মিসরে সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড়
লিখেছেন লিখেছেন কিংফারুক ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:২৩:৪০ সন্ধ্যা
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি মুরসিপন্থীদের।মিসরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী গতকাল বুধবার ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযানের মাধ্যমে রাজধানী কায়রোর দুটি অবস্থান থেকে মুরসির সমর্থকদের সরিয়ে দিয়েছে। খুব সকালে কায়রোর ওই অভিযানের পর রাজধানীর বাইরেও ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য শহরেও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ অভিযানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে মুরসিপন্থীরা দাবি করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক।
বিবিসির খবরে জানানো হয়, সরকার নিহতের সংখ্যা ২৩৫ জন বলে নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ৪৩ জন।
হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এল বারাদি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে রাজধানী কায়রো ও ১৩টি প্রদেশে। আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ বলবত্ ছিল। এদিকে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিসরের কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেওয়ায় বান কি মুন মর্মাহত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন মিসরে সহিংসতার ঘটনায় কড়া নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকালের অভিযানকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে সহিংসতার ঘটনাকে দেশটির রাজনৈতিক সংস্কার উদ্যোগের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি ধাক্কা বলে বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সহিংসতায় কোনো সমাধান আসবে না। সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার রদবদল ও গণতন্ত্রের জন্য সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভেলে মিসরে সহিংসতার ঘটনাকে খুব বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইপে এরদোয়ান সহিংসতাকে গণতন্ত্রে ফেরার আশার ওপর মারাত্মক আঘাত বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হাজেম আল বেবলাউয়ি মুরসির সমর্থকদের সরাতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই করে গতকাল টেলিভিশনে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, অভিযান চালানো ছাড়া কর্তৃপক্ষের আর কোনো বিকল্প ছিল না। তবে প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, যথাসম্ভব জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে।
গত ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকে তাঁকে পুনর্বহালের দাবিতে কায়রোর রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে এবং কায়রোর কেন্দ্রস্থলে আল-নাহদা স্কয়ারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিল ব্রাদারহুডের কর্মী-সমর্থকেরা। তাদের হটাতে এর আগে গত ২৭ জুলাই রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৮০ জন নিহত হয়। এর পরও সরকার সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি।
গতকাল খুব সকালে রাব্বা আল-আদাবিয়া ও নাহদা স্কয়ার ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। প্রথমে তারা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল দ্রুত তুলে নিয়ে উল্টো তাদের দিকে ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। এরপরই দুই পক্ষে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি।
একপর্যায়ে নাহদা স্কয়ার থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানকার অস্থায়ী তাঁবুগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর অন্যান্য অংশেও। বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রাব্বা আল-আদাবিয়া ও আল-নাহদা স্কয়ার এখন পুরোপুরি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
সরকারি বাহিনীর এই অভিযানকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে ব্রাদারহুড দাবি করেছে, এতে দুই হাজার মানুষ নিহত ও পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায় দলটি।
বিষয়: বিবিধ
১০০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন