বিয়ে নিয়ে এত লেখালেখি, সমাজ বদলায় না কেন?

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ান ০৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৬:১১ রাত

বিয়ের বয়স নিয়ে চলমান সমাজের যে অন্যায়, অত্যাচারী, অমানবিক সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে সচেতন হয়ে, পুনর্গঠনের জন্য নতুন প্রজন্মের অনেক মুসলিম ছেলেমেয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের এই উদ্যোগের নাম Early Marriage Campaign যাতে যোগ দিয়েছেন ছোট-বড় অনেক মুসলিম-অমুসলিম মানুষ। সমস্যা হলো, কিছু মানুষ ভাবছেন এটা আরব্য রজনীর আলাদীনের চেরাগের মতন কাজ করবে। যেহেতু আমরা কন্ঠ তুলেছি, আমাদের সবাইকে কপাকপ বিয়ে করে ফেলতে হবে ক'দিনের মধ্যেই। যেহেতু খুব বেশি খবর শোনা যাচ্ছেনা, তাই *কাজ হচ্ছেনা* বলে সন্দেহ হচ্ছে।

একটা বিষয়ে সবিনয়ে পরিষ্কার করতে চাই, আমাদের বোধহয় ভাবনাতে কোথাও ভুল হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আমরা সবাই আমাদের এই সমাজের অংশ, আমরা একেকটা পরিবারের অংশ। সমাজে বিয়ের বয়স পিছিয়ে এই ছেলে মেয়ের যথাক্রমে ২৫ এবং ৩০ এসে ঠেকেছে অনেকগুলো বছর ধরে, একদিনে হয়নি। আমাদের পরিবারে আমাদের বাবা-মায়েরা হয়ত ইচ্ছাকৃত না হলেও অনিচ্ছাকৃতভাবেই সমাজের প্রচলিত ধারায় চিন্তা করতে শুরু করেছেন। একদিনে আমরা বদলে দিতে পারবো না, তবে আমরা পরিবর্তন শুরু করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা ইসলামের এই গুরুত্বপুর্ণ সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। এই আন্দোলনের অংশ আমরা, তার মানে এই নয় আমরা পরিবার বিচ্যুত। আমরা সবাই ইসলামের জ্ঞান থেকে এই সুন্নাহ শিখে পারিবারিকভাবে দাওয়াহ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যাবো ইনশা আল্লাহ। আমাদের মূল লক্ষ্য সমাজের পরিবর্তন আনা। আমরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলবো যা সমাজকে, পারিবারিক সম্পর্কগুলোর, ছেলেমেয়েদের চরিত্রের পবিত্রকরণে কাজ করবে, সুন্দর সমাজ গঠনে সাহায্য করবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের চরিত্রকে বিশুদ্ধ রাখতে প্রত্যয় নিবে। আমাদের বাবা-মায়ের মানসিকতার পরিবর্তন আমরা বুঝিয়ে সঠিক দিয়ে আনবো, আমরা সন্তান, আমরা অবাধ্য হবার মানসিকতা রাখিনা, ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাও দেয় না। তবে আমাদের এই আন্দোলনের পরিবর্তনের বাতাস বইছে চারপাশে। আমি জানি এরকম অনেকগুলো ঘটনা যারা এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে সঠিক বয়সে (দেরি করে নয়) বিয়ে করেছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন। প্রতিটি পরিবারেরই মানসিকতার পরিবর্তন আসছে, আগামীতে তা সম্পূর্ণ ইসলামিক হবে ইনশা আল্লাহ।

অনেক ভাই ও বোনের কাছে মনে হচ্ছে, "বাসায় বলছি কাজ হচ্ছেনা। এখন কী করবো? ... আর কত সবর করবো, অনীহা এসে যাচ্ছে, এভাবে আর ভালো লাগে না..." এমন অনেক দুঃখের কথা। প্রিয় ভাই, কথাগুলো সত্য, বাস্তব, স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের কি মাথায় রাখা উচিত না যে, আল্লাহ আমাদের উপরে সাধ্যের অতিরিক্ত কোন বোঝা চাপিয়ে দেন না। যদিও সুন্নাহ অনুযায়ী আমরা জানি আমাদের দেরি করে বিয়ে করা উচিত নয়। তবু, পারিবারিক সামাজিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণে দেরি যদি হয়েই যায় -- মনে রাখতে হবে, কোনভাবেই, কোন অবস্থাতেই প্রেম বা বিবাহপূর্ব সম্পর্ককে প্রশ্রয় দেয়ার কোনই অবকাশ নেই। ইসলামে বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা, অপ্রয়োজনীয় যেকোন যোগাযোগ নিষিদ্ধ। ছেলেদের উচিত দৃষ্টিকে অবনত রাখা, কোনভাবেই যেন মেয়েদের প্রতি অননুমোদিত দৃষ্টি না যায়। মনে রাখা উচিত, আল্লাহর প্রতি নির্ভর করে যারা সাধ্যমতন তার আদেশ মানতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদের নিজ দয়া ও অনুগ্রহে পুরষ্কৃত করেন। যার আখলাক তথা ব্যক্তিগত চরিত্র সুন্দর, আল্লাহর কাছে সেই বেশি প্রিয়। যিনি আল্লাহর কাছে প্রিয়, তার কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার ছাড়া আর কোন কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। যে আল্লাহর জন্য কষ্ট করে, আল্লাহ তাকে পুরষ্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দিবেন।

নিঃসন্দেহে আল্লাহর উপরে ভরসা করতে হবে, অবশ্যই আল্লাহর আদেশ মেনে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আমরা মুসলিমরা এই সমাজের জন্য কাজ করে যাবো। যখন কাম-প্রেম-অশ্লীলতা-কদর্যতা-নোংরামিতে সমাজ ভরে যাচ্ছে, তখন আমাদের চারিত্রিক সৌন্দর্য যেন অন্য অনেক মানুষকে আলোর পথে নিয়ে আসার কারণ হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র ও সুন্দর। আমাদের চরিত্রও সুন্দর করা উচিত। আল্লাহ আমাদের প্রতি রহম করুন, আল্লাহ আমাদের জীবনকে কবুল করুন এবং এমন জীবনসঙ্গী দান করুন যেন তারা আমাদের চোখ শীতলতাকারী হয়, যেন তারা আমাদের জান্নাতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ হয়, যেন আমাদের দম্পতিদের দু'জনের যাত্রা দুনিয়া থেকে শুরু করে জান্নাতুল ফিরদাউস অবধি অটুট থাকে। আমিন।

--- একজন মুসলিম ভাই

[আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত]

বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File