সংসদ নির্বাচন আদৌ হবে কি?
লিখেছেন লিখেছেন আনিছুর রহমান শিশির ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৪৪:৩০ রাত
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়ন এই সরকারের আমলে নি:সন্দেহে একটি আলোচিত ঘটনা। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেয়ার ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন কিভাবে, কোন পদ্বতিতে হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
মূলত আগামী সংসদ নির্বাচন কোন পদ্বতিতে হবে সে বিষয়টি নির্ভর করছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দল গুলোর আন্দোলনের তীব্রতা কেমন তার ওপর। বিরোধী দল যদি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, তাহলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শেষ মূহুর্তে হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। আর যদি বিরোধী দলের আন্দোলনে তীব্রতা না থাকে এবং গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম না হয় তবে ক্ষমতাসীন দল দলীয় সরকারের অধীনেই পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করবে। এতে বিএনপি অংশগ্রহন না করলেও আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী দল দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। কেননা তাদের সামনে রয়েছে ১৯৯৬ সালে বিএনপির অধীনে হওয়া সেই নির্বাচনের স্মৃতি, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ না নেয়া সত্ত্বেও দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজন ও সম্পন্ন করেছিল বিএনপি। বিএনপি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিরোধী দলগুলোর তীব্র আন্দোলন ও আর্ন্তজাতিক চাপের কারণে ক্ষমতা গ্রহনের তিন মাসের মাথায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমার কাছে মনে হয় বর্তমান সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় ১৯৯৬ সালের মত দলীয় সরকারের অধীনে একটি পাতানো নির্বাচনের চিন্তা কাজ করছে।
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সরকার গঠনের মত জনসমর্থন থাকলেও আন্দোলন করার মত জনশক্তি নেই। যার কারণে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকারকে বারবার আল্টিমেটাম দিয়েও তারা কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তোলতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে বিএনপির অন্যতম জোট সঙ্গী জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মূখোমূখি। জামায়াত ব্যস্ত রয়েছে তাদের নেতাদের মুক্তির আন্দোলনে। দলটির বিগত কয়েক মাসের আন্দোলন-সংঘাতে দেশে বারবার অচলাবস্থা তৈরী হচ্ছে। চলমান অস্থিরতা দমনে সরকার পুলিশ বাহিনীকে প্রয়োজনে গুলি ছোড়ার নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছে। মাঠে যোগ করা হয়েছে বিজেবি। ফলে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাণহানির ঘটনা। পুলিশের গুলি থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু, নারী, সাধারণ পথচারীসহ আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা। দেশের বিভিন্ন স্থানে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সরকারের উর্ধ্বতন মহল প্রয়োজনে সেনা বাহিনী মোতায়েন করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিরোধী মতকে দমনে সরকার যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। চলমান এ অস্থিরতা নিরসনে সরকার যদি বিরোধী দলের সাথে সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে তাহলে আরেকটি এক-এগার’র হাত থেকে রক্ষা পাবে দেশ। প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র।
দেশের মানুষ সব সময় যে কোন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সামাধান কামনা করে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যদি দেশের মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করে, তাহলে বিরোধী দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সামাধানে পৌছাবে বলে আমি মনে করি। তাতেই বরং দেশের এবং দেশের মানুষের উপকার হবে।
বিষয়: রাজনীতি
৯৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন