কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই ??? !!!

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩৭:০৪ দুপুর

বাঙ্গালী জাতি ঘুমিয়ে ছিল, ভালই ছিল, হঠাৎ পাকিস্তানীদের করা গুলির শব্দে জেগে উঠল, জেগে দেখল নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বাংলার আকাশের সূর্য্য চির কালের জন্য অস্তমিত হওয়ার পথে। সত্যিই বেলা ফুরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সেই থেকে শুরু..... এরপর বাঙ্গালী জাতি যদিও সাময়িক মুক্তি পেয়েছিল কিন্তু হারিয়ে ফেলে নিতাইগঞ্জের (স্থায়ী মুক্তির) পথ। কারন খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই সৃষ্টি হয়ে যায় দুটি পথ, জিয়াউর রহমান আর শেখ মুজিব। প্রসঙ্গ কন্ঠ ও স্বীকৃতি। কন্ঠ থেকে কে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন আর কে ঘোষনা দিয়েছেন? শুরু হল দ্বন্দ। আর থামেনা। কে “করুনা” করেছিল বাঙ্গালী জাতির প্রতি। আমি এখানে করুনা বলেছি। হয়ত শুনতে খারাপ লাগছে। কারন এই কন্ঠ দুটির ওয়ারিশগন ও শুভাকাঙ্খীরা তার স্বীকৃতি আর বিনিময় মূল্য এমন চড়াভাবে হাঁকাতে শুরু করল যার স্বরুপ দেশের পুরো মালিকানা দাবীর ছুঁই ছুঁই। আহারে !!! হতভাগ্য বাঙ্গালী জাতির কপালে এমনই করুনা জুটেছিল যার প্রতিদান বা মূল্য পরিশোধে শরীরের বস্র খুলে দিতে হবে। ব্যাপারটা এমন পর্যায় গিয়ে দাড়াল । দেশের সন্তান দেশের জন্য করেছে, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এটা তাদের ব্যক্তিগত কর্তব্য ছিল। আর জাতি সেটা মর্যাধানুযায়ী কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরন করবে। কিন্তু তাদের এই কর্তব্যকে আমাদের কাছে করুনা হিসেবে তুলে ধরা হল। সময়ের বিবর্তনে তাদের কন্ঠের সুর ধরে চির চেনা সেই গানটির মত দুজনার দুটি পথ আজ দুদিকেই গেছে বেঁকে। আর পথের প্রান্তে দাড়িয়ে তাদের ওয়ারিশ গন বাংলার জনগনকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে সেবার নামে কত শত প্রতিশ্রুতি। কন্ঠ ওয়ারিশদের পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যে জুটে যায় আর কত শত কান্ডারী আর মুক্তির পথের নমুনা। তবু নিতাইগঞ্জের পথ মেলেনা।

বরং যে বাঙ্গালী জাতি “ আমরা বাঙ্গালী” একটি পরিচয় নিয়ে যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিল, সু কৌশলে সেই ওয়ারিশগন ও কান্ডারীরা তাদের দুষ্ট রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিশ্রুতির ছলে বাঙ্গালী জাতিকে আজ বহু ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। ভুলিয়ে দিয়েছে আসল পরিচয়। আমি বাঙ্গালী থেকে আমাদের পরিচয় হয়ে গেছে আমি আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি অথবা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নামে। তবুও থেমে থাকেনি সময়ের সাথে সাথে বিভক্ত বাঙ্গালী জাতিকে সেই কন্ঠ যুদ্ধের যোদ্ধায় পরিনত করা হয়েছে। দেশে এখনও শান্তিকামী নিরীহ একটা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আছে যারা দেশের শান্তি চাই, কল্যান চাই। যারা দেশের স্বার্থে কাজ করেছে এমন সকলের কৃতিত্ব ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জানে। যারা শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান সহ সকল বীর বাঙ্গালীকে তাদের মর্যাধা অনুযায়ী স্বরন করতে কুন্ঠাবোধ করেনা। তারপরেও এই কল্যানকামী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী তাদের যুদ্ধের মাঝ খানে পরে ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছি। প্রান বাঁচাতে দুই হাত উঁচু করে তাদের সকল দাবী মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করি, বুকে আশা বাঁধি, তবুও যদি নিতাইগঞ্জের (মুক্তির) পথ মেলে। শর্তানুযায়ী এক ওয়ারিশ শেখ হাসিনার কথা মত মুজিবের মাজার থেকে ফেরার পথে জিয়া সৈনিকের গুলিতে প্রানটাই চলে যেতে পারে। ভাগ্যক্রমে জিয়ার মাজারে যাওয়ার শর্তে বেঁচে গেলেও জিয়ার মাজার থেকে বাড়ীতে ফিরেই দেখা গেল কোন এক মুজিব সেনা অস্র তাক করে দরজায় দাড়িয়ে। চিৎকার করে বলি জানে মেরনা তোমাদের উভয়ের দাবী মত এই মাত্র সকল কৃত্য সম্পন্ন করে তবেই বাড়ী ফিরলাম। জবাব এল, না, তা হবেনা, তা হবেনা। এক সাথে দুটো চলবেনা। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া অমর হোক অমর হোক, মানিনা, মানবনা। বলো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বলো কোন পথে যাই ....???

নিরপেক্ষ নিরীহ শান্তি কামী মানুষের অবস্থা বর্ননার এক জলন্ত উদাহরন সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। নিতাইগঞ্জের (মুক্তির) আরেকটি পথের প্রদর্শনকারী এরশাদ নিজেই নিতাই গঞ্জের পথ পাচ্ছেনা। শেষ বয়সে এসে জেল জুলুম থেকে বাঁচতে কখনও খালেদা জিয়ার আঁচল ধরছেন আবার কখনও শেখ হাসিনার আঁচল। তবুও পথ মেলেনা, শংকা থেকেই যায়। যাতাকলে পিষ্ট এরশাদের মত বাংলাদেশের সকল সংখালগু রাজনৈতিক দলগুলোর একই অবস্থা। বিকল্প পথে “একলা চলোরে” থিওরীতে চলতে গিয়ে নিঃশেষ হওয়া ছাড়া উপায় নেই তারও অসংখ্য প্রমান বাংলার মাটি ধারন করে আছে। এক্ষেত্রেও দুটি সংখালগু রাজনৈতিক দল দিয়ে উদাহরন দিচ্ছি। একটি জাসদের একাংশ জাসদ রব গ্রুপের আজ কি করুন দশা। আরেকটি উদাহরন জাতীয় পার্টির একাংশ জাতীয় পার্টি (জেপি) দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী পদে থেকে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন সাধন করেছে, বিশেষ করে দক্ষিন অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতীক, সকলের সু পরিচিত ও ব্যাপক জনপ্রিয় সেই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সব ছেড়ে একা পথ চলতে গিয়ে তার অস্তিত্বই বিলীন। ২০০১ এর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে বিএনপি, ফখরুল-মঈনের তত্বাবধায়ক সরকার অতপর আওয়ামীলীগ কর্তৃক দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র, দলীয় স্থানীয় নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন ও নিধনের ফলে তিনি ও তাঁর দল বিলীন হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় পর্যায় দলীয় কার্যক্রম চালু থাকলেও তার নির্বাচনী এলাকায় দলীয় লোকজনের দলের চেতনাকে নীরবে বুকে ধারন করে অপেক্ষা করা ছাড়া বেশি কিছু করার উপায় ছিলনা। এখন আবারও চেষ্টা করছেন উঠে দাড়াবার। তা কতটুকু সম্ভব হবে ?

কন্ঠ যুদ্ধে বিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেকটি যুদ্ধ। ১৫ ই আগষ্টের কথা বলছি, শেখ মুজিবের মুত্যু দিবস, সে তারিখেই নাকি বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। হ্যাঁ হতেই পারে। শেখ মুজিব ঐ তারিখে নিহত হয়েছেন বলে বছরের ঐ তারিখে আর কেউ জন্ম নিবেনা তা তো হতে পারেনা। আর জন্মদিনে সে কেক কেটে আনন্দ করতেই পারে। তাতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামীলীগের কেন আপত্তি থাকবে ? প্রচলিত মতানৈক্যের কারনে বলছি যদি প্রকৃত পক্ষে এই তারিখে বেগম জিয়ার জন্মদিন না-ই হয়ে থাকে, তবে কেন এই মিথ্যাচার আর বানোয়াট আয়োজন ?

ঘটনা যাই হোক, আমরা সেই ক্রসফায়ারেই। দয়াকরে আমায় একটু পরামর্শ দিন, ১৫ আগষ্ট আমরা জন্মদিনের আনন্দে হাসব নাকি মৃত্যু শোকে কাঁদব ? শুনেছি নিতাইগঞ্জে দুটোকে কেন্দ্র করেই ভুড়িভোজের ব্যাপক আয়োজন কিন্তু কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই...... ??? !!!

বিষয়: রাজনীতি

১৩০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File