ডিজিটাল পুষ্টিতে পুলিশের স্বাস্থ্য উন্নয়ন
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:২৮:৫২ দুপুর
বাংলাদেশের বাহিনী গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ন একটি বাহিনীর নাম পুলিশ বাহিনী। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দেশের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পুলিশের কর্তব্য একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাস্তবে তা বিরল।
“পুলিশ জনগনের বন্ধু” এই কথাটি পুস্তক বা স্লোগানে লিপিবদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় তার নজির বা উদাহরন দুষ্প্রাপ্য। পুলিশ মানেই আইনি ঝামেলা, পুলিশ মানেই ঘুষের লেন দেন, পুলিশ মানেই বেয়াদবী, হুমকি ধামকি, পুলিশ সম্পর্কে জনমনে এমন নেগেটিভ ধারনা থাকলেও প্রাক-ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী তুলনা মুলক কম হিংস্র একটি নিরীহ বাহিনী হিসেবেই পরিচিত ছিল। যেমন ষাড় মাঝে মধ্যে তেড়ে আসলেও তারা হিংস্র প্রানীর তালিকায় পড়েনা। গ্রাম গঞ্জে গাঁছের দু-চারটি ডাব নারিকেল, দুই/এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট অথবা ৫/১০ লিটার ডিজেলের সামর্থ্য আর তোষামোদের কিছু কৌশল জানা থাকলেই বশ করা যেত এই নিরীহ পুলিশ বাহিনীকে। মামলা সংক্রান্ত বিষয় ঘুষের লেনদেন সর্বকালেই ছিল। আটক কৃত অবৈধ চালান ফিরিয়ে নিতে, গ্রেফতার কৃত আসামীকে ছাড়িয়ে নিতে হোক সে হত্যা মামলার আসামী, কাউকে উদ্দেশ্য মুলক সায়েস্তা করার লক্ষ্যে গ্রেফতার করাতে, কাউকে উত্তম মাধ্যম দেওয়াতে ঘুষের লেনদেন বরাবরই ছিল।
ঘারের পিছনে উর্ধমূখী করে অনন্নোত অস্রটি (রাইফেল) ঝুলিয়ে রাখা থাকলেও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাতে থাকা বেতের লাঠিটিই ব্যবহার করতেন। এমনও পুলিশ সদস্য খুঁজে পাওয়া যেত, যার চাকুরীর জীবনে একটি গুলিও কোন মানুষকে করেনি।
হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ, আন্দোলন, মিছিল প্রভৃতিকে প্রতিহত করতে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে, বাঁশি ফুঁকে, দাওয়া করে, লাঠির ভয় দেখিয়ে, সর্বশেষ ও সর্বোচ্চ এ্যাকশন হিসেবে লাঠি চার্জ করে, জল কামান ব্যবহার করে এবং কখনও কখনও (সেটা খুবই কম সময়) ফাঁকা গুলি ছুড়ে মানুষের মাঝে ভীতি সঞ্চার করে ছত্রভঙ্গ করে দিত।
কিন্তু হঠাৎ করেই এই আওয়ামী সরকারের তথাকথিত ডিজিটাল ছোয়ায়, ডিজিটাল পুষ্টিতে পুলিশের চেহারা পুরোই পাল্টে যায়। অস্রে, অস্রের অপব্যবহারে, গোলাগুলিতে,দূঃসাহসে, মনোবলে, দূর্নীতিতে, হিংস্রতায়, মানুষ হত্যায়, গুম করায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়।
গ্রাম গঞ্জে, শহর বন্দরে সর্বত্র পুলিশের নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র বিরাজমান। হরতাল অবরোধে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নামে পুলিশ মেতে উঠেছে রক্তের খেলায়।
নিরপরাধ পথচারীকে, শান্ত শিষ্ট গ্রামবাসীকে গন গ্রেফতার অতঃপর টাকার বিনিময় ছেড়ে দেয়া, খুব উপভোগ করছেন এ গ্রেফতার বানিজ্যকে। চোরা চালানে সহযোগীতা, মাদকসহ সকল প্রকার অবৈধ ব্যবসায় অংশীদারিত্ব, নির্যাতনে, প্রকাশ্য দলীয়করনে, সাংবাদিক নির্যাতনে অর্থাৎ আইন লঙ্গনে ও সর্ব প্রকার অপরাধে পুলিশ প্রশাসন সীমাহীন বেপরোয়া।
ডিজিটাল পুষ্টিতে অপরাধের এমন কোন স্তর নেই যেখানে পুলিশের অবৈধ উন্নয়ন ঘটেনি। পুর্বে রাব(RAB) ক্রসফায়ার দিত। এখন এই বিচার বহির্ভূত নির্যাতন, হত্যা, গুম, তথাকথিত ক্রসফায়ারে মানুষ মারতে পুলিশ ও এক ধাপ এগিয়ে।
ডিজিটাল পুষ্টিতে (নির্দেশে) পুলিশ এখন কারনে অকারনে নির্বিচারে গুলি ছুড়ছেন যে কোন মানবধিকার কিংবা গনতান্ত্রিক বিষয়ক অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত নিরস্র জনগনের উপর। জন মিছিলে, সমাবেশে নির্দ্বিধায় ছুড়ে মারছেন ককটেল, গ্রেনেড। তাড়া খেয়ে পলায়নরত মানুষের আত্মসমার্পনেও মিলছেনা শেষ রক্ষা। পায়ের বুটের নিছে ফেলে গুলি করে দিচ্ছে ঠান্ডা মাথায়। কার আগে কে গুলি করবে এ প্রতিযোগীতায় মেতে ওঠা ডিজিটাল পুলিশ বাহিনীর কাছে বাংলাদেশের আইন ও জনগন এখন বড়ই অসহায়। আওয়ামীলীগ সরকারের বর্তমান ডিজিটাল সময় পুলিশের এই সকল প্রকার অপরাধ, আইন লঙ্গন ও হিংস্রতা সর্বোচ্চ গুনে বেড়ে গেলেও পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করতে কোন সরকারই পিছিয়ে ছিলেন না।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন