জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তে শেষ নয়, প্রয়োজন অপরাধীর যথার্থ শাস্তি-০১

লিখেছেন লিখেছেন আনিছুর রহমান শিশির ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১১:৩৯ দুপুর



তদন্ত! মানেই বিচারে দীর্ঘসূত্রীতা। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের জনগণের কাছে একটি লোক দেখানো পদক্ষেপও বৈকি! ইদানীং জনসাধারণের নিকট তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়টি অবিশ্বাস্য হতে শুরু করেছে। তবে তদন্ত যদি হয় বাংলাদেশের কোন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার শিক্ষকদের ভাবা হয় জাতির বিবেক! আর শিক্ষার্থীদের ধরা হয় স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আগামী দিনের কর্ণধার, তখন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা তদন্তে প্রকৃত অপরাধীর তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের যথার্থ শাস্তি হবে, এমনটা প্রত্যাশা করা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্বার্থবাদী শিক্ষকের নোংরা রাজনীতির ফলে আমাদের দেখতে হয় তদন্তের নামে প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালের অপচেষ্টা। বিচারের নামে প্রহসন। দৃষ্টি ফেরাতে চাই সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দিকে। দেখা যাক, কি পরিণতি হয়েছিল ঘটনায় জড়িতদের।

এক. ২০১২ সালের ৮ই জানুয়ারী আনুমানিক সময় বিকাল ৪.৩০। চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করে নতুন কলা ভবন থেকে বের হয়ে ইংরেজি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন গ্রুপের কর্মী জুবায়ের আহমেদকে জোরপূর্বক বিজ্ঞান কারখানার পেছনে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে অপর গ্রুপের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ রফিক-জব্বার ও মীর মোশাররফ হোসেন হলের ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় জুুবায়েরকে। অবস্থার অবণতি হলে তাকে রাতে সেখান থেকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবীড় পরিচর্যা কেন্দ্র্রে (আসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় পরদিন ৯ই জানুয়ারী ভোর ছয়টায় তার মৃত্যু হয়। জুবায়ের হত্যাকান্ডের পর ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। ওই ১৩ জনের মধ্যে সাত জনকে আজীবন এবং ছয় জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার এক বছর চার মাস পেরিয়ে গেলেও খুনীদের কোন শাস্তি হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তারা আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন আজীবন বহিস্কৃত একাধিক আসামী। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হওয়ায় এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো নির্ভীকার। বহাল তবিয়তে রয়েছেন জুবায়ের খুনের আসমীরা।

দুই. জুবায়ের হত্যাকান্ডের রেশ না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে ১১দফা দাবিতে আন্দোলন করায় ২৮ই এপ্রিল সাংস্কৃতিক কর্মীদের নৃশংস ভাবে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিলীগ নামে পরিচিতি ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। হামলায় মারাত্মক ভাবে আহত হন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সহ-সভাপতিসহ ৭ সাংস্কৃতিক কর্মী। যথারীতি গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। যে কমিটি ঘটনার দেড় মাস পর পদত্যাগ করে। দ্বিতীয় দফায় গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। ৭ মাস পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের পর গঠন করা হয় পুনঃপর্যালোচনা কমিটি। বহু নাটকের পর বিতর্কিত এসব তদন্ত কমিটি ১৯টি সভার মাধ্যমে মোট ২২জন ছাত্রের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদনে ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। হামলায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকা একাধিক ছাত্রলীগ কর্মীকে তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি দেয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে সাংস্কৃতিক জোট। ক্যাম্পাসে বহুল আলোচিত এ ঘটনার এক বছর পার হলেও শেষ হয় নি হামলাকারীদের বিচার। উল্লেখ্য যে, সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলার পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন ভিসি শরিফ এনামুল কবির। (চলবে)

বিষয়: রাজনীতি

১০০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File