জোট গঠনে দলের নেতা কর্মীদের মতাদর্শের হানি ঘটে, দলের ও বটে।
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৫৬:০৩ রাত
প্রত্যেকটি মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর চিন্তা চেতনা ও মতের ভিত্তিতে একটি আদর্শে বিশ্বাসী। ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র আদর্শের ভিত্তিতে নিজেকে পরিচালিত করে থাকেন। নিজের চিন্তা চেতনা, মত ও আদর্শের সাথে যখন অপরের চিন্তা চেতনা, মত ও আদর্শের সাথে মিলে যায় বা খুব কাছা কাছি অবস্থান করে, তখনই তাঁর সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার এই মতাদর্শের অমিল দেখা দিলেই সম্পর্কের হানি ঘটে।
আজ ঐক্য বা জোট গঠনে রাজনৈতিক আদর্শ ও তা হানি ঘটার ব্যাপারে আমার কিছু উপলব্দি উপস্থাপন করব। প্রথমেই দেখা যাক সাধারনত একজন ব্যক্তি প্রাথমিক পর্যায় কিভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক দলের সমার্থক বা কর্মী হয়ে থাকেন।
প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন নিজস্ব একটি নীতিমালা বা আদর্শ নির্দিষ্ট ভাবে সংরক্ষিত থাকে। যা দলের প্রচার বা প্রসারের কাজে ব্যবহৃত হয়। এবং এই আদর্শের ভিত্তিতেই দলগুলো বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতি গ্রহন করে থাকে। আর ব্যক্তি যখন তাঁর মতাদর্শের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের নীতিমালা বা আদর্শের সাথে মিল খুজে পায় এবং সেই রাজনৈতিক দলটির কাছে নিজের মতাদর্শের স্বীকৃতি পায়, তখনই সে ঐ রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়, সমাজ জাতি তথা দেশের কল্যানে কাজ করার লক্ষ্যে। দল ত্যাগও ঘটে এই মতাদর্শের অমিল বা অবমুল্যায়নের কারনে।
এখন আসি জোটের ব্যাপারে। অন্য দলের সাথে জোট গঠন অধিকাংশ সময়ই দলীয় প্রধানের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঘটে। কখনও তা শুধুই ব্যক্তি স্বার্থে, কখনও দলীয় স্বার্থে। আর তা কেন্দ্রীয় নেতৃ বৃন্দগন হয়ত মুখ বুঝে মেনে নেন অথবা বিশেষ কোন স্বার্থে সমার্থন করে যান। আবার কখনও এর বিপত্তি ঘটতেও দেখা যায়। ফলে দল ত্যাগ করে নিজেই কোন দল গঠন করে ফেলেন। এর অন্যতম কারন, একটা দল যখন অন্য কোন দলের সাথে ঐক্য বা জোট গঠন করে স্বাভাবিক ভাবে ঐ দলটির নিজস্ব মতাদর্শ লোপ পায়। বিশেষ করে ছোট দল গুলোর সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মতাদর্শের চরম অবক্ষয় ঘটে। দুটি দলের আদর্শ বা নীতিমালা ও কর্ম পদ্ধতি কখনও পুরোপুরি এক নয়। সকলেরই নিজস্ব ভাবমুর্তি থাকে। জোটের ক্ষেত্রে বড় দলগুলোর শর্তই বেশি থাকে। তবুও ক্ষুদ্র দলগুলো কখন কখনও স্বার্থের কারনে নিজেদের মতাদর্শকে বিষর্জন দিয়ে বড় দলের মতাদর্শের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া শর্তগুলো মেনে নিয়ে জোটের শরিক হয়ে থাকেন। আর তখন নেতা, কর্মীদের বিশেষ করে তৃনমূল পর্যায়ের সমার্থকদের ব্যক্তিগত মতাদর্শের মৃত্যু ঘটে। যারা সেবামূলক একটি মতাদর্শকে হৃদয় লালন করেন এবং যাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়াটাই মূখ্য বিষয় নয়।
উদাহরন স্বরুপ একজন ব্যক্তি জাতীয় পার্টি অথবা জাতীয় পার্টি (জেপি)’র মতাদর্শকে ভালবাসে হয়ত সে আওয়ামীলীগের কার্যক্রমকে মোটেও পছন্দ করেন না, বিএনপি’র মতাদর্শকে ভালবাসে জামায়াতকে পছন্দ করেন না, বিজেপিকে পছন্দ করেন বিএনপিকে পছন্দ করেন না প্রভৃতি। সেই পছন্দের দলটিই যখন অপছন্দের দলটি বা দলগুলোর সাথে এমনকি কোন দূর্নীতিগ্রস্থ্ দলের সাথে ঐক্যমত পোষন করে তাদের সকল অনৈতিক কার্যক্রমের সাথে আপোষ করে জোট গঠন করে তখন ঐ ব্যক্তির দলের সাথে নিজের মতাদর্শের কতটুকু রক্ষা পায় ? কিন্তু ক্ষমতা ও স্বার্থের লোভে দলীয় প্রধানরা তথা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দগন ভুলে যায় দলীয় কর্মী সমার্থকদের কথা, ভুলে যায় দলের নিজস্ব মতাদর্শের কথাও।
রাজনৈতিক মাঠের মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির স্বেচ্চাচারিতার কাছে আজ সমগ্র দেশের মানুষের ব্যক্তি সত্তা ও মতাদর্শ জিম্মি এবং তা বারবার লাঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক মাঠের মাত্র কয়েকজন খেলোয়াড় কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন। বড় অনুতাপের বিষয় সহজ সরল অভাবী এই বাঙ্গালী জাতির একটা অংশ বুঝে-না বুঝে অথবা সামান্য কিছু নগদ স্বার্থে তাঁদের খেলার সামগ্রীতে পরিনত হচ্ছে।
বিষয়: রাজনীতি
১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন