জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: তদন্তে শেষ নয়, প্রয়োজন অপরাধীর যথার্থ শাস্তি- ২
লিখেছেন লিখেছেন আনিছুর রহমান শিশির ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:০০:৩০ বিকাল
(গত কিস্তির পর)
তিন. ১লা আগস্ট সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ছাত্রলীগ কর্মী তাহমিদুল ইসলাম লিখনকে কুপিয়ে জখম করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে নাহিদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করতে গেলে শুরু হয় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ। সংঘর্ষে ওই হলের ৫ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ২০-২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তাদের তান্ডব থেকে বাদ পড়েনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন বর্তমান ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও তৎকালীন প্রক্টর। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাঁধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাভার ও আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি এবং সন্ত্রাসী হামলার শিকার তাহমিদুল ইসলাম লিখনের পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার থানায় একটি মামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনা তদন্তে যথারীতি একটি কমিটি গঠন করে। ঘটনার নয় মাস পার হলেও এখনো হিমাঘারেই রয়ে গেছে তদন্ত প্রতিবেদন।
চার. ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সাল। মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আব্দুল মালেক (৩৬তম ব্যাচ, পরিসংখ্যান বিভাগ) সন্ধ্যা সাতটার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। যথাসময়ে অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিতে দেরি হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত নয়টার দিকে মালেকের মরদেহ মওলানা ভাসানী হলের সামনে নেয়া হলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা রড়, পাইপ ও লাঠি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালান এবং একটি কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। কয়েকজন উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ঢুকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও উপাচার্যের রান্নাঘরসহ কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি কোষাধ্যক্ষের বাসভবন, ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবন, আবাসিক শিক্ষকদের বাসভবন, প্রশাসনিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। দুই ঘন্টার মত অবরোধ করে রাখা হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এই ঘটনার পর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি । ঘটনার তিন মাস পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন।
পাঁচ. পহেলা বৈশাখ ১৪২০। এদিন কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন মাস্টার্সের দুই ছাত্রী। বিচার দাবি করায় উল্টো হয়রানির শিকার হন দুই ছাত্রী। এ ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রীদের অভাবনীয় আন্দোলনের মুখে ৭জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানাসহ বহিস্কার, ২জনকে সতর্কতা এবং ১জনকে ক্যাম্পাস ছাড়তে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ ঘটনায় বহিষ্কারাদেশের ক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধীদেরকে বাঁচিয়ে ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নয় এমন অনেককে বহিষ্কারের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া মাঝে মাঝেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দলীয় কোন্দলে আশান্ত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। সামান্য ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাসে ধ্বংশযজ্ঞ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন রীতিমত মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও অধিকাংশ সময় তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। দেখলেও প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে দোষ চাপানো প্রবণতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। অপরাধ করার পর অপরাধীর চেয়ে মূখ্য হয়ে উঠে তার রাজনৈতিক পরিচয়। এমন কি পিতৃতুল্য শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার পরও রাজনৈতিক কারণে অপরাধী হয়ে যান নিরপরাধ। কতিপয় শিক্ষকের নোংরা রাজনীতির সুযোগে ছাত্র নামধারী কিছু কুলাঙ্গার ক্যাম্পাসে নিশ্চিন্তে সংগঠিত করে চলেছেন সন্ত্রাসী কর্ম।
জাহাঙ্গীরনগরকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর শিক্ষার্থীদেরকে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আগামীর কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে গিয়ে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নজর রাখতে হবে তদন্তের নামে যাতে কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সচেতন সদস্য হিসেবে প্রত্যেকের এমনটাই প্রত্যাশা। (সমাপ্ত)
১ম কিস্তির লিঙ্ক http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6971/anisshishir/25909#.Uhx2n1MurAE
বিষয়: রাজনীতি
১১৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন