বছরেই ‘অনার কিলিং
লিখেছেন লিখেছেন কিংফারুক ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৩৬:৫৭ রাত
এ বছরের প্রথম নয় মাসেই পাকিস্তানে ৬৭৫ জনকে বর্বরোচিত ‘অনার কিলিং’ বা ‘সম্মানজনক মৃত্যু’র নামে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সূত্র দিয়ে লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা আজ এ সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার সংগঠনগুলো পাকিস্তানে মহিলা ও নারী শিশুদের বাচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায়।
একটি পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে যে, এই মুসলিম রাষ্ট্রের রক্ষণশীল, প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা খুবই বেড়ে গেছে। এখানে ধর্ষণের শিকার নারীদেরকে শরিয়া আইন অনুসারে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মাতব্বরগণ সালিশে মৃত্যুদণ্ড দেন, আর হত্যাকারীরা খুব সহজেই আদালতে ‘ব্লাড মানি’ প্রদান করে আইনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।
হিউম্যান রাইটস্ কমিশন অব পাকিস্তান-এর চেয়ারপারসন জোহরা ইউসুফ বলেন, এটাকে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ঘটনার অজুহাত দিয়ে অনেক বেশি ঘটনাই পুলিশ নিষ্পত্তি করে দেয়। তিনি বলেন, “এটা পিতৃতান্ত্রিক আর সামন্তবাদী সমাজের অন্যতম একটা নিদর্শন। সরকার ২০০৬ সালে এই ঘটনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটা আইন করেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখন আরো বেশি ঘটনা ঘটছে।” তিনি আরও বলেন, “এই সমাজে নারীদের অবস্থান হল যে, তারা যাই করুক তা হলো তার পরিবারের সম্মানের প্রতিফলন। আর এই হত্যাকাণ্ডের সংগঠকদের প্রতি সবসময় সমাজের একটা সহানুভূতি কাজ করে।
এই হত্যাকাণ্ডে ৭১ জন অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের নারী শিশু রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মানবাধিকার সংস্থা তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ততদিনে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৫০ জন নারীকে ‘অবৈধ সম্পর্ক’ স্থাপনের দায়ে হত্যা করা হয়েছে। আর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করার দায়ে হত্যা করা হয়েছে ১২৯ জনকে।
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, কিছু দোষী নারীকে হত্যার আগে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করা হয়েছে। কমপক্ষে ১৯ জন নারীকে তাদের পুত্র সন্তান কর্তৃক, ৪৯ জনকে তাদের পিতা কর্তৃক এবং ১৬৯ জন নারীকে তাদের স্বামী কর্তৃক হত্যা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার অভিযুক্ত পক্ষের কাছ থেকে ‘দিয়াত’ বা ‘ব্লাড মানি’ গ্রহণ করতে সম্মত হলে অনেক ঘটনারই হত্যা ছাড়া নিষ্পত্তি হয়েছে।
মানবাধিকারবাদী আন্দোলনকারীরা বলেন যে, গত সপ্তাহে পাশ হওয়া দুটি আইনের কারণে এখন আন্দোলনকে বেগবান করতে আরও উত্সাহী হয়েছেন তারা। আইন দুটি হচ্ছে এসিড সন্ত্রাসের শাস্তিকে আরো কঠোর করা এবং উপজাতীয় বিবাদ নিরসনে শিশু কন্যাকে বিবাহ নিষিদ্ধকরণ। কিন্তু এটা কার্যকর করতে এখনও বহু পথ যেতে হবে।
গত মঙ্গলবার মুলতান হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার ১৮ বছর বয়সী সালমা বিবি’র মুখাবয়ব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন। তার স্বামী তার নাক কেটে দেওয়ার পর তাকে এখানে চিকিত্সার জন্য আনা হয়েছে। সে অন্য কোন পুরুষের সাথে পালিয়ে যেতে পারে এই সন্দেহে তার স্বামী একাজ করেছে বলে সে তার আত্মীয়দের জানায়।
ইতোপূর্বে মুসলিম নারীদের অঙ্গচ্ছেদের বহু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবানদের শরিয়া আইন বাস্তবায়নের শিকার আয়শা নামের ১৮ বছরের আরেক কিশোরীর নাক কাটা হয়েছিল, যা ২৯ জুলাই ২০১০ তারিখে আমেরিকার প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ সংবাদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃস্টি করেছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন