আরেকটি রায় এবং সত্যের মৃত্যু
লিখেছেন লিখেছেন বাঘা ওসমান ২৪ জুন, ২০১৪, ০১:৩৫:০৬ রাত
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত অভিযোগে আটক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর সাবেক মন্ত্রী বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায়ের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্যের মধ্যে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১
গত ১০ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের পক্ষে মোহাম্মদ আলী, তুরিন আফরোজ ও সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর আসামীপক্ষে মিজানুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন ১৩ মার্চ থেকে। ২৩ মার্চ উভয়পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। সিএভি করার ঠিক তিন মাস পর আজ রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।
কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ১৬টি অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৮ মে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৬টি অভিযোগ হল :
১নং অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাতেন। একাত্তরের ৪ জুন পাকিস্তানী সেনারা তাকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে হত্যা করা হয়।
২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানী সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানী সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে রাজাকাররা।
৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্প ছিল। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- চালাতে থাকে। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।
৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনার করমজা গ্রামে নিজামীর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় হাবিবুর রহমান নামে একজনকে হত্যা করা হয়। ৮ মে নিজামী রাজাকার ও আলবদর বাহিনী করমজা গ্রাম ঘিরে ফেলে ৯ জনকে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনী একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
৫নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনারা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ২১ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। এ সময় বাড়ি-ঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজামীর নির্দেশে ২৭ নবেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে অভিযান চালায় রাজাকার ও পাকিস্তানী সেনারা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।
৭নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ নবেম্বর মধ্যরাতে নিজামীর তথ্যমতে পাকিস্তানী বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে সোহরাব আলীকে আটক করে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করে।
৮নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট নিজামী নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি, জালালদের হত্যার জন্য পাকিস্তানী সেনাদের প্ররোচনা দেন।
৯নং অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজামীর তথ্যমতে পাকিস্তানী বাহিনী পাবনার বৃশালিখা গ্রাম ঘিরে ফেলে প্রফুল্ল, ভাদু,মানু,ষষ্টি প্রামানিক, জ্ঞানেন্দ্রনাথ হাওলাদার এবং পল্টুসহ ৭০ জনকে হত্যা ও ৭২টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
১০নং অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুন্ডু প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে যান। নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা তার বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।
১১নং নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত সভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তান আল্ল¬াহর ঘর। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তিনি প্রিয় ভূমির হেফাজত করছেন। দুনিয়ার কোনো শক্তি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে না।
১২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে শত্রুরা অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তিনি পাকিস্তানের শত্রুদের সমূলে নির্মূল করার আহ্বান জানান।
১৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রসংঘের সভায় নিজামী বলেন, হিন্দুস্তানের মূল ভূখ-ে আঘাত হানতে রাজাকার, আলবদররা প্রস্তুত।
১৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী প্রত্যেক রাজাকারকে ঈমানদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্রসংঘের সদস্য, রাজাকার ও অন্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেন নিজামী।
১৫নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। নিজামী প্রায়ই ওই ক্যাম্পে গিয়ে রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
১৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।
আমার কথা হল , আমরা যারা পাঠক , শ্রোতা , দর্শক , আসুন স্বজ্ঞানে একটু চিন্তা করে বলি এমন ব্যক্তি কি আদৌ এসব অপরাধে জড়িত ছিল । পক্ষ বা বিপক্ষ নয় , কারন আমি স্বাধীনতার ৩০ বছর বছর জন্ম গ্রহন করেছি , তারপরের এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এহেন অপরাধের কথা শুনলে মনে হয় কি বিশাল ষড়যন্ত্রের শিকার আজ বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃতরা । আফসোস আমরা হয়ত বুঝার পরেও নিশ্চুপ । কারন হল শেখের বেটি বান কি মুন আর জন কেরী কে যখন তোয়াক্কা করে না তখন কি আর আমাদের মত আম জনতার কথায় বা লেখায় কিছূ আসবে তার । তার বাপ তার নামে এ রাজ্য উইল করে দিয়ে মরে গেছে , আর এ শক্তিতেই নিজের তৈরী করা আদালতে নতুন নতুন সিরিয়াল বানিয়ে ডা্ইনী রুপে প্রকাশ ঘটাচ্ছে । একের পর এক রায়ে একটি করে জীবন্ত পবিত্র ফুল ঝড়ে যাচ্ছে । নূন্যতম অপরাধ বোধ নেই শেখের বেটির ।
আপনাদের কি মনে হয় , হাসিনীয় আদালতে আজ যাদের বিচারের নামে প্রহসনের নাটক হচ্ছে এর বাস্তবতা কতটুকু ?
এরকম তার ইচ্ছে অনুয়ায়ী একটি করে রায়ে একেক জনের জীবন শেষ হয়ে যাবে , আর আমরা শুধূ দু:খ প্রকাশ করব ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন