শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভীতি
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৪৫:৪৬ রাত
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ, কাজের সময় কাজী , কাজ ফুরালে পাজি। পরের বেলায় আধা আধা, আর নিজের বেলায় ষোল আনা। এই রকম অনেক প্রচলিত কথা আছে। কিন্তু এর তাৎপর্য ব্যাপক। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষন উদাহরন সহ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামীলীগ তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে একটি উদাহরন এখানে তুলে ধরা হল। তা হল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সহজে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে বুঝি- যখন একটি সরকারের মেয়াদ শেষে তারা সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় আরেকটি নতুন সরকার। আর তা গঠনের পূর্ব শর্ত হচ্ছে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনটি সূষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে ও বিদায়ী সরকার থেকে নতুন একটি সরকার গঠন পূর্ব পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় আরেকটি অস্থায়ী সম্পূর্ন নির্দলীয় অন্তরবর্তী কালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর গনতান্ত্রিক একটি দেশে গনতন্ত্রের সহায়ক এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্বতির প্রয়োজনীয়তা অনুভবের কৃতিত্ব কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তারঁ দল আওয়ামীলীগেরই। এই বোধদয়ের পিছনেও ছিল একটি পরাজয়। আসলে ব্যর্থতাই সফলতার পথ দেখায়। ১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচনে হেরে গিয়ে তিনি ও তাঁর দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন। তখন শেখ হাসিনা বিভিন্ন সভা সমাবেশে স্পষ্ট বলেছিলেন, দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। তিনি ঘোষনা করেছিলেন –“ বিএনপি সরকার কে ক্ষমতায় রেখে অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়” ঐ সময়ে তিনি তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করে বলেছিলেন-“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোন ফর্মূলা মানবনা”। (সূত্র:১৯৯৪-৯৫ সনের দৈনিক পত্রিকা সমুহ) আজকের যুদ্ধাপরাধের দায় অভিযুক্ত নেতাদের ও বর্তমানে নিষিদ্ধ প্রায় (প্রস্তাবিত) জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ (কাজের সময় কাজী , কাজ ফুরালে পাজি।) এবং জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে গনতন্ত্রের নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফলে দেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তির সমন্বয় গঠিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিল পাশ হয়। অথচ আজকে সেই শেখ হাসিনাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শুনেছি বয়সের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনা, বিবেগ বুদ্ধি, দাবী চাহিদার পরিবর্তন আসে, হের ফের হয়। কিন্তু তা এত তাড়াতাড়ি আমূল পরিবর্তন বা পুরো উল্টে যেতে পারে, তা শেখ হাসিনাকে না দেখলে, অনুমান করার উপায় নেই।
কিন্তু কেন তাঁর এই বিরুদ্ধাচারন ? কি বিশেষ সুবিধা বা দূর্বলতার কারনে তিনি একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অমান্য করছেন ? কয়েকদিন আগে যদিও তা মোটামুটি অস্বচ্ছ ছিল, কিন্তু বিভাগীয় শহরগুলোতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি তত্ত্বাবদায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করার মূল কারন হচ্ছে ২ টি। যথাক্রমেঃ
১: অপরাধবোধের কারনে জনগনের প্রতি আস্থাহীনতাঃ তাঁর এই সরকারের আমলে দেশ শোষনের ফলে দুর্নিতি, দলীয় করন, চাঁদাবাজি, নির্মম নির্যাতন, ধ্বংশযজ্ঞ, খুন, ধর্ষন, হত্যাযজ্ঞের যে করুন ক্ষতচিন্হ বাংলাদেশের মানুষ ধারন করে আছে তাতে যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন দেয়া হয় ১টি আসনেও জয়লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে। আর বিচক্ষন শেখ হাসিনার এই নিখাদ আত্ম উপলব্দি-ই হচ্ছে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন থেকে সড়ে আসার অন্যতম কারন।
২: চির ক্ষমতার লোভঃ ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসেছে শেখ হাসিনাকে। বাংলার মসনদে আজীবন ক্ষমতায় থাকার চরম লোভ পেয়ে বসেছে তাঁকে। আর তা কেড়ে নিতে যে নীল নকশা করা হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনকে অস্বীকার করাই তার বহিঃপ্রকাশ। নিজের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে আবার ক্ষমাতায় এসে চক্রান্ত ও নির্যাতন করে বিরোধী দলগুলোকে নিঃশেষ করে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করাই হচ্ছে মূল কারন বা উদ্দেশ্য।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বোধহয় এটাও ভুলে গেছেন, শোষন করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায়না, তাঁর জন্য প্রয়োজন সেবা।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন