চল্লিশোর্ধ সৌদি কুমারী সার্জন বিয়ের অনুমতি পেলেন আদালত থেকে
লিখেছেন লিখেছেন কিংফারুক ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৮:২৩ রাত
সামিয়া (প্রতীকি নাম)। সৌদি আরবের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাওয়া ৪০ লক্ষ কুমারীদের এক জন। পেশায় ডাক্তার, সরকারী চাকরী করেছেন তাও প্রায় ১৮ বছরের বেশী। সম্প্রতি তনি অভিভাবক পরিবর্তনসহ বিয়ের অনুমতি পেয়েছেন সৌদি আদালত থেকে।
মেধাবী সামিয়া ডাক্তারী পড়ার সময় থেকেই তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়। কিন্তু কোন পাত্র, কোন পরিবারই তার পিতার পছন্দ হয় না। ডাক্তারী পাশ করে চাকরী নিলেন, পাত্র আসার পরিমাণ যেন কমে যেতে লাগল। দিনি দিনে মরুভূমির অনেক বালু কণা তার স্থান পরিবর্তন করল, সৌদি আরবের মরুভূমিতে সবুজ বাগান গড়ে উঠল, সবই তার সামনে, কিন্তু তার বিয়ের য়ুল আর ফুটলো না। বয়স বাড়তে বাড়তে ৪৩, আর কত?
ডাক্তার সামিয়া সাহসী হলেন। সন্তর্পণে উকিলের সাথে যোগাযোগ করলেন। একজন উকিল সৌদি সমাজের ধারার বাইরে গিয়ে তার পক্ষে মামলা লড়তে সম্মত হলেন। সামিয়া তার পিতার বিরুদ্ধে (১) অভিভাবকত্বের ক্ষমতার অপব্যবহার, (২) ইচ্ছাকৃত ভাবে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া ও বিয়েতে বাধা প্রদান এবং (৩) মেয়ের বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করলেন। মামলা দায়েরের পর সামিয়াকে তার পিতা ও পিতার পরিবারের আক্রোশ থেকে বাঁচার জন্য আত্মগোপনে যেতে হয়।
Saudi womanসামিয়ার পিতা শপথ নিয়ে আদালতে দাড়িয়েঁ বললেন, তার মেয়ের সব অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট- মেয়ে তার অবাধ্য হতে চায়, তাই মামলা করেছে। মেয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি দাবী করলেন। আদালতে বললেন, মেয়ের টাকা তিনি স্পর্শ করেন না।
সামিয়া আদালতকে জানালেন, তার মাসিক বেতনের ২২,০০০ রিয়াল (৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা) তার পিতা প্রতি মাসে এক চেকে তুলে নিয়ে, মাসের হাত খরচ বাবদ তাকে মাত্র ৩০০ রিয়াল (৬ হাজার টাকা) দেন। বিষয়টি পরীক্ষার জন্য তার স্যালারী এ্যাকাউন্টের ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট পরীক্ষার আর্জি জানালেন সামিয়া। আদালত তার আর্জি গ্রহণ করে ষ্টেটমেন্ট দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নির্দেশ দিলেন।
ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট আসার পর আদালত দেখলেন সামিয়ার চাকরী জীবনের প্রথম মাস থেকেই বেতনের পুরো টাকা তার পিতা এক চেকে তুলে নেন। অদালত তার পিতার আর কোন কথা শুনতে রাজী হল না।
মামলার রায় হ’ল- সামিয়ার পিতা তার অভিভাবকত্ব ছেড়ে দিবেন, পরিবর্তে তার চাচা তার অভিভাবক হবেন এবং সামিয়া তার পছন্দ মত বিয়ে করতে পারবেন, নতুন অভিভাবক চাচা বিয়েতে কোন রকম অমত করবেন না বা বাধা দিবেন না। আদালত সামিয়ার চাচাকে আদালতে ডেকে উভয়পক্ষের উকিলদের সামনে তার নতুন দায়িত্ব ব্যাখ্যাসহ বুঝিয়ে দিলেন।
Saudi womenসামিয়া তার মামলার রায় প্রসঙ্গে বলেন, “আমি আমার ছোট বেলার স্বপ্নটি এখনও আঁকড়ে ধরে আছি যে, আমার নিজের একটি পরিবার হবে। আমার বিশেষ পুরুষটি, যিনি আমাকে বিয়ে করতে আগ্রহী, তিনিও আমার এই কঠিন সংগ্রামে আমার পাশে আছেন এবং অনেক সাহসের সাথে পরিশ্রম করেছেন। সব চেয়ে বড় কথা তিনি এখনও আমার অপেক্ষায় আছেন।”
সামিয়া বলেন, “আমি স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে আছি। আমার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত এ আলো আমৃত্যু জ্বলতে থাকবে।”
মিসেস মামুন নামে একজন সৌদি নারী বলেন, “সৌদি অরবে এই ধরণের মামলায় জেতা খুবই কঠিন, কারণ এ ক্ষেত্রে কী কী বিষয় প্রমাণ করতে হবে সে বিষয়ে আইনে কোন পরিস্কার বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এই ধরণের মামলা গুলোর সিদ্ধান্ত বা রায়ের ক্ষেত্রে বিচারকদের একচ্ছত্র ক্ষমতা। ফলে পুরো বিষয়টা নির্ভর করে কোন বিচারকের আদালতে মামলাটির বিচার হবে এবং কোন বিচারক মামলাটির রায় দেবেন।”
মিসেস মামুন আরও বলেন, “জনমতের কথা যদি বলেন, তাহলে দেখবেন এই ধরণের মেয়েদের প্রতি, তাদের সমস্যার প্রতি এবং ইদানিং তাদের মামলার প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতি রয়েছে।”
Soudi single womenএই মামলাটির রায়ের পর এক মাসের মধ্যে একই প্রকার অভিবাবকত্ব সংক্রান্ত অভিযোগ সমাধানে কয়েক ডজন মামলা আদালতে দাখিল হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এই ধরণের সমস্যায় যারা ভুগছেন সেই সব কুমারীদের প্রতি সৌদি সমাজের সহানুভূতি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এবং তাদের দাবী ও মামলার প্রতি জনসমর্থনও বাড়ছে।
যদিও তার পরিবারের আক্রোশ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সামিয়াকে এখনও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। তিনি সরকারী চাকরী ছেড়ে দিয়ে কম বেতনে একটি বেসরকারী চাকরী করছেন, যে কর্মস্থলের ঠিকানা তার পিতা বা রুষ্ট আত্মীয়-স্বজনরা জানেন না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন