাশ্যে এলাকায় চলাফেরা শুরু করেন, নেতৃত্ব দেন সকল অপকর্মে। গত পাঁচ বছরের আওয়ামী দূঃশাসন থেকে বাঁচতে গ্রামের মানুষগুলো শুধু সময় ফুরানোর অপেক্ষায়ই ছিলেন। কিন্তু কার জন্য অপেক্ষা ? মুক্তি কোথায় ? প্রধান দুই দলের দীর্ঘ দিনের নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের ফলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র জেপি প্রায় বিলুপ্তের পথে। নেতা কর্মীরা আবারো অভিবাবক হারিয়ে নিরাস। ফলে ইতিমধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামীলীগের শিশির বাহিনী ও তার ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী কাওসার বাহিনী যেমন সক্রিয়, তেমনি ক্ষমতা পুনর্দখল করতে মাঠে আছে বিএনপি’র সাঈদ বাহিনী, আছে জামায়াতের হাফেজ মাসুম বাহিনী, আছে মাকসুদের শিবির বাহিনী। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে চলছে দুই দলের শক্তি প্রয়োগের মহড়া। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরে জামায়াত শিবিরের তান্ডবে এলাকার মানুষের জীবন যাত্রা আরো বেশি হুমকির মুখে পড়ে।

ত্রুটিমুক্ত আর ত্রুটিযুক্ত, যে নির্বাচনই বাংলাদেশে হোক না কেন, পাটিখাল ঘাটা ইউনিয়ন বাসীর ভাগ্যে আবারো হানা দেবে এই সকল বাহিনীর কোন একটি। পাটিখাল ঘাটার মত পুরো দেশের প্রত্যেকটি গ্রাম,ইউনিয়ন, থানা, জেলার রয়েছে এই সব ভয়ংকর চিত্র ও ইতিহাস। কবে মিলবে আসল মুক্তি ?

বিষয়: রাজনীতি

১১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File