সমাজে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়সের জটিলতা : কিছু আইডিয়া

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ান ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৫৪:৫০ রাত



গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখাঃ যে সমাজে বিয়ে কঠিন হয়, সে সমাজে ব্যভিচার সস্তা হয়ে যায়

মুসলিম সমাজে ছেলেমেয়েগুলো ভার্সিটিতে ঢোকার পরে যদি আগ্রহী হয়, তাদের বিয়েতে যথাসম্ভব আন্তরিক সাহায্য করা উচিত অভিভাবকদের। খুবই উচিৎ কাজ এটা,কেননা এই সমাজে ১৩ বছর বয়সে শারীরিকভাবে যোগ্য হয়ে যাওয়া সন্তানদের আরো প্রায় ১৫-২০ বছর নির্বিকার হয়ে থেকে দ্বীন টিকিয়ে রাখা বড়ই কঠিন এক পরীক্ষা। সমাধান থাকা সত্ত্বেও অযথা জীবনকে অতিরিক্ত পরীক্ষায় ফেলে দেয়া ঠিক না। এমনিতেই অনেক দুর্যোগ চলছে, অপেক্ষা করছে এই দেশের মুসলিমদের উপরে, অযথা সম্পর্কভিত্তিক ফিতনা থেকে বেঁচে থাকাই ঈমানের দাবী এখন। তাছাড়া চরিত্র রক্ষার্থে বিয়ে করলে তার রিযিক আল্লাহই দেন, তিনি এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

বিগত ৩০ বছরে বিয়ের বয়স কেবলই বেড়ে গেছে, এইটাকে সুন্নাহ পর্যায়ে নিয়ে আসতে রোমান্টিক সিরিয়াল না দেখে মেয়েদের জীবনবোধ বৃদ্ধি করা উচিৎ, জীবনের শুরুতেই অনেক বড় বড় খরচের স্বপ্ন না দেখে বাস্তববাদী হয়ে ধীরে ধীরে দু'জনের সংসারকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়টা কেমন হতে পারে সেসব নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। ছেলেগুলোর অযথা মুভি দেখে, পিরিতির গল্প শুনে আকাশ-কুসুম কল্পনা না করে জীবনের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে শেখা উচিৎ। কীভাবে কিছু হালাল উপার্জন করা যায় সে নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা, নিজের যোগ্যতা বাড়ানো এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করা উচিৎ।

আর্লি ম্যারেজের ব্যাপারে দেখা যায় বেশ কিছু মেয়েরাই বিরোধিতা করে। এটা স্বাভাবিক, কেননা বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশে দেখা গেছে অনেক পরিবারেই মেয়েদের *জোর করে* বিয়ে দেয়া হয়। তাই কোমলমতি মেয়েদের বিয়ে নিয়ে এইরকম ভীতি আসাও স্বাভাবিক। আবার, মেয়ে যদি মাস্টার্স পাশ করার আগেই বিয়ে না হয় তাইলে মেয়েদের *বিয়ে দেয়া* কঠিন হয়ে যায়। অনেকেই বরং এড়িয়ে যেতে থাকেন এমন পাত্রীদের। এই চরম বাস্তবতাটার মধ্যে কী করা যেতে পারে?

একটা ছেলে যদি একটু কম বয়েসি মেয়ে খোঁজে, সেইটা অস্বাভাবিক না, নিষিদ্ধও না। সেটাই স্বাভাবিক। কমবয়েসে একটা ছেলে বা মেয়ের আবেগ যতটা পবিত্র থাকে, উচ্ছ্বলতা যতটা সুন্দর থাকে, বয়সের সাথে সাথে তাতে মরিচা পড়ে যায়, জীবনের জটিলতায় মানুষের হৃদয় ক্রমশঃ শক্ত হতে থাকে। কিন্তু এর পেছনেও কিছু কথা আছে। তা হলো, ছেলেটা কোন বয়েসি। এই সমাজই একসময় ছেলে-মেয়েদের বিয়েতে 'এইজ গ্যাপ' চাইতো, আবার তারা টাকাওয়ালা যোগ্য ছেলেও খুঁজে। বাংলাদেশের সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা যতটা করুণ! তো যেই ছেলে সমাজের *চাওয়া* (অর্থনৈতিক) যোগ্যতায় পার হয়, তার বহু বছরের আর্তি থেকে মনের চাওয়া পূরণের জন্য তরুণী বিয়ে করতে চাইলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলানোও কঠিন।

মেয়েরা ভীতি থেকে বিয়ে করতে চায় না। স্বাভাবিক। টিপিক্যাল ফ্যামিলিগুলোতে শশুর বাড়িতে শাশুড়ির যন্ত্রণা, অনেকক্ষেত্রে জীবনের শুরু থেকেই অলমোস্ট ঝিয়ের মতন খাটাখাটনি করা, ননদ-দেবর-জা সংক্রান্ত রাজনীতি সামলানোর আতঙ্ক কাকে না গ্রাস করবে? অবিবাহিতা বিবাহযোগ্যা মেয়েরা এইসময়ে এই মেয়েটা মায়ের 'ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত মনের আহাজারিমূলক' রাগ সহ্য করে, যন্ত্রণা সহ্য করে, আবার ত্রিশোর্ধ কিছু যুবক (যার জীবন নিয়ে সুন্দর চিন্তা থাকা খুবই অস্বাভাবিক, ইতোমধ্যে অনেক বিরূপ পরিস্থিতির পরে সে উপার্জন করে) তার সাথে পরের জীবন নিয়ে আলাপ করবে -- সে থাকে বিপদে। বিয়ের পরেও *স্বামীর* মন পাওয়া কঠিন।


প্রায় ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত যেই ছেলে তার আবেগ ও শরীর সামলে চলে, বিয়ে করার জন্য আবশ্যকী 'অনেক টাকা' ইনকাম নিশ্চিত করার পরে একটা বউ পায়, এই মেয়ের প্রতি তার আবেগ ও অনুভূতিগুলো যে তরুণদের মতন থাকবে এমন আশা করাই অনুচিত, মানুষের আবেগ অনুভূতিরও একটা সময় থাকে। তরুণ বয়সে যেটার আবেগময় থাকে, তিরিশে এসে সেটা অর্থহীন লাগে। অভিভাবকরা এমনকি ছেলেমেয়েরাও এই বিষয়গুলো না বুঝলে অনেক ক্ষতি। কোন পুরুষ স্ত্রীকে 'ইহসান' করবেন এইরকম বয়সে এসে, তা আল্লাহভীরু না হলে অন্য কোন কারণ বড় হয়ে দাঁড়ায় না, খুব কম লোকই সেরকম হয়। স্ত্রীরাও যে ভুলগুলোকে উপেক্ষা করেই স্বামীকে ভালোবাসবেন, এমনটাও হয়না সেই বয়সের কারণেই। আর সমাজে তাকওয়া কমে গেছে, তাতে খুব বেশি আশাও করা যায় না। সবদিক থেকেই সমস্যা জেঁকে ধরে এক ধরণের দুষ্টচক্রে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের সমাজের বিয়ের সমস্যাগুলো।

অন্তত অভিভাবকদের মাঝেও সচেতনতা দরকার, যেমন দরকার ছেলেমেয়েদের। যে দায়িত্ববান, সেই ছেলে ছোট থেকেই বাসার অনেক কাজে মন দেয়, তার কাজগুলো মন দিয়ে করে। এমন ছেলে একটা মেয়ের দায়িত্ব কেন নিতে পারবে না যখন চরিত্র রক্ষার্থে বিয়ে করলে সংসারে রিজিকের নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন? রিজিকের মালিক কে তাহলে আমাদের? একটা মেয়ে যদি ছেলের দ্বীনদারী ছাড়া আর কোন কিছু দেখেই বিয়ে করতে যায়, তাকে ভুগতে হবে তা বুঝতে তেমন বেগ পেতে হয় না।

অভিভাবকদের প্রতি আইডীয়া -- *আগ্রহী* ছেলেমেয়েদের জন্য দ্বীনদার ছেলেমেয়ে খুঁজে বিয়ে করিয়ে দেয়াই উচিৎ। প্রেম করতে গেলে ধরে দুই গালে থাপ্পড় মেরে শুইয়ে দেয়া উচিৎ, কান ধরে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা উচিৎ।

বিষয়: বিবিধ

৫১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File