শেখ হাসিনা বনাম বাংলাদেশ, দেশ সেবা নাকি প্রতিশোধ ?
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ০৮ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:১৮:৪৪ বিকাল
শান্তি প্রিয় বাংলাদেশের মসজিদে মসজিদে, প্রতিটি প্রার্থনালয়ে এক সময় বিশ্ব শান্তির জন্য, যুদ্ধগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য, প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ সকল বিপদগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য দোয়া /প্রার্থনা করা হত। আর সেই সোনার দেশে আজ সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষন, গুম, নির্যাতন, বিশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা, অরাজকতা, সীমাহীন দ্রব্য মূল্য, মানবধিকারের চরম লঙ্গন, জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতা, ককটেল, বোমা, গ্রেনেট আর মূহুর্মূহ গুলির শব্দে প্রকম্পিত বাংলার প্রতিটি জনপদ। টিয়ার শেলের ধোয়া, রাস্তায় রাস্তায়, বাড়ীতে বাড়ীতে, দোকানে , কল কারখানায় আগুন, বাতাসে লাশের গন্ধ, চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ, রাজপথ সহ বাংলার মাটি মানুষের রক্তে রঞ্জিত, রক্ত ধুয়ে ফেলতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ক্লান্ত। আতংকিত মানুষ। পড়ার ফাঁকে নিস্পাপ শিশুটি একটু সজীব নিশ্বাস নিতে বারান্দায় দাঁড়াতে পারছেনা, লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলি অথবা গ্রেনেডের স্প্লিন্টার এসে বিঁধছে শিশুটির বুকে (সূত্রঃ দৈনিক পত্রিকা)।
বর্তমান এই অশান্তি, অরাজকতা, বিশৃংখলার জন্য দায়ী মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি মানুষ, যার মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। তিনি-ই দেশের কথা না ভেবে ও দেশের মানুষকে তোয়াক্কা না করে বর্তমান এই পরিস্থতির সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর নির্দেশে, তাঁর ছত্রছায়ায় এবং তারই কারনে দেশের প্রতিটি হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংশযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। “যেই দেশের মাটি আমার বাবা শেখ মুজিবের রক্তে ভিজে লাল হয়েছে, যেই দেশের মানুষ আমার পরিবারকে বাঁচতে দেয়নি, যেই দেশের মানুষ আমাকে কাঁদিয়েছে, সেই দেশের মাটি থেকে কখনই রক্ত শুকাতে দেবনা, সেই দেশের মানুষকে আমি বাঁচতে দেবনা, সেই দেশের মানুষকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবনা। আমার চোখের পানি ফিরিয়ে দেব তাদেরকে” যেন এমনই প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এলেন। দেশ সেবার এক মহান আবেদন তুলে ধরলেন জাতির কাছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি বাঙ্গালী জাতির এক সময়ে যে ভালবাসা ছিল তারই সহমর্মীতায় দেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে বরন করে নিলেন। কিন্তু সহজ সরল বাঙ্গালী জাতি বুঝতেই পারলেন না সদ্য আঘাতে ক্ষত হওয়া তাঁর হৃদয়ে প্রতিশোদের আগুনে মোড়ানো সূদুর প্রসারি পরিকল্পনার কথা। আজ তার খেয়াল খুশি আর দুষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনীতির নামে গনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের মানুষগুলোকে বোকা বানিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন চুড়ান্ত প্রতিশোধের দিকে। ভ্রুক্ষেপ করছেন্ না দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ব্যাপারে। ভাবছেন না দেশের মানুষগুলোর কথা। দেশের প্রতিটি সেক্টরকে তিনি তাঁর নিষ্ঠুর রাজনৈতিক ছোয়ায় রক্তাক্ত করে রেখেছেন।
ক্ষমতায় এসেই দেশের স্বার্থ উন্নয়নের কথা ভুলে গিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁর বাবার হত্যার বিচার নিয়ে। হ্যাঁ এটা জাতীয় দাবী, এটা জাতির প্রাপ্য, আমার এই ক্ষুদ্র মনেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাম্য ছিল, সেই সাথে আমি প্রতিটি হত্যা কান্ডের সুষ্ঠ বিচার প্রত্যাশী। এটা বিচার বিভাগের কাজ। দেশের চলমান সকল উদ্যোগের সাথে এটিও একটি, সময়ের সাথে এটি নিস্পত্তি হবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐসময়ে শেখ হাসিনার এই বিষয়ে কার্যতৎপরতা দেখে মনে হয়েছে, শুধু তাঁর বাবার হত্যার বিচার করতেই বাংলার মানুষ তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। একজন কন্যা হিসেবে পিতার হত্যার বিচারের দাবীতে দেশের কথা ভুলেই যেতে পারেন। কিন্তু তিনি সেই সাথে যে একজন প্রধানমন্ত্রী, তা ভুলে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করিনা।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভাবের সুযোগ নিয়ে, স্বার্থের ফাঁদে ফেলে, অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে দলীয়করন ও দূর্নীতির মাধ্যমে অশান্ত, বিশৃংখল ও রক্তাক্ত করে রেখেছে।
তার একটি উদাহরন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছেন, “দলীয় লোক ছাড়া চাকরীতে কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবেনা। যদি কোন কর্মকর্তা আওয়ামীলীগের লোক ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে” পক্ষান্তরে এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই ঘোষনা, যেহেতু তিনি এর প্রতিবাদ করেন নি।
আর এভাবেই তিনি অবৈধ ভাবে বিশেষ বিশেষ স্বার্থের লোভ দিয়ে, বাংলাদেশের হত দরিদ্র জনসংখ্যার একটা অংশকে নিজের ভক্ত বানিয়ে তাঁর প্রতিশোধের ভিষন ও মিশনকে পূর্ন করতে কাজে লাগাচ্ছে। আর অভাব ও লোভের মুখে কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ বিবেককে কবর দিয়ে, তাঁর কাজে সহযোগীতা করছেন। আর দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন ধ্বংশের দিকে।
দেশ কোথায় যাচ্ছে, দেশের কি ভবিষ্যৎ সবকিছু ভুলে গিয়ে স্লোগান একটিই যুদ্ধাপরাধের বিচার। হ্যাঁ, সুষ্ঠ তদন্ত, স্বাক্ষী প্রমান নিয়ে এটির বিচার হবে, দন্ড হবে, প্রয়োগ হবে, দল মত নির্বিশেষে স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ খুশি হবে। যেহেতু নির্যাতিত স্বাধীনকামী বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা অর্জনের সময় কিছু লোক স্বজাতিকেই হত্যা করেছে, এইসব হত্যাকারীদের শাস্তি হবে, তা তো দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য খুশির খবর। আমার প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে যারা অন্তরায় ছিল, দেশের সেই কুলাঙ্গার শত্রুদের বিচার আমিও চাই, এটা আমার প্রানের দাবী। কিন্তু সেই সাথে গৌরবজ্জোল স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নত মমশিরের অনড় অবস্থান ও দেখতে চাই। যেমনি করে বাংলাদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে অল্প সময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করে বিশ্ববাসীর কাছে এক বিরল গৌরব অর্জন করেছে, তেমনি যুদ্ধ অপরাধীর একটি সুষ্ঠ, স্বচ্ছ গ্রহনযোগ্য বিচার করে জাতি আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশ্বে আরেকটি সুখ্যাতি অর্জন করবে, এটাই প্রত্যাশা। ব্যাক্তি স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে, প্রতিহিংসামূলক, অস্বচ্ছ, অগ্রহযোগ্য, প্রশ্নবিদ্ধ কোন বিচারের কারনে বিশ্বের কাছে দেশ কলংকিত হোক, দেশের সম্মান হানি হোক, সকলের ধিক্কারে দেশের উন্নত মমশীর নত হয়ে যাক তা কারো প্রত্যাশা নয়। কিন্তু তাহলে কেন এই অসন্তোস ? কেন এই রক্তপাত ?
কারন,প্রতিশোধের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমনটিই করছেন। বিচার বিভাগের বিভিন্ন কেলেংকারী বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ হওয়ার পড়েও তাঁর সরকার নির্লজ্জের মত কান চেপে ধরে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে, সু-নির্দিষ্ট স্বাক্ষী প্রমান ছাড়া একেকটি রায় ঘোষনা করে যাচ্ছে। আসামী পক্ষে কেউ কথা বল্লে গুম হয়ে যাচ্ছে, দেশের বাহিরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কারাগারে নির্যাতিত হচ্ছে। আর সেই ইস্যুতে জামাত শিবিরের তান্ডবে আর সরকার কর্তৃক তা দমনের হিংস্রতায় দেশ একটি ধ্বংশস্তুপে পরিনত প্রায়, অচল। এটাতো তার কোন পারিবারিক হত্যা মামলা নয়। কোন ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। জাতীয় ব্যাপার। সেটা সুষ্ঠভাবে নয় কেন ? অর্থাৎ যেভাবেই হোক দেশের অশান্তি চাই-ই চাই। দেশ বিদেশের কোন বিবেকবান মানুষ এটিকে সমার্থন করছেনা।
২৯শে মে ২০১৩ ইং তারিখে ফ্রান্সের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রাঁসোয়া জিমেরে বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে, মানবাধিকার লঙ্গন, গুম ও বিচার বহির্ভুত হত্যা, আইন শৃংখলার অবনতি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে চরম অসন্তোস প্রকাশ করে এসেছেন। তিনি বলেন-“বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা জঘন্য অপরাধ। কোনো দেশে যখন আইনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখনই কেবল এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। কোন সমাজে গুমের ঘটনা চলতে পারেনা” রানা প্লাজা ধস প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি বলেন-“বাংলাদেশে আইন ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে” সূত্র: আমারদেশ অনলাইন
( http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/05/29/202073#.UatP9NJHJHh ) ইত্তেফাক ( http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMjlfMTNfMV8xXzFfNDQ0Njg= ) সহ অন্যান্য পত্রিকা।
দেশে ছিলনা কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা ভেদাভেদ। দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো শান্তিপূর্নভাবে সহবস্থানের মাধ্যমে পার করে আসছিল যুগের পর যুগ। তাঁর লোক দিয়ে সৃষ্টি করা বিশেষ ইস্যুতে এবং বিভিন্ন উস্কানি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর মনে আঘাত দিয়ে দেশে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে বিক্ষুদ্ধ জনতায় পরিনত করে , আবার তিনিই তাঁর লোকজন আর সরকারী বাহীনির অপব্যবহার করে হাজার হাজার নিরপরাধ নিরস্র মানুষকে রাতের অন্ধকারে নির্মমভাবে হত্যা করেন।
আমি মনে করি তিনি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন দেশের এই চলমান সংঘাত আর হত্যাযজ্ঞ , রক্তপাত কোনদিন বন্ধ হতে দেবেন না। কারন এ যে চরম প্রতিশোধ।
দেশ সেবা হলে তিনি মানুষের শান্তির কথা ভাবতেন, দেশের কথা ভাবতেন, দেশের ভবিষ্যতের কথা ভাবতেন। দেশে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে তাঁর দলীয় ও সরকারী বাহিনীগুলোকে বেপরোয়া করে তুলতেন না। মানুষের মানবধিকার হরন করতেন না, মানুষের ধর্মীয় অধিকারে হানা দিতেন না। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতেন না। বিচার বিভাগকে প্রভাবিত না করে পূর্ন স্বাধীন রাখতেন। সংবাদপত্রের উপর নগ্ন হামলা করতেন না, নির্দিষ্ট কারন ছাড়া সংবাদ পত্র , টিভি চ্যানেলগুলোকে বন্ধ করে দিতেন না। সাংবাদিকদের উপর নগ্ন হামলা চালাতেন না। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখোমুখি করতেন না। দলীয় লোকজন দিয়ে শ্রমিকদের কে হত্যা করাতেন না, কথায় কথায় মিথ্যাচার করতেন না। ক্ষমতায় না থাকা দলগুলোর গনতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করতেন না, প্রভৃতি।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রক্তেও লাল হয়েছে দেশের মাটি, শেখ হাসিনার শেখানো পথে যৌবনে পতি হারানোর প্রতিশোধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও যে পরিকল্পনাহীন থাকবেন, তারই বা নিশ্চয়তা কি ?
আমি জানি আমার এই কলাম প্রকাশ হওয়ার পরে আজ যদি আমি দেশে থাকতাম, হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করতে হত অথবা অস্র মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে, অস্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে লাশ গুম করে ফেলা হত। সুস্থ রাজনীতি ও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত বিশ্বের শ্রেষ্ট মানবধিকারের দেশ ফ্রান্স। এই দাতা দেশের কাছে প্রধানমন্ত্রীর হিংস্রতা সম্পূর্ন অসহায়।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন