বাংলাদেশের ধর্মমুক্ত জীবন ও কিশোরী ঐশী
লিখেছেন লিখেছেন কিংফারুক ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:১৮:১১ রাত
ভৌগোলিক কারণে আমাদের জীবনে মাটির অনেক প্রভাব আছে। আবার মুসলমান হওয়ার কারণেও ধর্ম আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বড় একটা অংশজুড়ে আছে। মানি বা না মানি, অনুশীলন বা চর্চা করি বা না করি, ধর্মকে আমরা ইচ্ছা করলেই জীবন থেকে বাদ দিতে পারি না। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ধর্ম বা ইসলামের উপস্থিতি খুবই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। লাখ লাখ মসজিদ ও মাদরাসা রয়েছে, মসজিদের মিনারে নিয়মিত আজান হয়। আজান শুনে কিছু মানুষ কর্মস্থল ফেলে মসজিদের দিকে দৌড়ে যায়। যারা জামাতে নামাজ পড়েন না তারাও ঘরে বা অফিসে নামাজ পড়েন। যেসব মুসলমান নিয়মিত রুটিন করে ধর্মচর্চা করেন না তারাও নিজ ধর্মের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। যারা নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মহীন বলে দাবি করেন তারাও ধর্মকে সম্মান করেন। তাদের অনেকেই, মানে ৯০ ভাগই সরাসরি বা প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন না। আরবি বা মুসলমান নামধারী অনেকেই প্রকাশ্যে ধর্মের বিরোধিতা করেন। এরা নিজেদের জ্ঞানী-গুণী বা মহাপ্রগতিশীল বলে জাহির করেন। তারা নাকি খুবই আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। এদের সংখ্যা খুবই কম। তবে তারা খুবই প্রভাবশালী। সরকারের কলকাঠি তারাই নাড়েন।
শুরুতেই চলমান বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার ওপর একবিন্দু আলোকপাত করলাম। ঐশী নামটা খুবই সুন্দর ও বেশ অর্থবহ। এক হাজারে এমন একটি নাম পাওয়া যায় না। নাম দেখে পরিবারের ঐতিহ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ভাইয়ের নামও সুন্দর। একজন ঐশী, আরেকজন ঐহী। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস নাম দুটি নিয়ে। যে মুরব্বিরা নাম রেখেছিলেন তারা নিশ্চয়ই এমন একটি দিনের কথা ভাবেননি। এক গরিব পরিবারের দুটি মেয়ের নাম জানি আমি। একজনের নাম জান্নাতুন নাঈম, আরেকজনের নাম জান্নাতুল ফিরদাউস। জানতে চেয়েছিলাম কে নাম রেখেছেন। উত্তর পেলাম—নানা। নানা আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। আমাদের সমাজের বহু শিক্ষিত পরিবারে এমন সুন্দর নাম রাখতে পারে না বা এ ধরনের নাম পছন্দ করে না। ইদানীং কিছু কিছু ফার্সি নাম শুনতে পাচ্ছি। অনেকেই না বুঝে ফ্যাশন করে রাখেন। আবার এমন নামও অনেকেই রাখেন যার কোনো মানে হয় না। যেমন সীমান্ত, খোকন। আবার পার্থ অম্লান। বিশেষ করে মিডিয়াতে যারা কাজ করেন তারা এ ধরনের নাম রাখেন। প্রসঙ্গত আমার এক বন্ধুর গল্প মনে পড়ছে। তার ছেলেমেয়েদের নাম শুনে বুঝা যায় না তারা হিন্দু না মুসলমান। কোনো এক অপশনাল বা ঐচ্ছিক ছুটিতে ওরা স্কুলে গেলে শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন, ওরা কেন স্কুলে এসেছে, ওদের তো ছুটি। তখন বন্ধুর সন্তানেরা বলেছিল তারা মুসলমান। অনেকেই খাঁটি বাংলা রাখার কারণে এমন বিভ্রাট তৈরি হয়। আমার পরিচিত এক সাংবাদিকের নাম যোশেফ শতাব্দী। আপনারাই বলুন ইনি কে? তার ধর্ম পরিচয় কী?
আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা নাম পরিবর্তন করে নতুন একটা নাম গ্রহণের রেওয়াজ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা হিন্দু নাম করতেন। যেমন আমার বন্ধু কবি আবদুল মান্নানের কবিনাম ছিল সমুদ্র গুপ্ত। আরেক সাংবাদিক বন্ধু সিরাজুল ইসলামের নাম ছিল আজিজ মিসির। আমাদের আশেপাশে অনেকেরই এ ধরনের নাম ছিল। ইদানীং এ প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে। নাম বদলাতে হয়নি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। শুনেছি, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক ১৯৪৬ সালে কলকাতায় একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। নাম ছিল ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’। এ ছবির নায়ক ছিলেন ফতেহ লোহানী। আর পরিচালকের নাম ছিল ওবায়দুল হক সাহেবের। সে সময়ে নাকি তিনি আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সিনেমাটি তৈরি করেছিলেন। সে সময়ে কলকাতার সাম্প্রদায়িক অবস্থা ভালো ছিল না। ফলে হিন্দুরা হলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। কারণ সিনেমাটি মুসলমানের তৈরি। পরে তিনি নাম বদল করে নিজের নাম রেখেছিলেন হিমাদ্রি চৌধুরী ও ফতেহ লোহানীর নাম রেখেছিলেন কিরণ কুমার। তখন মুম্বাইতেও এ অবস্থা বিরাজ করত। তাই দীলিপ কুমার হয়েছিলেন ইউসুফ খান। কিন্তু রাজকাপুরকে নাম বদলাতে হয়নি। এখন মুম্বাইয়ের মুসলমান নায়কদের নাম বদলাতে হয় না। আমাদের ঢাকায় নাম বদলানোর কালচার এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গটা উঠেছে ঐশীর নাম নিয়ে। নামটা সত্যিই ভালো। কিন্তু ভালো নামের জন্য ভালো পরিবেশ ও শিক্ষা দরকার। ভালো সমাজ ও ভালো দেশ দরকার। শিক্ষা, কর্ম ও পরিস্থিতি পরিবেশের কারণে ভালো নামও মন্দ নামে পরিণত হয়। যেমন, আবুল হাকামের নাম আবু জেহেলে পরিণত হয়েছে। বাঙালিরা আবার বুঝতে না পারার কারণে ভালো শব্দকে মন্দ হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন অথর্ব। এই শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অথর্ব বেদের রচয়িতা হলেন অথর্ব মুনি। বাঙালিদের কাছে এই শব্দের অর্থ অকেজো। কোনো কাজের নয়। আবার মন্দ কাজ বা বেঈমানির জন্য মীরজাফরের নাম নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে গেছে। আবার রাবণের ভাই বিভীষণ। রাজ্যলোভে রামের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। তাই বলা হয় ঘরের শত্রু বিভীষণ। জগতের সব ভাষাতেই এমন শব্দ আছে। কিন্তু জ্ঞানী মানুষকে কেউ অথর্ব বলে না।
কিন্তু ঐশী এমন করল কেন? আমার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে গেছে। ঐশী কি এতই বেপরোয়া ছিল যে, স্বাধীন অবাধ জীবন যাপনের জন্য শেষ পর্যন্ত মা-বাবাকে হত্যা করবে? তাও আবার রাত ১১টায় কফির সঙ্গে ৩০টা করে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে। মাকে আগেই ৩০টা ঘুমের বড়ি/ট্যাবলেট মেশানো কফি খাওয়ানো হয়েছে। পরে বাবাকে। মায়ের ঘুম ভাঙছে না দেখে বাবা মাকে কোলে তুলে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাবার মনে একবারও প্রশ্ন জাগেনি এত গভীর ঘুম কেন? এক কাপ/মগ কফির সঙ্গে ৩০টা ট্যাবলেট কি কয়েক মিনিটের মধ্যেই গলে গেল? মাকে ১১ বার স্ট্যাব বা ছুরির আঘাত করা হয়েছে। মার ঘুম ভাঙেনি। এমন কি নড়ে-চড়েওনি। একবার দুইবার করে ১১বার আঘাত করা হয়েছে। মা টুঁ শব্দটিও করেনি। মায়ের ঘুম ভাঙেনি। বিছানায় রক্ত, কাপড়-চোপড়ে রক্ত। ঐশীর কাপড়ে রক্ত লাগেনি? তাহলে রক্তমাখা ঐশীর পরণের কাপড়ই-বা কোথায় গেল? একেবারে সোজা হিসাব। ঐশী স্বীকার করল, সে বাবা-মাকে খুন করেছে আর অমনি পুলিশ ঐশীর জীবনধারা প্রকাশ করতে লাগল মিডিয়ার কাছে। বিচারে ঐশীর শাস্তি হয়ে গেলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল? না, আমি তো মনে করি সমাধান হয়নি। দেশবাসীর মনে আরও হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন একটি নিষ্ঠুর ঘটনার প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
সবাই শুধু বলে চলেছেন, ঐশী বখে যাওয়া মা-বাবার খুবই আদরের মেয়ে। সে নেশা করত, গভীর রাতে বাড়ি ফিরত, বাবা-মার শাসন মানত না। নিজের ইচ্ছামত চলত। এমনকি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বাসাতেও আড্ডা মারত। কতদিন ধরে ঐশী এ ধারার জীবন যাপন করছে? মনে রাখতে হবে, ঐশীর বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি জানেন অপরাধীকে শাস্তি দিতে হয়। তাহলে তিনি কি মেয়ের চলাফেরা, আচার-ব্যবহারের পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করেননি? খবরের কাগজে এসেছে, বাবা-মা মেয়েকে শাসন করতে গেছেন বলেই মেয়ে খেপে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কোথাও কোনো সাক্ষী নেই, মেয়ে একাই এ বিশাল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। শক্তিশালী একজন ঘুমন্ত পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে দুটি ঘা দিল আর তিনি একটু নড়াচড়াও করলেন না। গল্পটা হলো, ঘুমের বড়ি খেয়ে তিনি একেবারেই অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। ধারাল ছুরির ঘায়েও তিনি টের পাননি। আমাদের সাংবাদিকরা এখন ‘এম্বেডেড’। শিশুদের যেমন ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতে হয় তেমনি তাদেরও খবর খাইয়ে দিতে হয়। যা খাওয়ানো হয় তাই তারা জনগণকে জানিয়ে দেন। এখন তো র্যাব ও পুলিশের বিরাট মিডিয়া সেন্টার আছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে এখন থানার এসআইও জাতির উদ্দেশে বাণী পেশ করেন। বিচার হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ধৃত ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয় অপরাধী হিসেবে। আর মিডিয়া বিনাবাক্যে বিনাদ্বিধায় ওসব খবর দেখায় ও ছাপায়। একসময় এ দেশের মিডিয়া এ রকম ছিল না।
ঐশীর বিষয়টি গভীরভাবে স্টাডি ও গবেষণা করা দরকার। মনোবিজ্ঞানীরা হয়তো বলবেন, ওই বয়সের ছেলে বা মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে এ রকম করতে পারে। কিন্তু আমি বলব, দারোগা বা ইন্সপেক্টর সাহেব কেমন মানুষ ছিলেন, তার ছাত্রজীবন বা পুলিশ জীবন কেমন ছিল? এসব পুলিশ বিভাগের জানার কথা। আমরা শুনেছি বা খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে, দারোগা সাহেবের পারিবারিক জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল না। তাহলে কী নিয়ে বিরোধ ছিল? অধিক টাকা কামানোর বিরোধ, না স্ত্রী উচ্চ পরিবারের মেয়ে, তাই বনিবনা হচ্ছিল না। খবরের কাগজে একথাও ছাপা হয়েছে যে, ঐশীকে হাত-খরচের জন্য মাসে এক লাখ টাকা দেয়া হতো। টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়ার পর সে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। মা নাকি বাবার তুলনায় একটু বেশি কড়া ছিলেন। ফলে মায়ের ওপর বেশি রাগ ছিল এবং মাকে ১১বার ছুরির আঘাত করা হয়েছে। এসব কিন্তু ঐশী তদন্তকারী পুলিশ সাহেবদের জানিয়েছে। সময় পার হচ্ছে, আর ঐশীও ঘোর কাটিয়ে স্থিতু হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে ঐশী আদালতে জানিয়েছে যে, তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। তাই ১৬৪ ধারায় ঐশী যে জবানবন্দি দিয়েছে তা প্রত্যাহার করতে চায়। ঐশী এ ধরনের কিছু একটা করতে পারে তা নিশ্চয়ই পুলিশ সাহেবদের জানার কথা।
ঐশী ছাড়া অন্যদের কথা মিডিয়াতে আমরা তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাটায় ঐশী ছাড়া আর কেউ নেই। সুমি কি বলেছে তাও মিডিয়াতে তেমন কিছু আসছে না। বাকি যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কথাও তেমন কিছু শুনা বা জানা যাচ্ছে না। এমনকি ঐহীর কথাও শুনা যাচ্ছে না। সাগর-রুনির সন্তান মেঘের কত সাক্ষাত্কার টিভি বা খবরের কাগজে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ঐশীর ব্যাপারে মিডিয়া কিছুটা নির্লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। ঐহী যে খালার বাসায় আছে সেই খালা-খালু বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছেন তাও জানা দরকার। তারা তো ঐশী এবং তার বাবা-মাকে ভালো করেই জানেন। ঐশীর চাচা যিনি ঐশীর জামিনের জন্য চেষ্টা করছেন তার কোনো খোঁজ-খবর আমরা জানতে পারছি না। ঐশীদের পরিবারের সঙ্গে চাচাদের সম্পর্ক কেমন ছিল তা তো পুলিশ সাহেবরা বের করতে পারেন। আমরা জানতে পেরেছি, ঐশীর বাবা গোয়েন্দা বিভাগে রাজনৈতিক শাখায় কাজ করতেন। যখন খুন হয়েছেন তখন তিনি কোন ফাইলটি নিয়ে কাজ করছিলেন তা তো তার সহকর্মীদের জানার কথা। তিনি কি এমন কোনো রাজনৈতিক ফাইল নিয়ে কাজ করছিলেন যা তার জীবনের ওপর হুমকি ছিল। সে রাতে তিনি বাসায় ফিরেছেন রাত এগারটার দিকে। অত রাতে কি তিনি নিয়মিত ফিরতেন? না শুধু সেদিনই দেরিতে বাসায় ফিরেছেন। তিনি কি মদ পান করতেন? বাসায় কি মদ পান করতেন? এসব প্রশ্ন এক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। আমাদের ক্রাইম রিপোর্টাররা এখনও পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেননি।
অপরদিকে মাসে এক লাখ টাকা মেয়ের হাত-খরচ দেয়ার মতো কি ইন্সপেক্টর সাহেবের অবস্থা ছিল? নিশ্চয়ই ছিল না। তাহলে শুরুতেই কে বা কারা এ খবরটি প্রচার করেছে? এখনই-বা এ ব্যাপারে মিডিয়া চুপচাপ কেন?
এরই মধ্যে ঐশীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের সমাজ জীবন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। আমাদের সংসারগুলোতে সংসার বাঁধন দিন দিন ঢিলা হতে শুরু করেছে। ধর্মীয় চেতনা এখন আর কাজ করে না। বাবা-মা ধর্মচর্চা করেন না। তাই তারা সন্তানদের এ ব্যাপারে কিছু বলেন না বা বলতে সাহস করেন না। এমনকি সন্তানরা কে কোথায় যাচ্ছে বা কি করছে সে খবরও আজকাল রাখেন না। ধনী পরিবারের জীবন হয়ে গেছে ক্লাবভিত্তিক। মদ পান সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে। বারো-তের রুমের বাড়িগুলোতে চার-পাঁচটা করে ড্রয়িংরুম। বেগম সাহেব কোথায় আছেন বা যাচ্ছেন তা সাহেব জানেন না। জানলেও সাহেব চুপ করে থাকেন সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে। বাড়িতে সবার জন্যই আলাদা আলাদা ড্রয়িংরুম। ব্যক্তিস্বাধীনতার যুগে কেউ কারও প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করেন না। ছেলেরা মাথার চুল লম্বা রাখে, ঝুঁটি বাঁধে। নানা দাড়ির ফ্যাশন করে। দিনে বা রাতে শিশা ক্লাবে যায়। অথবা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে গাড়িতে লংড্রাইভে যাচ্ছে। মেয়ের অবস্থাও একই রকম। জিন্সের টাইট প্যান্ট পরে, টি-শার্ট বা শার্ট পরে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে। রাতের বেলায় রাস্তায় পুলিশ ধরলেই বলে আমি অমুকের মেয়ে বা ছেলে। তখন পুলিশ থ্যাঙ্ক ইউ স্যার বা মেডাম বলে ছেড়ে দেয়।
এর প্রধান কারণ শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত পরিবারগুলোতে এখন ধর্মচর্চা নেই। তারা নাকি সবাই সেক্যুলার বা ধর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যারা ধর্মচর্চা করেন তাদের মৌলবাদী বা জঙ্গি বলে গালি দেয় বা প্রতিক্রিয়াশীল বলে। তাই জানতে ইচ্ছে করে ঐশীর পরিবার ধর্মমুক্ত বা ধর্মহীন অতি আধুনিক পরিবারে পরিণত হয়েছিল কিনা। আমার কেন যেন বিশ্বাস হয় না ঐশী এমন কাজটি করেছে। যদি করেও থাকে তার জন্য কে দায়ী? নিজের পরিবার, না সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থা? আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমার মত হচ্ছে, ঐশীর ঘটনার গভীর তদন্ত ও বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন