ইসলামিক রিপাবলিক আব বাংলাদেশ আমি চাই

লিখেছেন লিখেছেন বেদূঈন পথিক ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৩২:১৪ সকাল

বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপে গনতন্ত্র সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। একসময়কার সোভিয়েত প্রধান রাশিয়াও এখন গনতান্ত্রিক দেশ। চীন ও গনতান্ত্রিক দেশ। তবে ইউরোপের গনতন্ত্র আর চীনের গনতন্ত্র এক নয়, আবার আমেরিকায় যে সিস্টেমে গনতন্ত্র বিদ্যমান তা রাশিয়ায় অনুসরণ করেনা। ব্রিটিশদের সুবাধে আমাদের গনতন্ত্র অনেকটা ইউরোপিয়ানদের গনতন্ত্রের মত। তেরশ সালের দিকে ইউরোপে (স্পেন ব্যতীত) খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুরা শাসন করত। কিছু লোক তাদের এই শাসন মানলনা। তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করল। একসময় ইউরোপে ব্যাপক বিজ্ঞান চর্চা শুরু হল। মতের পার্থক্যে কারনে ধর্মগুরু আর কিছু স্বাধীনচেতা মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেল। এর বহু পরে পাশ্চাত্য চিন্তাবিদরা একটি প্রথা বাহির করল, যা হল, দেশ শাসন করবে আলাদা সরকার আর গীর্জা কিংবা ধর্মগুরুরা শুধু ধর্ম চর্চা করবেন। তখন থেকেই তারা গনতন্ত্র সিস্টেম বাহির করল যার বর্তমানে দুই রুপ ১। প্রেসিডেন্সিয়াল ২। পার্লামেন্টারি

গনতান্ত্রিক পদ্ধতিকেও এর সমালোচকরা প্রশ্নবিদ্ধ করল। তারা বলল, গনতন্ত্র সবসময় সুফল বয়ে আনেনা। তারা বলল, ধরুন এক স্থানে মোট ১০ জন ব্যাক্তি আছে, যাদের ৮ জনই চোর, সেখানে তো চোরদের কথাই প্রাধান্য পাবে। এই হল গনতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা। আমাদের দেশে মোট ৩০০ আসনে নির্বাচন হয় (সংরক্ষিত আসন বাদে)। এখানে ১৫১ সিট পেলেই কেউ সরকার ঘটন করতে পারবে। এখানে মোট কে কত ভোট পেয়েছে তা মূখ্য না। যে দল ১৪৯ আসন পেয়েছে তারা মোট বেশী পেলেও সরকার ঘটন করতে পারবেনা। এখান কথা হচ্ছে পশ্চিমা গনতান্ত্রিক দেশের সব মানুষের কথা বলেনা, সংখ্যা গরিষ্ঠের কথা বলে।তবে এটি সমালোচনা নয় যেহেতু এর বিকল্প নেই। আবার ধরুন কোন আসনে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন করছেন। তিন জনে ভোট পেল ১০০০০, ১২০০০, ১৫০০০ করে। এখানে যে পনের হাজার ভোট পেল সে নির্বাচিত হবে। যদিও বেশীরভাগ মানুষ (১০০০০+১২০০০) তাকে ভোট দেয়নি। গনতন্ত্রের এইসব সীমাবদ্ধতার জন্যই এলো সমাজতন্ত্র। ১৯১৭ সালে এক বিপ্লবের দ্বারা গঠিত হয় সমাজতন্ত্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাও টেকেনি। বর্তমানে কিউবা কিংবা পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া সমাজতন্ত্র মেনে চলে। বাংলাদেশও পিপলস রিপাবলিক, তবে তা উত্তর কোরিয়ার মতো নয়। এখানে সমাজতন্ত্র আর পশ্চিমা গণতন্ত্র মিলেমিশে একাকার।

বরাবরের মতোই আমাদের দেশের গনতন্ত্রের অবস্থা করুন। রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিরা গনতান্ত্রিক সিস্টেমে নির্বাচিত হয়, এরপর সৈরতান্ত্রিক সিস্টেমে দেশ চালায়। ৭০ সালে যে শেখ মুজিব ৯৮ ভাগ ভোট পেয়েছিল, ৭৫ এ তিনিই সংসদে দাঁড়িয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে বাকশাল কায়েম করেন। এরপর জিয়াউর রহমান সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ যোগ করেন। সংবিধানের শুরুতে আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে শুরু করলেই এটি ইসলামিক হয়না। শুরুতে থাকবে বিসমিল্লাহ আর ভিতরে বিসমিল্লাহ বিরোধি তাও ক্ষমতাবানরা সম্ভব করেছেন। বাংলাদেশ ইসলামিক দেশ নয়, তবুও দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের নিজেদের দিকে টানতে প্রায় এদেশের প্রত্যেকটি দলই চেষ্টা করেছে, এর ফল শ্রুতিতে ইসলাম হয়েছে হাসির পাত্র।

আল্লাহ্‌ সম্পূর্ণ রুপে ইসলামে প্রবেশ করার জন্য বলেছেন (সূরা বাকারা-২০৮)।

বিশ্বে খুব কমই ইসলামিক দেশ আছে, যদিও বহু দেশ মুসলিম অধ্যুষিত। প্রথমেই চলে আসে সৌদী আরবের কথা। কোরআন সৌদী আরবের সংবিধান, সৌদী আরব সম্পর্কে আমার ধারনা খুব বেশী নয়, তবে এটি ইসলামিক রিপাবলিক নয়, এতে রাজতন্ত্র চলে বলেই আমি জানি। কিন্তু কোরআন বলেছে ‘পরামর্শের’ কথা। সূরা “শুরা” নামে একটি সূরাও কোরানে আছে, যার শাব্দিক অর্থ ‘পরামর্শ’।

সূরা আশ শূরার ৩৮ নাম্বার আয়াতে বলা আছে, “যারা নিজেদের রব্বের হুকুম মানে, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের যাবতীয় সামগ্রিক ব্যাপার পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে........................”

সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে বলা আছে সরাসরি মোহাম্মদ সাঃ কে পরামর্শ করে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “হে নবী! আপনার সঙ্গী সাথীদের সাথে অর্থাৎ মুমিন মুসলিমদের সাথে পরামর্শ করুন”।

সৌদী রাজা মনে হয়না এভাবে পরামর্শ করে। যাই হোক একেবারে সঠিকভাবে ইসলামিক দেশ হয়তোবা বর্তমানে নাই, তবে ইরান ইসলামিক রিপাবলিক। বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক (পিপলস রিপাবলিক) দেশ। এদেশ দু’ভাবে ইসলামিক দেশ হতে পারে,

এক। সাধারন গনতন্ত্র মেনে যদি কখনো কোন ইসলামিক দল সংখ্যাগরিষ্ট আসন পায়। তাহলে তারা হয়তো গনভোট ডেকে এই কাজটি করতে পারবে।

দুই। রিভলিউশন এর দ্বারা। যেমন টি হয়েছিল ইরানে, ইসলামিক রিভলিউশন (বিপ্লব)।

প্রথমটি হবে বলে মনে হয়না। কারন এদেশে জামায়াত একমাত্র ধর্মীয় দল যারা সংখ্যাগরিষ্ট আসন আগামী বিশ বছরে পাবে বলে মনে হয়না, যেহেতু তাদের যুদ্ধাপরাধের নামে কু-খ্যাতি আছে। হেফাজতে ইসলাম বর্তমানে সরাসরি মূলধারার রাজনীতি করেনা। তাই শুধু মাত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই তাদের এই কাজ সম্ভব। তবে কথা হল কোন দেশে ইসলামিক বিপ্লবের মতো একটি বিপ্লব হতে গেলে কমপক্ষে ৮০ ভাগ মানুষের সমর্থন লাগবে বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে আওয়ামলীগ এর মত বড় দল হেফাজতের সাথে একমত হবেনা, যেহেতু তারা ইসলামিক কান্ট্রির পক্ষে নয়। আর বিএনপিও শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেবে বলে মনে হয়না। ইসলামিক বিপ্লবের জন্য যেই ধরনের ইসলামিক মনোভাব দরকার (যা ইরানে ছিল), আমাদের দেশের মানুষের মনে তা নেই, যদিও আমরা বিশ্বে ৩য় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ।

তাই নিকট ভবিষ্যতে এদেশের ইসলামিক কান্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে দূরের ভবিষ্যতে এদেশ ইসলামিক দেশ হলে মোটেই অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবেনা। এদেশের বেশীরভাগ মানুষ যদি তখন চায় এদেশ গনতান্ত্রিক দেশ হবে তবে তাই হবে, মানুষ যদি সমাজতন্ত্র চায় তবে তাই হবে, মানুষ যদি ইসলামিক রিপাবলিক চায় তবে তাই হতে বাধ্য। তখন অন্যদের কিছুই বলার থাকবেনা, কারন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই প্রাধান্য পাবে।

সর্বপরি এদেশের গনতন্ত্রের নামে পরিবার তন্ত্র থেকে মুক্তি চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসলামিক রিপাবলিক চাই, আপনি নাও চাইতে পারেন। তবে যেদিন বেশীরভাগ মানুষ ইসলামিক রিপাবলিক চাইবে, সেদিন এদেশ ইসলামিক রিপাবলিক হবে, আর যতদিন বেশীরভাগ চাইবেনা ততদিন ইসলামিক রিপাবলিক হবেনা।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File