ফিলিস্তিন: বিচ্ছিন্ন চিত্র, আচ্ছন্ন ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার সাজিদ আল সাহাফ ২২ জুলাই, ২০১৪, ১২:১৪:৫২ রাত
বলি ভাই, একটু ভালোভাবে দেখুনতো ছবিটি। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে কেনো আমরা মিথ্যার আশ্রয় নেবো?? মিথ্যার আশ্রয় সত্যকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফেসবুকে আমার দেয়াল থেকে একটি ছবি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। সারিবদ্ধ একদল শিশুর লাশের ছবি। বলা হয়েছিল, গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের লাশ। পরে জানা গেল, এ ছবিটি আসলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নিহত শিশুদের ছবি। আমার এক অগ্রজপ্রতিম ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক বন্ধু পোস্ট করেছিলেন বলে আমি যাচাই না করেই ছবিটি শেয়ার করেছিলাম।
ফেসবুকে আরেকটি ছবি প্রচারিত হচ্ছে। একটি আতঙ্কিত ছোট্ট শিশুর মুখে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে রেখেছে একদল বন্দুকধারী। তাদের শুধু পায়ের নিম্নাংশ দেখা যাচ্ছে। একজনের আবার পরনে স্যান্ডেল এবং প্যান্টের একটি পা গুটানো। ইসরাইলি সৈন্যদের নির্মমতার স্বাক্ষর হিসেবে এ ছবি দেখানো হচ্ছে। একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যাবে হয়, এ ছবি অদক্ষ হাতে ফটোশপ করা অথবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশের অন্তর্কলহের চিত্র। প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্যে বানানো কোনো বিজ্ঞাপনচিত্র হওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কিন্তু এ ছবিগুলো মিথ্যে বা ফটোশপ করা হওয়া মানে কি গাজা এবং অন্যান্য অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলি আগ্রাসন এবং বর্বরতা হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। শুধু আজ নয়, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনে চলছে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এ কথা আমাদের কারো অজানা নয়, নতুন করে প্রমাণেরও অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে তা ঘটছে মিডিয়ার ক্যামেরার মাধ্যমে একেবারে আমাদের চোখের সামনেই।
এ হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করতে কি ফটোশপ করা বানানো ছবির প্রয়োজন আছে? এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত আহাজারিকেই কি ছোট করা হচ্ছে না? ফিলিস্তিনের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের সংগ্রামকে যৌক্তিক আর ইসরাইলের অত্যাচারকে প্রতিহত করতে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা কি এতোই জরুরি। এসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া ইতিহাস কি ফিলিস্তিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে না?
ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক সংবেদনশীল বন্ধু ইসরাইলের সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহতি উদ্যোগ। কিন্তু তারা উল্লেখিত ছবি দু’টি ব্যবহার করছেন। এ আবেদনপত্র আদৌ জাতিসংঘে পৌঁছাবে কিনা আমি জানি না। যেখানেই পৌঁছাক না কেন, যদি দেখা যায় একটি সত্যি ঘটনাকে তুলে ধরতে গিয়ে তারা মিথ্যে প্রোপাগান্ডার ফটোশপ করা ছবি ব্যবহার করেছেন তবে সে আবেদনপত্রটি তেমন গুরুত্ব পাবে বলে মনে হয় না।
‘তথ্যগত মিথ্যাচারের’ অজুহাতে আবেদনপত্রটিই নাকচ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তাই প্রবল।
অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বর্তমান সহিংসতার শুরু হয়েছিল যখন তিনজন ইসরাইলি কিশোরকে অপহরণ করে খুন করা হয়। তার প্রতিশোধ হিসেবে একজন ফিলিস্তিনি কিশোরকে বর্বরভাবে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন সমস্যার সামরিক সমাধান মোটেও সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অন্তর্ঘাত পরিহার করে ফিলিস্তিনিদের নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্পও নেই। তবে সবচেয়ে আগে যা করতে হবে তা হচ্ছে, ইসরাইলকে আগ্রাসন শুরু করা বা অব্যাহত রাখার কোনো অজুহাতই দেওয়া চলবে না। ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনের চারপাশে ঐক্যবদ্ধ আরব বিশ্ব একসঙ্গে দাঁড়ালেই কেবল ইসরাইলের আগ্রাসন মোকাবেলা করা যাবে। অন্যথায় এ অশুভ শক্তির আগ্রাসন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে ফটোশপ করা মিথ্যে প্রোপাগান্ডা দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে লাভ নেই।
-----আহমেদ শরীফ শুভ, অতিথি লেখক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন