ভালবাসার গল্প (প্রথমাংশ)

লিখেছেন লিখেছেন দীপু সিদ্দিক ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৮:২৩ রাত

কৈশরের প্রেম বলেই হয়তো মনে ভীষণ দাগ থেকে গেছে। দাগ থেকে ক্ষত এবং অবশেষে ক্ষতটা মনে হচ্ছে ক্যান্সারে পরিণত হচ্ছে। যে ক্যান্সার আমার মানুসিক সকল শক্তিকে অবশ করে দিয়ে আমাকে জড় পদার্থে পরিণত করার পর্যায়ে এখন। আমি কি সত্যিই অনুভুতি শুন্য? হয়তো আমি তা’ই।

নুড়ি। আমার জীবনের সকল সৃষ্টি ও প্রলয়ের কারণ। কেমন আছে, আমি সত্যিই জানি না এখন। শেষ দেখা হয়েছিলো অনেক আগে। অন্তত ২০ বছর তো হবেই। মফস্বল শহরে ভালো রেস্তোরা বলতে গেলে এখনো পর্যন্ত হাতে গোনা। আমাদের ছোট শহরের বিখ্যাত ‘ইলিশ’ রেস্তরার সেই ঈদের পুনর্মিলনীতে সেই শেষবার নুড়ি’কে দেখলাম। দুই সন্তানের জননী। হাসিখুশি মুখের ১১ বছরের মেয়েটির উজ্বল চোখ আমাদের মহাজনি পাড়ার উত্তর কোনের সেই নুড়ি’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আর ৮ বছরের ছেলেটি চুপচাপ চিংড়ি মাছের চপ খেতে খেতে মায়ের পাশে বশে সবাইকে দেখছিলো। সেই ঈদের পুনর্মিলনীতে নুড়ি ছিলো সাদাসিধে এক বিবাহিত মহিলা।

অবশ্য নুড়ি হয়তো সব সময়ে সাধাসিধেই ছিলো। সত্যিই কি তাই? যেই রাতে নুড়িকে ভেবে ভেবে সারা রাত মফস্বলের রাস্তা ছাড়িয়ে গ্রাম পর্যন্ত হেটেছিলাম, তখনতো ওকে সাধাসিধে মেয়ে মনে হয় নি। আমার কাছের বন্ধুরা অবশ্য নুড়ির ব্যাপারে খুব একটা জোড়ালো সমর্থন দেয়ও নি। বলেছিলো, মেয়েটা একেতো আমাদের একই ক্লাসে পড়ে, তার উপরে তেমন সুন্দরি না, বাপেরও তেমন পয়শাপাতি নাই, ক্লাসে ভাল রেজাল্টও নাই। কিসের জন্য এমন একটা সাধারণ মেয়ের জন্য মাথা গরম করছিস?’

কিন্তু গার্লস স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক বাতেন স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে যেদিন প্রথম নুড়ির অগোচরে চুড়ি করে ওর খাতার ভেতরে ‘প্রেমপত্র’ গুজে দিয়েছিলাম, তখন তো ওকে সাধাসিধে মনে হয় নি। অথবা পরের দিন পড়তে আসা অতি স্বাভাবিক চেহারার নুড়ি’কেও তো সাধাসিধে মনে হয় নি। সত্যি বলতে কি, নুড়িকে আমার কখনই সাধারণ মেয়ে মনে হয় নি। এখনও মনে হয় না। হয়তো ওকে সাধারণ মেয়ে ভাবতে মন চায় না।

বছর পেরিয়ে যেতে লাগল। মাঝে মাঝেই মন খারাপ করতাম। মাঝে মাঝে আমাদের পাড়ার সামনে দিয়ে নুড়িকে হেটে যেতে দেখে ফাঁকা দীর্ঘস্বাস ছাড়তাম। কলেজ শেষে বি.এ. পড়ার জন্য তিতুমীর কলেজে আসার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। হঠাৎ’ই একদিন আমাদের পাড়ার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া তাহের এসে একটি ইংরেজি বই দিয়ে গেলো। নুড়ির বই।

দুপুর আড়াইটায় করম চাচার চায়ের দোকানের কোনের দিকের একটি কাঠের পুরোনো চেয়ারে বসে চিড়কুটের মত কাগজটা আরেকবার পড়লাম। ‘আড়াইটার সময়ে করম চাচার চায়ের দোকানে আসতে পারবে কি?’- গুটি গুটি হাতে নুড়ির লেখা। কিছুটা ভয় আর আশংকা হচ্ছিলো। তবে খারাপ কিছু ভাবতে চাইলাম না। নুড়ি আসলো। একা। আমার সামনের চেয়ারটাতে বসলো। কোন দিকে তাকালো না।

৩০ সেকেন্ডের মত চুপ করে থেকে বলল ‘ছোটন, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও?’

‘হুম, চাই’ আমি ঝট করেই উত্তর দিলাম। আমি বিষ্ময়ে থমকে গেলাম। কি বলব, ভেবে পেলাম না। হুট করেই বললাম ‘চা খাবে?’

‘নাহ্ !’ ও কিছুখন চুপ করে বলল ‘কে যে আবার কি বলাবলি করে’।

আমি কিছু বললাম না। বলার মত কিছু পাচ্ছিলাম না আসলে। ১ মিনিটের মত সময়কে অনেক দীর্ঘকাল বলে মন হলো। আমি ঘামছিলাম।

ও বলল ‘আমি যাই।‘ আমি উঠে দাড়ালাম। ও চলে গেলো। দুপুরের সময়ে চায়ের দোকানে কেউ হয়তো ছিলো না। করম চাচা দুই কাপ চা দিয়ে গেলো। (চলবে)

মধ্যাংশ-এর লিংক: http://www.desh-bd.net/blog/blogdetail/detail/7022/dipusiddiq/78539

শেষাংশ-এর লিংক: http://www.desh-bd.net/blog/blogdetail/detail/7022/dipusiddiq/78563

বিষয়: সাহিত্য

১৩৩১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375598
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:০০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : কখনই সাধারণ মনে হয় নি। এখনও মনে হয় না। হয়তো ওকে সাধারণ ভাবতে মন চায় না। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
375637
৩১ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:৫২
দীপু সিদ্দিক লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতামত পেয়ে সত্যিই ভালো লাগলো।
375732
০১ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৫
আফরা লিখেছেন : কৈশরের প্রেম ই তো থাকবে কারন এই বয়সের প্রেম শুভপরিণতির দিকে যেতে পারে না আবারো কারন ছেলেটা কর্ম উপযোক্ত হতে হতে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে এটাই স্বভাবিক ।

আর যুবক বয়ষের প্রেম মানে লিখাপড়ার শেষ পর্যায়ে এসে যে প্রেম সেটা বেশীর ভাগ ই শুভ পরিনয়ে রূপ নেয় ------তাই মনে রাখার দরকার পড়ে না ।

তবে আপনার লিখাটা ভাল লেগেছে ।ধন্যবাদ ।

375736
০১ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
দীপু সিদ্দিক লিখেছেন : আপনার কথা খুবই সত্যি। এগুলোইতো মানুষের জীবনের গল্প, তাই না? লেখাটি আপনার ভাললেগেছে জেনে আমি আনন্দিত। Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File