জাতি সহাস্রাধিক লাশ দিয়ে শুভেচ্ছা জানাল রাষ্ট্রপতিকে, রাষ্ট্রপতির প্রতিদানের অপেক্ষায় জাতি ???
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ২১ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৫১:৩১ রাত
মো: মিজানুর রহমান সোহেল, ফ্রান্স থেকে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খাঁনের শপথ গ্রহনের দিনে ধ্বসে পড়ল সাভারের রানা প্লাজা। স্বরনকালের ভয়াবহ এই ভবন ধ্বসের ঘটনায় হাজার হাজার হত দরিদ্র শ্রমিকের তাজা প্রান চলে গেল না ফেরার দেশে, যদিও সরকারী হিসেব প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় নগন্য তবুও তা সহস্রাধিক।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালের পর অনেকটা অকল্পনীয় ভাবেই ভাগ্য সু-প্রসন্ন হল স্পীকার আব্দুল হামিদ খানের। রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগে আওয়ামীলীগের করা সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষে অবস্থান পেল তাঁর নাম।
রাষ্ট্রপতি জীবনে পদার্পনের পূর্বেই সফলতার মুখ দেখলেন বিএনপি কর্তৃক প্রস্তাবিত সমার্থনের মাধ্যমে, যদিও তা তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সহায়ক বা অন্তরায় কোনটাই ছিলনা।
দ্বিতীয় সফলতা স্বরুপ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন তিনি। কিন্তু মনক্ষুন্ন হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুমাম্মদ এরশাদ। অনেকটাই আক্ষেপ আর অভিমান নিয়েই বল্লেন, “ আমি জোটের শরীক, আমাকে একবার জিজ্ঞাসাও করা হলনা” প্রচলিত একটা কথা আছে-“আবেগ দিয়ে বাস্তব চলেনা” (যদিও আমি এই প্রচলিত কথাটির সাথে সম্পূর্ন একমত নই। কারন আবেগ দিয়েই বাস্তবতাকে উপলব্দি করতে হয়।) এইচ. এম. এরশাদের ব্যাপারেও এর ব্যতিক্রম হলনা। থেমে থাকলনা প্রক্রিয়া। যদিও এইচ এম এরশাদের এক সময়ের ঘনিষ্টজন, বর্তমানে জাতীয় পার্টির একাংশ (জেপি’র) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জনিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহনের প্রস্তুতি শেষ, জাতি অপেক্ষায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চরম সংকটপূর্ন অবস্থায় পাওয়া এক নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে তাজা ফুলের শুভেচ্ছায় বরন করে নিতে। কারন চলমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির ভুমিকা নিয়ে জাতি অনেক বেশি প্রত্যাশিত। ২৪ এপ্রিল শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের পূর্ব-নির্ধারিত আয়োজন নিয়ে কালের স্বাক্ষী হতে পূর্ব দিগন্তে লালিমা ছড়িয়ে একটি দিনের সূচনা ঘটেছিল, কে জানত সেই সূর্য্যই যে কালের ভয়াবহ প্রানহানীর স্বাক্ষীও হয়ে থাকবে ? সকালে সাভারে ধ্বসে পড়ল রানা প্লাজা। স্তব্দ হয়ে গেল গোটা জাতি। জাতির কাঁধে লাশের স্তুপ চেপে বসল। থেমে থাকলনা ঐ শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান। নিরুপায় হয়ে সারি সারি লাশ দিয়ে সন্ধ্যার সেই শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জনাতে বাদ্য হল জাতি।
ভবনে ফাটল দেখা দিলে শিল্প পুলিশ বন্ধ করে দেয় ভবনটিতে থাকা সকল গার্মেন্টসের কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এমনটিই প্রকাশ পায়। তিনি বলেন-“আমরা ভবনটি আগের দিন বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু ঘটনার দিন নিষেধাজ্ঞা না মেনে ভবনটির কার্যক্রম চালু রাখে”।
সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে যেখানে হেফাজতে ইসলামের লক্ষ লক্ষ কর্মীরা মিলে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারনে কয়েক ঘন্টা টিকতে পারলনা, সেখানে কয়েকজন লোক মিলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিভাবে হাজার হাজার কর্মীদের জোর পূর্বক কাজে যোগদান করিয়ে ঝুকিপূর্ন ভবনটির সকল কাজ সচল রাখতে সমর্থ হয় ? তা আমার বোধগম্য নয়। খোঁজ মেলে এই অশুভ শক্তির। কিন্তু জাতির অভিবাবক প্রধানমন্ত্রী কোন রকম তদন্ত ছাড়াই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জাতিকে ধোঁকা দিলেন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে। অথচ তাঁরই সংগঠন থেকে নিশ্চিত করা হল হত্যাযজ্ঞের দায়ীদের মূল হোতা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা যুবলীগে সক্রীয় প্রভাবশালী নেতা। দ্বায়িত্বহীন বক্তব্য জাতির প্রত্যাশা নয়। হ্যাঁ হতেই পারে, অপরাধী যে কেউ হতে পারে, সে যে কোন দলের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠতে পারে। বিধান অনুযায়ী শাস্তি আরোপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে এটাই স্বাভাবিক।
যখন অসংখ্য পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। হাজার হাজার অসহায় হত দরিদ্র মানুষের, ভবনের নিচে আটকা পড়া স্বজনকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে অন্তত লাশটি ফিরে পাওয়ার আহাজারী, ভবনের নিচে আটকা পড়ে বাঁচার করুন কাকুতি মিনতি দেখে বিশ্ববাসী সহমর্মীতায় ভারাক্রান্ত, ঠিক সেই মুহুর্তে সরকারের গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মখা আলমগীর নির্বোধের মত এক হাস্যকর বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে লজ্জায় ডুবালেন। বিশ্বের কাছে জাতিকে তামাশায় পরিনত করলেন। ভবন ধ্বসের কারন বলতে গিয়ে বল্লেন-“কিছু হরতাল সমার্থেকরা ভবনটির গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছিল”
এই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে মেধাশূন্য, বিবেকহীন জাতি হিসেবে উপস্থাপন করে সম্মান ক্ষুন্ন করলেন দেশটির, অথচ সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের মাটির নিচে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীরা ঘুমানো, যে দেশের অসংখ্য মেধাবীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পর্যায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে খ্যাতি অর্জন করছে। যাদের লাশের মঞ্চকে সামনে রেখে প্রতিহিংসা পরায়ন বক্তব্য দেওয়া হল, তাঁরা রাজনীতিতে নয়, কোনমতে মাথা গোজার ঠাই ও দু মুঠো ভাত নিশ্চিত করতেই সদা ব্যস্ত। আর তাদেরকে শোষনের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে আকাশচুম্বী ভবনগুলো।
শতশত লাশের সন্নিকটে সেই সাভারেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে গেলেন নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। সাভারে ধ্বংশ স্তুপের কাছে সারি সারি লাশ, আটকে পড়া মানুষের বাঁচার আত্ম চিৎকার ও হাজার হাজার স্বজন হারা শোকাহত মানুষ আর শত শত আহত মানুষের পাশে গিয়ে একটুখানি দাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব না করে ঢাকায় ফিরে যেতে দেখে জাতি হতবাক হলেন। নিরাশ হলেন আরেকবার। মানবতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হল যখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গেলেন টুঙ্গিপাড়ায়। সকলের সাথে আমারও প্রশ্ন, ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া যেতে পারলেন অথচ সাভারের স্মৃতিসৌধ থেকে রানা প্লাজায় যেতে পারলেন্ না ? প্রথমত তিনি একজন মানুষ, দ্বিতীয়ত তিনি একজন বাঙ্গালী, তৃতীয়ত তিনি একজন জন প্রতিনিধি, তারপরে তিনি রাষ্ট্রপতি, তাও এই জাতির কল্যানের জন্যই।
যেই জাতির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন সেই জাতিকে মৃত্যু কুপে রেখে, তাদের পাশ কাটিয়ে টুঙ্গীপাড়া আসাকে বাঙ্গালীর মুক্তিকামী নেতা শেখ মুজিবর রহমানের আত্মা কোনভাবেই সমার্থন করতে পারেনা। জাতির জন্যই ছিলেন তিনি। আগে দেশ জাতি, কারন তাদের জন্যই এত আয়োজন, রাজনীতি, ভোট, সরকার, মন্ত্রীসভা, রাষ্ট্রপতি প্রভৃতি।
শেখ মুজিব , জিয়াউর রহমান কিংবা অন্য কারো মাজারে যাওয়া হয়ত কোন সাংবিধানিক শর্ত নয়। হয়ত এটি দলীয় প্রথা বা কার্যক্রম, কিন্তু দেশ ও জাতির সেবার পবিত্র দ্বায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দলীয়করন তো দুরের কথা দলীয় শব্দটি উচ্চারন করার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করিনা।
অথবা দেশের এই অমর রাষ্ট্র নায়কদের মাজারে যাওয়াটা হতে পারে পরম শ্রদ্ধাবোধ থেকে। সে ক্ষেত্রে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়াটাও সাম্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সেখানে না যাওয়াটা দলীয়করনেরই ইঙ্গিত বহন করে যা জাতির মোটেও কাম্য নয়। কারন বর্তমানে দেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, উত্তেজনা, অস্থিরতা ও বিশৃংখলা বিরাজ করছে দেশের সর্বত্র। ঘটনা-দুর্ঘটনায় দেশে শুধু লাশ আর লাশ। অনিশ্চয়তার মাঝে আগামীর সুষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন। এই ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রপতিকে নিতে হবে নির্দলীয়ভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তন হলে মেয়াদের বাকী অংশে রাষ্ট্রপতিকে স্ব-অবস্থানে থেকে কাজ করতে হবে তাদের সাথেও। অনেক বড় দ্বায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে জাতির প্রত্যাশা ও অনেক বেশি। আমরা অপেক্ষায়....
বিষয়: রাজনীতি
১৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন