ভালোবাসার মোড়কে কামতাড়নার ও পর্ণোগ্রাফির এই শহর

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ান ২৮ আগস্ট, ২০১৩, ০২:৩৯:৩৯ রাত



আজকাল বাজারে ভালোবাসার ব্যাপক সংকট মনে হয়, নাকি পণ্য হিসেবে এর কাটতি বেশি কে জানে। ফেসবুকে ঢুকেই দেখি একটা স্পন্সর করা অ্যাড একটা পেইজের -- ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই। নিম্নমানের গ্রাফিকসের একটা ছবি, তাতে LOVE লেখা। পেইজে ইংরেজি বাংলা নামকরণ এবং বন্ধনির ব্যবহারে ভুল দেখেও জ্ঞানের দৈন্যতা বোঝা যায় সুষ্পষ্ট। এই নিম্নরুচির বিজ্ঞাপণওয়ালাদের কথা বাদ দিলেও দীর্ঘদিন যাবত 'উচ্চমানের রুচিওয়ালাদের' টাকা দিয়ে চালানো AIRTEL কর্তৃক বিজ্ঞাপন 'আপনি কি মনে করে বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল? তাহলে চলে আসুন আমাদের সাথে' টাইপের বিশ্রি বিজ্ঞাপণেও ভালোবাসা/বন্ধুত্ব সংকট প্রকৃষ্ট।

শহরের সবখানেই ভালোবাসা। এই পণ্য বিক্রির চেষ্টা যাদের জন্য হয় তাতে বাচ্চারা থাকে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। এসব ভালোবাসার নামের রং-ঢং ক্ষণিকেই কামাসক্তিতে পরিণণত হয়। একসময় সবখানে কেবল কামাসক্তি থাকে, ভালোবাসা পড়ে থাকে শব্দের খোলসে। নগ্ন বিলবোর্ডগুলো বেশ চটকদার। আগে দু'একটা ছিলো। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড , আড়ং ইত্যাদি আগে চোখে পড়তো। নির্লজ্জ কি আর সবাই হয়। এখন ক্রেডিট কার্ডের বিজ্ঞাপনেও বিশাল বিলবোর্ডে রেস্টুরেন্ট টেবিলে নগ্ন ধবধবে বাহুর পাতলা পোশাকের তরুণীর ওপাশে স্যুটেড পুরুষ থাকে। এখানেও ভালোবাসার মোড়কে কামোত্তেজনাতে সুড়সুড়ি দেয়া। ক্রেডিট কার্ড কই থাকলো? হাজার হাজার দোকানের সাইনবোর্ডে আন্তর্জাতিক পানীয়ের বিজ্ঞাপনে স্বল্পবসন টপস পরা বলিউডি নায়িকার সাদা নির্লোম বগল উন্মোচিত। পানীয় খুবই ক্ষুদ্র বিষয়, বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য, যেভাবেই হোক কাম জাগিয়ে পানীয় বিক্রি করা।

ক'দিন আগে সারা ঢাকাতে দেখলাম নাবিলা নামের বুটিক শপের বিজ্ঞাপন। প্রায় একই চেহারার একটা বেশ্যার অতি-নির্লজ্জ শরীর প্রদর্শনী থেকে বাঁচার সুযোগ নেই পথযাত্রীদের। জ্যামে আটকে থাকা শাহবাগ, শেরাটনের কাছে মানুষেরা দেহজীবীদের শরীরের নগ্নতা দেখতে বাধ্য। বীভৎস এই শহরের এই নোংরামি।


ভন্ড কামাসক্ত মিথ্যুকরা একে 'আর্ট' বলে থাকে। সহস্র বছর ধরে একেশ্বরবাদী ছাড়া সকলেই নগ্নতার উপরে ভিত্তি করে তাদের সংস্কৃতিকে তৈরি করেছে। মূলত কাম তাদের মূল উপজীব্য, এই শহরেও এমন কীটপতঙ্গরা বাড়ছে। আগুনে ঝাঁপ দিতে অস্থির নরকের কীটদের কাছে এ আর অসম্ভব কী?

আমার এই শরে সেই দিনের ভ্রমণের কথা আমি নিশ্চিত জানি, আমার অন্তরের পবিত্রতার প্রতি আন্তরিক প্রচেষ্টাটুকুও জানি। এই শহরে কয়টা মানুষের অন্তর পবিত্র থাকবে এইসব বিজ্ঞাপনের নখরের যন্ত্রণায়, আমি সন্দিগ্ধ। শয়তানের চ্যালারা এইটা পারে, মানুষের অন্তরকে কলুষ করতে। কলুষ অন্তরের মানুষ সুন্দর জীবনের প্রচেষ্টায় হাল ছেড়ে দিবে। তার কাছ থেকে আরো বেশি বেশি ভুল হবে। ক্ষণিকের অপবিত্রতা তার অন্তরকে অনুশোচনায় দগ্ধ করবে। এভাবেই শেষ হবে একটা সুন্দর মানুষের/পরিবারের সুন্দর পবিত্রতার গল্প।

এদিকে আজকাল পর্নগ্রাফি কত শত-সহস্র পরিবার ধ্বংস করছে সেইটা চিন্তা করলেও আতঙ্কে নীল হয়ে যাই। সাধারণ শারীরিক চাহিদার পূরণের বিষয়টাকে ঘাঁটাতে ঘাঁটাতে নষ্ট করে কত আক্রমণাত্মক, পাশবিক আর অরূচিকর বিষয়ের উপস্থাপনা করছে ওরা। অনলাইন জগতের সবচাইতে বেশি সংখ্যক সাইট তাদেরই এবং এই ইন্ডাস্ট্রির অর্থ উপার্জনের বিশাল মাত্রার কারণেই তাদের আগ্রহও বেশি। কারণ, মানুষ সহজেই এতে আকৃষ্ট হয়।

ভয়ানক নেশা পর্ণোগ্রাফি। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হলগুলোতে নেটওয়ার্কে হাত বাড়ালেই পর্ণমুভি পাওয়া যায়। অজস্র দোকানে, ফুটপাতে পর্নের ডিভিডি। উঠতি বয়েসি থেকে মধ্যবয়সী ছেলেরা (এখন মেয়েরা তো বটেই) নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে প্রায় প্রতিদিন মাঝরাতে মনিটরে পর্ণ দেখতে দেখতে। এই নেশায় বিয়ের আগেই তারা খুঁজে নেয় শরীর ভোগের কোন মানুষ। বিয়ের পরেও স্ত্রীকে ভোগ করতে চায় পশুর মতন। সুখ তিরোহিত হয়। বহু পরিবারের ভাঙ্গনের কারণ এই পর্ণগ্রাফি। বহু সরলা স্ত্রীরা হতভম্ব হয়ে যান স্বামীর সুশ্রী চেহারার নিচে কদর্যতা দেখে। বেশিরভাগ মানুষ এই নেশা ছাড়তে পারে না জীবনের শেষ বয়সেও।



কে কার খোঁজ রাখে? নীতি হারিয়ে যাওয়া, শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনকে যেভাবে পারা যায় ভোগ করতে চাওয়া মানুষদের কাছে তো আদর্শিক জীব নেই। ফলে ঘুরে ফিরে দায়ভার তাদেরই কাঁধে, যারা গড়তে চায়, যারা ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে চায় সম্পর্কগুলোকে, পরিবার ও সমাজকে। হতাশা ছাড়া কিছু হয়না। একমাত্র স্বান্ত্বনা -- যিনি হিসেব করবেন, তিনি সূক্ষ্ম এবং শ্রেষ্ঠতম ন্যায়বিচারক। তিনি নিশ্চয়ই পৃথিবীর জীবনে কষ্ট করা মানুষগুলোকে ফেলে দিবেন না। তার ভান্ডারের তো সীমা পরিসীমা নাই।

ভালোবাসার মোড়কে কাম বিক্রির এই বাজারে খদ্দের প্রায় সবাই। তাই, আদর্শিক আর বৈষয়িক যেই কাজই করুন -- মনে রাখবেন, আপনার চারপাশের পরিবেশ বিষাক্ত। দিগভ্রান্ত মানুষদেরকে শয়তানের চ্যালারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তারা জানে না। তাই সেই হিসেব মাথায় রেখে কাজ না করলে আদর্শবাদীদের মুখের কথা লোকেদের কানেই রবে, অন্তরে ঢুকবে না। সুন্দর সমাজের জন্য কাজ করতে হবে অনেক। আন্তরিক কাজ, প্রার্থনার সাথে কাজ প্রতিটি দিন।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File