পর্নোগ্রাফি, কামসূত্র আর বিকৃত যৌনাচার যেভাবে পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ান ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০১:০৮:৪৯ দুপুর

​​পশ্চিমা ইন্টেলেকচুয়ালরা এই সমাজটাকে "হাইপার সেক্সুয়ালাইজড" সমাজ হিসেবে বলে থাকেন। চিন্তা করে দেখুন, টুয়েন্টি-টুয়েন্টি খেলা দেখতে বসলেন, তাতে কমার্শিয়াল দেখছেন মোবাইল হ্যান্ডসেটের, তাতেও নারী-পুরুষ চুম্বনদৃশ্য। আপনি যদি টেলিভিশন থেকে দূরেও থাকেন, বিলবোর্ডে, পোস্টারে, ফেসবুকের অ্যাডগুলোতে আপনি যথেষ্টই যৌনতা দেখতে পাবেন। পুরুষ-নারীর কামকে জাগিয়ে এসব পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়। পশ্চিম নিয়ন্ত্রিত বিকৃত সংস্কৃতি ও ভারতের নির্লজ্জ-অশ্লীল সংস্কৃতি প্রভাবিত বাংলাদেশীও সংস্কৃতিও এখন বিকৃত, অসুস্থ হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমারা নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে তুলে এনেছিলো অনেক আগেই। যদিও গত কয়েক শতাব্দী আগেও যে যৌনতার বিষয়গুলো এতটা প্রকট ছিলো না তা আমাদের স্বাভাবিক জ্ঞান ও চোখেই আমরা জানি। নারীর মাঝে জাগিয়ে তুলেছে এমন চিন্তা যে টিকে থাকতে হলে পুরুষের কাছে শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় হতেই হবে... তারাও সেই চেষ্টা করেছে উন্মাদের মতন। পুরুষের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে নারীর শারীরিক সৌন্দর্য। ফলে, সেই পুরুষ-নারীদের কাছে ব্যক্তি জীবনে, বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক শারীরিক আনন্দগুলো আর সাধারণ লাগে না। তখন তারা কুরুচিপূর্ণ উপায় বের করে যৌনতাকে মেটাতে চায়। শরীরের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ব্যবহার করেও তাদের খায়েশ মেটে না। তারা পর্নোগ্রাফিতে এইসব বিকৃত যৌনাচারকে সহজ করে আনতে চায়, কেননা স্বাভাবিক কোন কিছুই তাদের কাছে আর স্বাভাবিক নেই। যে শারীরিক বিষয়গুলো মানুষকে তৃপ্তি দেয়ার কথা, সেগুলোই তাদেরকে নিকৃষ্ট বিকৃত জন্তুতে পরিণত করে। শেষ পর্যন্ত তারা নারী-পুরুষ ছেড়ে সমলিঙ্গে আনন্দ খুঁজে, পশুদেরকেও ছাড়ে না (আস্তাগফিরুল্লাহ)

এসব সমাজ থেকে মুসলিম সমাজের মাঝে অনেক ধারণা যেভাবেই হোক চলে এসেছে; ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে কিছু বিষয় জায়েজ/নাজায়েজ কিনা এমন প্রশ্ন মুসলিম স্কলারদেরকে অবাক করে দেয়। বছরের পর বছর ধরে কামসূত্র পাঠ, পর্নোগ্রাফিক গল্প, চটি গল্প পড়তে ওয়েবসাইটে ঢুঁ দেয়া, পর্নোগ্রাফিক মুভিতে বিকৃত ভঙ্গিমায় ও বিকৃত নিষিদ্ধ উপায়ে কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার দেখে দেখে পুরুষগুলোর মনে (ইদানিং নারীদেরও) গেঁথে যায়। সরলমনা স্ত্রীরা তাদের স্বামীর পাশবিক আচরণ টের পান বিয়ের পরে অন্তরঙ্গতায় এসে। সমাজে অজস্র পরিবারে সুখ পালিয়েছে, অনেক নারী নীরবে কেঁদেছেন, কাঁদছেন। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি সেসব পুরুষদের মস্তিষ্কে ও চিন্তায় স্থায়ী বিকৃতি এনেছে। কী ভীতিকর! এইসব মানুষদের চিকিতসা প্রয়োজন তা সাইকোলজিস্টরা বলে থাকেন। ধীরে ধীরে থেরাপির মাধ্যমে এই নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাওবাহ করা প্রয়োজন। তাছাড়া ইসলাম সবকিছুতেই কোমলতা, লজ্জাশীলতা, হায়া শেখায়। সেটা অন্তরঙ্গ সম্পর্কতে গিয়ে পশুদের মতন বল্গাহীন হওয়াটা রুচিবিকৃতির পরিচায়ক, যা পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্ভাবনা ধারণ করে।

পর্নগ্রাফি এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে ডালভাত হয়ে যাচ্ছে, যা বিশাল গুনাহ। পর্নোগ্রাফি থেকে শেখা বিকৃত যৌনাচার যখন পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করতে যায় তখন সেটা আরেকধাপ এগিয়ে যায়। এই ধরণের মানুষ কখনো সন্তুষ্ট হয় না। পর্নগ্রাফির নেশা তাদের শারীরিক তৃপ্তিকে নষ্ট করে ফেলে। অথচ মুসলিম পুরুষ বা নারী নিজেদেরকে নতদৃষ্টিতে, সংযত আবেগে চলার পরে বিবাহিত জীবনে পরস্পরের মাঝে সুন্দর উপায়েই আনন্দ খুঁজে পাওয়ার তথা ছিলো। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতাই তাদের পূর্ণ আনন্দের বিষয় হবার কথা ছিলো। আজকাল ছেলে মেয়েরা অন্তরঙ্গ জীবন সম্পর্কে শিখতে যায় 'কামসূত্র' থেকে, যা অশ্লীলতা আর নগ্নতার চুড়ান্ত বিষয়। স্কলারদের অনেকেই বলেন দাম্পত্য জীবনের প্রয়োজনীয়টুকু মানুষ আপনাআপনি শিখে যায়। তবে, ইসলামে অন্তরঙ্গতায় কতটুকু অনুমুতি আছে, কতটুকু নিষেধ --এগুলো সময়মতন জেনে নেয়া উচিত। ব্যাস! মনে রাখা উচিত, আল্লাহ কোমলচিত্ত, লজ্জাশীল ও পবিত্র মানুষদের পছন্দ করেন।

কেন এই কথা বলছি? দেখুন ভাই, আপনি একজন মানুষ। আল্লাহ মানুষকে কিছু শারীরিক, মানসিক যোগ্যতা দিয়ে পাঠিয়েছেন। ইসলাম আমাদেরকে সেগুলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য বলেছে। আমাদের উদ্দেশ্য অনেক অনেক উঁচু, অনেক বিশাল, তাতে আছে শুধু মানুষ না, এই গোটা প্রাণীকূলের, পরিবেশকেও যথাযথ রাখার দায়িত্ব। আমাদের মন-হৃদয় আর চিন্তাগুলোই হবার কথা অনেক বিশাল। সেখানে আমাদের যুবসমাজও যেন যৌনতাকেন্দ্রিক অদ্ভুত বিচিত্র কিছু জান্তব চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠছে... আল্লাহ আমাদের মুসলিম সমাজকে নগ্নতা-অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-বিকৃতকাম-অবৈধ যৌনাচারের হাত থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে এমনভাবে চলার তাওফিক দিন যেন আমরা দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি পেতে পারি।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200228
৩০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ভালো লাগলো
200233
৩০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:২০
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : বর্তমান বাঙ্গালী সরকার হাইস্কুলের ১০/১১ বছরের মেয়েদেরকে কনডমের ব্যবহার শিখায় কিভাবে সহজে ইনজয় করে সতিসাবিত্রি থাকতে পারবে...লেজ কাটা সরকার।
200234
৩০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:২২
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আপনার লেখাগুলো পড়েছি। আল্লাহ আরো লেখার তওফিক দিন। সেই সাথে কার্যকর কিছু করার চিন্তা দিকনির্দেশনামূলক বাস্তবিক কিছু লেখা আমাদের উপহার দেবেন আশা রাখি।
200270
৩০ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:২১
egypt12 লিখেছেন : আমাদের এই বিকৃতিতে কোন যৌন আচরণ স্বাভাবিক আর কোনটি অস্বাভাবিক সেটাও বোঝা কষ্টকর হয়ে গেছে; সমাজ বোদ্ধাদের কাছে আবেদন উনারা যেন সমাজের ভালোর জন্য লাজলজ্জা ছেড়ে বিকৃত ও গ্রহনযোগ্য যৌন আচরণের ব্যাপারে বিশ্লেষণমূলক লেখালিখি করেন কোরআন ও হাদিসের আলোকে...এতে তরুন সমাজের উপকার হবে।
200393
৩০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : বর্তমান বাঙ্গালী সরকার হাইস্কুলের ১০/১১ বছরের মেয়েদেরকে কনডমের ব্যবহার শিখায় কিভাবে সহজে ইনজয় করে সতিসাবিত্রি থাকতে পারবে...লেজ কাটা সরকার।

সহমত জ্ঞাপন করলাম।
200456
৩০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পুঁজিবাদি দর্শন মানুষকে সবসময়ই বিচার করে অর্থমুল্যে। তাই তাদের সমাজ ব্যবস্থা হচ্ছে ফ্রয়েডিয় মনস্তত্ব অনুযায়ি। আর আমরা তাদের অন্ধ অনুকরন করতে গিয়ে ধ্বংসের পথে যাচ্ছি।
200540
৩০ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:৪১
সুশীল লিখেছেন : পিলাচ
200845
৩১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৩
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু সমাধান কি। এ বিষয়ে লিখা চাই। চাই আরও বিশ্লেষন। ধন্যবাদ।
202272
০৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:২৯
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমার শ্রদ্ধেয় প্রবাসী মজুমদার চাচা বলেছেন-
বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু সমাধান কি। এ বিষয়ে লিখা চাই। চাই আরও বিশ্লেষন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File