বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরী

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:২৩:২৯ সকাল

(সক্রিয় রাজনীতি নয় রাজনীতি চর্চা-ই ছাত্রজীবনে শ্রেয়। তাই শিক্ষিত জাতি গড়ার চেতনায়, রাজনীতি চর্চাকে পুস্তকের দ্বারা পাঠদানের মাঝে সীমাবদ্ধ করে, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরী)

[b]মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল, ফ্রান্স থেকে।[/b]

শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, তাহলে বাংলাদেশের পক্ষে কোন দিন-ই সেই দন্ডের উপর ভর করে দাড়ানো সম্ভব নয়, শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত। কারন, ছাত্র রাজনীতি মানেই এখন হাতের কলম ফেলে দিয়ে অস্র তুলে নেয়া, দলীয়করন, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষন, ক্ষমতার অপব্যবহার, মিছিল মিটিং, ভাংচুর।

পেশাদার রাজনীতিবিদদের সংখ্যা হাতে গোনা অল্প সংখ্যক, জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ কর্মজীবী। এদের কোন রাজনৈতিক দলের প্র্তি সমার্থন থাকলেও কোন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়।

এর ফলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছাত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। কারন খুব সহজেই ছাত্রদেরকে কাজে লাগানো যাচ্ছে, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে, বিভিন্ন প্রচরনায়, এমনকি জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে।

রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদেরকে ফায়েদা লুটে নেয়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। ছাত্রদের রক্ত নিয়ে আজ তাঁরা খেলছে। হরতাল ভাংচুর রাহাজানি সহ যে কোন ধ্বংশাত্মক কর্মসূচি সফল করতে কোমলমতি ছাত্রদেরকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। লাশ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ছাত্রদেরকে মরনের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

ভয়ংকর অবস্থা হচ্ছে, ছাত্ররা মাধ্যমিক স্তর বা স্কুল জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়ছে রাজনীতিতে। কোন প্রভাবশালী ছাত্র নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে এলাকায় দাপটের সাথে চলা এবং যে কোন ধরনের অপরাধ করে সহজেই পার পেয়ে যাওয়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের সূযোগ ভোগ করতেই মূলত ছাত্ররা রাজনীতিতে যোগ দেয়। কলেজ জীবনে তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। দলীয় কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় পার করার কারনে হারিয়ে ফেলে ছাত্র জীবনের স্বাভাবিক গতি। পড়াশুনায় অমনোযোগ, ক্লাশে অনুপুস্থিতি। আর রাজনৈতিক গডফাদাররা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের কাছে পৌছে দিচ্ছে আগ্নেয়াস্র। লেলিয়ে দিচ্ছে প্রতিপক্ষকে দমন করতে। তখনই ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ছে মরন খেলা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। মিছিল মিটিং সমাবেশে সক্রিয় রাখা হচ্ছে ছাত্রদের। দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন খরাপ লোকের সঙ্গ ও নেতাদের সরবরাহের কারনে ছাত্ররা সহজেই জড়িয়ে যায় বিভিন্ন নেশায়। এ ভাবেই কেউ কেউ হয়ে ওঠে ভয়ংকর খুনী সন্ত্রাসী। এ ছাড়াও ছাত্ররা রাজনীতি করতে গিয়ে পড়াশুনা না করার ফলে পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হয়ে বখাটে হয়ে যাচ্ছে। অনেক মেধাবী ছাত্র অকালে প্রান হারাচ্ছে প্রতিপক্ষের হামলায়। পঙ্গু হয়ে পরিবার তথা সমাজের বোঝা হয়ে যাচ্ছে অনেকে। হামলা মামালায় জড়জড়িত হয়ে জাতীয় সম্পদ এই শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবন থেকে ছিটকে পড়ছে, এলাকা/দেশ ছাড়া হচ্ছে, কেউবা কারা জীবন ভোগ করছে।

রাজনৈতিক প্রভাবে মারাত্মক সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। কারন রাজনৈতিক কালো ছত্রছায়ায় থাকার ফলে সমাজে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছাত্রদেরকে বিবেকবান মুরুব্বীরা বাধা দিয়ে সঠিক পথ দেখাতে সাহস পাচ্ছেনা।

সময়ের সাথে ক্ষমতার রদবদলের কারনে শিক্ষাজীবনের অকাল অসমাপ্তি ঘটছে অনেকের। শিক্ষাক্ষেত্র রাজনৈতিক আওতামুক্ত না থাকায় শিক্ষার পরিবেশ ও স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হচ্ছে। দলীয়করন ও দলীয়ভাবে ভর্তি বানিজ্যের কারনে সাধারন মেধাবী ছাত্ররা অনেকাংশেই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেনা। ছাত্রাবাস গুলো ছাত্রনেতাদের দখলে চলে যাওয়ায় সাধারন মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার আসনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিচ্ছে। ছাত্রাবাসের সাধারন ছাত্রদেরকে উভয়দল থেকে পক্ষালম্বন করার নিমিত্তে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জোর করে মিছিল সমাবেশে নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাস দখলে গোলাগুলি, ভাংচুর দ্বারা রণক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দ হয়ে যাচ্ছে ক্লাশ। মিছিল মিটিং করে শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা ক্ষেত্র বানানো হচ্ছে। অথচ যা কিনা ছিল অধ্যয়ন বা শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্র। সাধারন ছাত্র, ছাত্রীরা এমনকি জাতি গড়ার কারিগড় শিক্ষক শিক্ষিকারা ও লাঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রনেতাদের হাতে। শিক্ষাঙ্গনে খুন, যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে, বাদ যাচ্ছেনা শিক্ষিকারাও। পরীক্ষাকেন্রে প্রকাশ্যে নকল করছে ছাত্র নেতা কর্মীরা। শাসন তো দুরের কথা তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির বিধান রাখা যাচ্ছেনা রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে।

অরাজনৈতিক বা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হওয়ায় চাকরী পাওয়ার সুযোগ থাকছেনা। দলীয় কোটার কারনে বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবীরা।

ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদেরা গরীবের রক্তচোষা টাকা দিয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে পড়াশুনা করাচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে অপরের সন্তানকে পড়াশুনায় অমনযোগী করে তাদের হাতে অস্র তুলে দিচ্ছে রাজনীতিতে সক্রিয় রাখার পরিকল্পনায়।

অধিকাংশ ছাত্রনেতা বলতে পারবেনা, সে গড়ে দৈনিক আধা ঘন্টা বই পড়ে, ক্লাশ করে, বোর্ড পরীক্ষা ছাড়া কোন পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। অথচ "ছাত্র"-ই ছিল যার পেশা, শর্ত অনুযায়ী পড়াশুনাই ছিল যার প্রধান কাজ।

দেশ ও জাতির শ্রেষ্ট সম্পদের কেন্দ্রস্থল মেডিকেল, বুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল গুরুত্বপুর্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে এই চরম সংকট ও ধ্বংসযজ্ঞ।

হ্যাঁ, যেহেতু বাংলাদেশের সরকার রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হয় একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, সেহেতু ছাত্রদের রাজনীতি চর্চা অপরিহার্য, কারন আজকের ছাত্ররাই আগামীর কান্ডারী। কিন্তু দূঃখজনকভাবে বাস্তব, বাংলাদেশের বর্তমান নোংরা রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তা আর সম্ভব নয়।

সক্রিয় রাজনীতি নয় রাজনীতি চর্চাই ছাত্রজীবনে শ্রেয়। তাই, একটি শিক্ষিত জাতি গড়ার চেতনায়, রাজনীতি চর্চাকে পুস্তকের দ্বারা পাঠদানের মাঝে সীমাবদ্ধ করে, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরী, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্জনের পূর্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে, সকল ছাত্রদের পড়াশুনায় মনোনিবেশ করানোর নিমিত্তে।শিক্ষিত, সূখী সমৃদ্ধ জাতি তথা একটি উন্নত দেশ গঠনের প্রত্যয়।

বিষয়: বিবিধ

১৩০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File