এক চুলও নড়বো না:হাসিনা
লিখেছেন লিখেছেন কিংফারুক ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:০৮:৩৫ সন্ধ্যা
স্টাফ রিপোর্টার: সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, এ অবস্থান থেকে তিনি এক চুলও নড়বেন না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ কার্যকর থাকবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন জবাব না দিয়ে তিনি বলেছেন, সবকিছুই হবে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া হবে- জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী এমন তথ্য জানালেও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নির্বাচন পর্যন্ত সংসদ কার্যকর থাকবে। জরুরি প্রয়োজন বা দুর্যোগের পরিস্থিতি এলে প্রেসিডেন্ট সংসদ অধিবেশন ডাকতে পারবেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তার এ অবস্থানের কথা জানালেন।
পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য আবিষ্কারের বিষয়টি দেশবাসীকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী এ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও তার পুরো বক্তব্যে ছিল সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ও আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ। প্রশ্নোত্তর পর্বেও তিনি চলমান রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এবং নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যা হবে সংবিধান অনুযায়ী হবে। এক চুলও নড়বো না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে নির্বাচনকালে সময়ে কোন সঙ্কট হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন সঙ্কট হবে না। তারা (বিরোধী দল) চাইলে সঙ্কট তৈরি করতে পারে। নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় আমাদের এখানেও সেভাবেই হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আপনি দায়িত্ব পালন করবেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব বিষয়েই সংবিধান অনুসরণ করা হবে।
এবার আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হলে আগামীতে বিএনপি’র অধীনে কোন নির্বাচন মেনে নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সময়ে কোন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয় না, এটি প্রমাণিত। তারপরও একবার না একবার তো শুরু করতে হবে। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকবে। আপনাদের মধ্যেই দোদুল্যমানতা আছে। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নেই। আমি কি ভোট চুরি করতে যাবো নাকি? জনগণ যাকে চাইবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে, কিন্তু দল করতে পারে না, নির্বাচন করতে পারে না, মানুষের কাছে ভোট চাইতে পারে না তারাই চায় এ ধরনের সরকার আসুক। এতে তারা হয়তো মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবে। তাদের জন্য যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, খেসারত নিতে না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে আবারও সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সংবিধান সংশোধন করতে হবে কেন? আপনারা কি মার্শাল ল’ চান? এ সংবিধান তো হাওয়া থেকে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পেয়েছি। উচ্চ আদালতের রায়ের পর সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের জন্য জনগণ আমাদের ভোটও দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে, হবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে প্রার্থিতা বাতিল-সংক্রান্ত ধারা বাতিল করে কমিশন বিতর্কিত হয়েছে- এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী কার্যত নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, অনেক সময় তারা প্রার্থিতা বাতিল করে কিন্তু কোর্টে গিয়ে পেয়ে যায়। তবে এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। বিষয়টি তাদের কাছ থেকেই পরিষ্কার করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (মিডিয়া) ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত সময়ে ৬৩৯৪১ জন জনপ্রনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কোন নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারেননি। আমরা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাস করি, সেটাই প্রমাণ হয়েছে।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা হেরে গেছেন। এখানে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এ জয়ী প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের নেতারা বলছেন এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। অথচ নির্বাচন কমিশন যে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে তা প্রমাণ হয়েছে। বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক দাবি করে। কোর্টের রায়ও মানে না। এ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে কোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আদালত সংসদের ওপর ভার দিয়েছিল। সংসদ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। এ নিয়ে জনগণের জীবনে অশান্তি টেনে আনা কিসের জন্য? দেশ যদি পিছিয়ে থাকতো, উন্নয়ন না হতো তাহলে কথা ছিল। কিন্তু সরকারের সময়ে দেশ যথেষ্ট এগিয়েছে। সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেন, সরকার প্রতিটি নির্বাচনী ওয়াদা পালন করছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। এবারই প্রথম রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি বরং কমিয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে এনেছি। বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের বিদেশে পাচার করা সম্পদ আমরা ফিরিয়ে এনেছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তাই করছি। দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করতে পেরেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গ্রামগঞ্জে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে।
দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার ছিল। সেই সমস্যার সমাধান আমরা করতে পেরেছি। তবে লোডশেডিং যাতে দিনে দু’বার থাকে সে নির্দেশ আমার ছিল যাতে মানুষ অতীতের কথা না ভোলে। হয়তো সামনে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে হবে যাতে মানুষ বোঝে।
তিনি বলেন, সরকার এত উন্নয়ন করলেও অনেকে আবার তা দেখে না। দেখতে চায় না। উন্নয়নের মধ্যেও কিন্তু খুঁজতে যান। কারণ উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করেছে তো!
সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হল-মার্কের দুর্নীতি আমরা সৃষ্টি করিনি। এগুলো বিএনপি’র সময়ের। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু ভাবখানা এমন, আমরা চুরি ধরতে গিয়ে নিজেরাই চোর হয়ে গেছি।
গণমাধ্যমের বিষয়ে নিজের দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকগুলো টিভি চ্যানেল আমরা দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের আচরণে মনে হয় যেন আমরা দিলাম এবং আমরাই শত্রু হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, টেলিভিশন বাড়ায় টকশোর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে টক টক কথা বলে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়।
সাংবাদিক হত্যার বিচারের উদ্যোগ এবং সাংবাদিকদের কল্যাণে নেয়া সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা বিপদে পড়লে কেউ তাদের পাশে থাকে না। অবশ্য আমি থাকলে থাকি। যে যতই আমার বিরুদ্ধে লিখুক। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবো। নিজস্ব অর্থায়নেই কাজ শুরু করেছি।
বিষয়: বিবিধ
১০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন