কিশোরী মেয়ে ও তার বুদ্ধিমতি মা

লিখেছেন লিখেছেন ফেনল ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:০৯:৪৪ রাত

সুমাইয়া ইসলাম। প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর এক কিশোরী। নবম শ্রেণীতে পড়ে । পড়াশুনায় যেমন মেধাবী তেমনি দুষ্টুমিতেও কম যায়না। বাড়ির সবাইকে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখে। প্রাকৃতিক নিয়মেই হঠাৎ করে তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হতে লাগল। ঠিকরে বেরুতে লাগল সৌন্দর্য।

প্রতিদিন পায়ে হেটে স্কুলে যাওয়া আসা করত । সাথে থাকত তার প্রতিবেশি কয়েকটি মেয়ে । একসাথে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরত । প্রতিদিনের মত সে স্কুল থেকে ফিরছিল কিন্তু আজ তার সাথে কেউ ছিলনা। রাস্তার পাশে এক ছেলে এসময় দাড়িয়ে থাকতো কিন্তু কিছু বলত না । আজ তাকে একা আসতে দেখে ছেলেটি তার কাছে এসে বলল - তুমি না অনেক সুন্দর ! তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে । একথা বলে ছেলেটি দ্রুত চলে যায়। সুমাইয়া হঠাৎ একথা শুন একটু থমকে দাড়ায়। কিছু বুঝতে পারেনা। একসময় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে স্কুল ব্যাগ রেখে ড্রেস পরিবর্তন না করেই আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল । সুমাইয়ার মা ব্যাপারটি লক্ষ্য করলেন । ভাবলেন মেয়েতো কখনও এরকম করেনা কখনও। তাই সে মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন -

- মামনি, কি ব্যাপার ? কিছু হয়েছে ?

- আচ্ছা আম্মু, আমি কি দেখতে অনেক সুন্দর ?

মেয়ের একথায় মা একটু থমকে গেলেন । ভাল করে মেয়ের দিকে তাকলেন । সত্যিই মেয়ে যে দিনে দিনে এত সুন্দর হয়ে উঠছে তা তো ভাল করে এত খেয়াল করা হয়নি ।

- একথা কেন মামনি ?

- আজ স্কুল থেকে আসার পথে এক ছেলে আমাকে বলে আমি নাকি অনেক সুন্দর !

- ও আচ্ছা এই কথা !

- বলনা আম্মু !!

- হুম তুমিতো অনেক সুন্দর হয়ে যাচ্ছ দিনে দিনে !! আচ্ছা এখন তুমি তাড়াতাড়ি পোষাক পরিবর্তন কর আর গোছল করে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রেষ্ট নাও । বিকালে তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাব। তোমার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনব ।

- আচ্ছা ঠিক আছে।

বিকেলে মার্কেট থেকে মেয়ের পছন্দমত থ্রীপিছ কিনে দিলেন । বাসায় এসে মেয়েকে নতুন জামা পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন। আর মেয়েকে বললেন যাও তোমার আব্বুকে দেখিয়ে আস তোমাকে কেমন সুন্দর লাগছে । নতুন জামা পড়ে খুব খুশিমনে আব্বুর কাছে গিয়ে ছালাম করল। আর বলল -

- আব্বু দেখতো আমাকে কেমন লাগছে ?

- সুবহানআল্লাহ ! তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে । এত সুন্দর করে তোমাকে কে সাজিয়ে দিল ?

- মামনি !

তার বাবা মানিব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশত টাকার নোট বের বরে মেয়ের হাতে দিয়ে বলল -

- এই পাঁচশত টাকা হল তোমার ছালামী আর পাঁচশত টাকা হল তোমাকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়ার জন্য তোমার আম্মুকে আমার তরফ থেকে বকশীশ।

মেয়ে খুশি মনে টাকা নিয়ে আম্মুর কাছে গেল । আম্মুকে টাকা দিল । আম্মুকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল । তারপর পাশে বসিয়ে বলল -

- তোমাকে যদি কেউ কিছু উপহার দেয় তাহলে তুমি সেটা কি কর ?

- যত্ন করে রেখে দিই ।

- আচ্ছা আল্লাহ তাআলা আমাদের মানুষকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন । তোমাকে এত সৌন্দর্য দান করেছেন । এটা কি তোমাকে আল্লাহর তরফ থেকে দেয়া উপহার না ?

- হ্যাঁ

- তাহলে এই উপহার যত্ন করে রাখা দরকার না ?

- হ্যাঁ অবশ্যই ।

- বলতো কিভাবে যত্ন করে রাখবে ?

- কিভাবে আবার ! চেহারার যত্ন নিব, রোদে যাবনা, ধূলাবালি থেকে দূরে থাকব, স্নো ব্যবহার করব।

- হুম । আর কি করবে ?

- আর কি ?

- শোন মামনি, আল্লাহ তাআলা যেমন মানুষকে সৌন্দর্য দান করেছেন ঠিক তেমনি সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ও কিছু নির্দেশ দিয়েছেন । আল্লাহ তাহালা বলেছেন - আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আন-নূর:৩১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন - হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)

যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কন্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। (সূরা আহযাব-৩২)

এই যে, আল্লাহ তাআলা কতগুলো নির্দেশ দিয়েছেন এগুলো মেনে চলাকে বলা হয় পর্দা করা । আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য পর্দা করা ফরজ ।

- তাহলেতো আমাকে বোরকা পড়তে হবে ।

- হ্যাঁ অবশ্যই।

- আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমার পছন্দ মত বোরকার কাপড় কিনে দিতে হবে ।

- (মেয়েকে গালে ধরে একটু আদর করে) ঠিক আছে তোমার পছন্দ মত কাপড় কিনে দিব।

- আচ্ছা বলত মামনি বাড়িতেও কি বোরকা পড়ে থাকবে নাকি?

- না বাড়িতে বড় ওড়না পড়ব ।

- ভেরি গুড !! এইতো আমার মামনি সব কিছু বুঝে ফেলেছে । আর শোন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খুব শান্তভাবে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাচল করবে । স্কুলে কোন ছেলের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে মিস্টি করে বা কোমল কন্ঠে কথা বলবেনা। অযথা তাদের সাথে গল্প করবেনা । ঠিক আছে ?

- ঠিক আছে ।

- আল্লাহ তোমাকে সবকিছু মেনে চলার তৌফিক দান করুন । আমিন ।

বিষয়: বিবিধ

২০১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File