হাসিনানামার অংশ বিশেষ
লিখেছেন লিখেছেন বাঘা ওসমান ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:২১:০১ দুপুর
প্রকৃতির ডাকেই ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ । আর এসেই শুরু করে তাদের আসার রীতি অনুয়ায়ী যত সব নোংরামী । দলীয়করণ : পাবলিক টয়টেল থেকে শুরু করে রাষ্টপতির ভবন পর্যন্ত সব খানে হাসিনার দত্তক সোনার ছেলেরা নিয়োগ পায় ।
আর এই সব কৃত্রিম নকল সোনাদের চাকুরির বন্দোবস্ত করা মা হাসিনার নির্বাচনী ইশতিহার ছিল ।
পক্ষান্তরে বিরোধী দলের যে কেউ যত যোগ্যই হোক না কেন তাকে চাকুরি দেয়া যাবে না উপরন্ত কোন ভাবে যদি প্রমান পাওয়া যায় বিরোধী দলের কোন লোক এখনো গুরুত্বপূর্ন পদে বহাল আছে , তাহলে তাকে করা হয় ওএসডি কিংবা বদলি করা হয় বান্দরবন না হয় খাগরাছড়ি ।
হাসিনার এই দলীয় নিয়োগ এর ফল কি ?
আজ সোনার ছেলেরা সাংবিধানিক কোন প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই নিজেদের বাকশালী আড়তে ফুটপাতের ভিখারী থেকে কোটিপতি পর্যন্ত সকলের কাছে আদায় করছে হাসিনা-মুজিব উন্নয়ন প্রকল্পের হাদিয়া বা মাশোয়ারা ।
ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধকৃত ভিজিএফ কার্ড থেকে শুরু করে মন্ত্রি পরিষদের চেয়ার-টেবিল বিক্রির টেন্ডার সমুলে গ্রাস করছে হাসিনার আদরের সোনা মনিরা ।
এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি দু লাইন লিখেছিলেন িএভাবে .......
গাছ ,ঘাস ,মাছ খাব , খাব নদীর পাড় ।
বাড়ি-ঘর সবি খাব যা আছে সবার ।
রাস্তা খাব , বস্তা পাব , করব দখলদারি
কয়েক দিনে কোটিপতি , আমরা হব সবি ।
মা হাসিনার আর্শিবাদে আমরা যাব এগিয়ে
থাক ,পড়ে থাক বাংলাদেশ হাজার ক্রোশ পিছিয়ে ।
এভাবে দলীয় লোকদেরকে উদর পূতির মহা সুযোগ দিয়ে হাসিনা কি করে ভিশন ২১ সফল করার মিথ্যা স্বপ্ন এদেশের অভাগা জাতিকে দেখান তা সতি হাস্যকর ।
সমস্ত ক্ষমতা নিজের কাছে রেখে তিনি দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজের আত্নীয় -স্বজন ও দলীয় বলদদেরকে উপাচর্য নিয়োগ করেন ।
যার ফলে আজ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হচ্ছে তা সবার দৃষ্টিগত । জাবি উপাচর্য মো: আনোয়ার হোসেন যিনি জন্মকাল থেকেই বেলজ্জা , বেশরম । যার নূন্যতম ব্যক্তিত্ব বলতে কিছু নেই ।
কারণ হল এক আনোয়ারের জন্য জাবি শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি । তুই আনোয়ার কি এক বারের জন্য ও হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত চিন্তা করে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারিস না ।
শুধু তোর মা হাসিনা কতক্ষনে কি বলবে তার অপেক্ষায় থাকবি , শালা তোর বয়স হয়েছে তুই তোর ভালোটা বুঝতে পারিস । নাকি এ ভালোটা ও তোর মা হাসিনার পক্ষ থেকে হয় ।
শুধু দলীয় হারামী আনোয়ারকে নিয়োগ দেয়ার ফলেই জাবিতে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি ।
একই ভাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই উপাচর্য কে নিয়ে মহাজটিয় মহা বিরেোধ । তা কবে নাগাদ শেষ হবে তা হাসিনা ছাড়া অন্য কোন মানুষ বলতে পারে না ।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রেকর্ড পরিমান দলবাজির নজির উপস্থাপন করল এই খুনি হাসিনা ।
এ ছাড়া তার প্রতক্ষ্য মদদে যে দুনীতি প্রসার হয়েছে তা স্বাধীনতার পর আর কোন সরকারের আমলে হয়নি ।
যার সামান্য কিছু নমুনা নিচে তুলে ধরা হল ::
রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুত্ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাট সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শাসকদলীয়দের লুটের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে গোটা বিদ্যুত্ খাতকে। এ পর্যন্ত কেবল সরকারি কোষাগার থেকেই ভর্তুকির মোড়কে লোপাট হয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি বিল বাবদ আরও হাজার হাজার কোটি টাকা যাচ্ছে একই খাতে। উচ্চ দরে বিদ্যুত্ কেনার মাধ্যমে মেয়াদান্তে কুইক রেন্টাল এবং রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের মালিকানা সরকারের অধীনে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব কেন্দ্রের মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর ফলে কেবল রেন্টাল, কুইক রেন্টাল খাতেই রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিদ্যুত্ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুতের পর টেন্ডার । বর্তমান সরকারের পুরো মেয়াদে টেন্ডারসন্ত্রাস ছিল অপ্রতিরোধ্য।
টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বাহিনী। যেখানে টেন্ডার, সেখানেই হামলে পড়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডাররা। মন্ত্রী-এমপিরাও কম যান না। ফলে প্রকৃত ঠিকাদাররা ছিলেন একেবারেই অসহায়। কাজ না পেয়ে অনেক পেশাদার ঠিকাদার অফিস পর্যন্ত চালাতে পারছেন না। কোনো কোনো ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অগ্রিম ঘুষ দিয়ে কাজ কিনে নিচ্ছেন। ফলে তারা অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করে ঘুষের টাকা তুলে নিচ্ছেন।
সরকারের শেষ সময়ে অনেকটা মরিয়া হয়েই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে পেশি আর অস্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করছে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও বেড়ে গেছে । গত ২৪ জুন চট্টগ্রামে রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুসহ দুজন নিহত হয়। এ ঘটনায় ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও কিছুদিন পর তারা পার পেয়ে যায়।
সংসদের অধিবেশন কক্ষের জন্য কার্পেট কেনার দরপত্র জমা দিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন আইনমন্ত্রীর ছেলে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সাত-আট যুবকের হুমকির কারণে আরও কয়েকজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে পারেননি। বিদেশি এই কার্পেটের দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ৩১ অক্টোবরের এ ঘটনায় জড়িত থাকায় দুই কর্মকর্তাকে তাত্ক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন গণপূর্ত সার্কেল-৪-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির চৌধুরী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদ মোহাম্মদ কবির। বাধা দেয়া যুবকদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্পিকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এদের পরিচয় জানতে চেয়েছেন। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের ছেলে মাহফুজ শফিক অবশ্য স্পিকারের হস্তক্ষেপে পরে দরপত্র জমা দিতে সক্ষম হন।
শেখ সোহেলের বাধার কারণে ঠিকাদাররা সম্প্রতি খুলনায় রূপসা খানজাহান আলী সেতুর টোল আদায়ের সার্ভিস চার্জের দরপত্র জমা দিতে পারেননি। শেখ সোহেল বাগেরহাট-১ আসনের (মোল্লাহাট-ফকিরহাট) সংসদ সদস্য শেখ হেলালের ভাই। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সরকারি ভবনে তত্পর। শিক্ষা ভবন, সড়ক ভবন, মত্স্য ভবন, বিদ্যুত্ ভবন, ঢাকা সিটি করপোরেশন—সর্বত্রই তাদের আনাগোনা। এসব ভবন থেকে সারাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন কাজ ও কেনাকাটা সরকারি সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করা হয়। আর যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমেই সবরকম ঠিকাদারি কাজের বিলিবণ্টন হয়। আপস-মীমাংসার মাধ্যমে দরপত্র ফেলা হয়। আবার আপস না হলে ঘটে অস্ত্রের মহড়া।
মহানগর যুবলীগের সাবেক নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য (বৃহত্তর বরিশালের একটি আসনের) পুরো রাজধানীর টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রায় সব টেন্ডারই বণ্টন হয় তার ইশারায়। টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের কারণে দলের এক নেতাকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অত:পর খুন ও গুম :
গণহত্যার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ শেষ করেছে। পাঁচ বছরে দেশে এমন বহু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যার ভয়াবহতা বর্ণনা করলে শিউরে উঠতে হয়। পিলখানায় বিডিআর ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণহত্যার মতো নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে আর ঘটেনি।
পিলখানায় ৫৭ চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। এদের অনেকের লাশ পচে-গলে বীভত্স হয়ে যায়। স্যুয়ারেজ লাইনে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। গণকবর দেয়া হয় তখনকার বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ আরও অনেক পদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে।
এদিকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সারাদেশ। সাঈদীর মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা ইসলামপ্রিয় নারী-পুরুষসহ সাধারণ জনগণের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বর কায়দায় হত্যাযজ্ঞ চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। আল্লামা সাঈদীর রায় ঘোষণার পর সারাদেশে একটানা ১৫ দিন ধরে চলতে থাকা গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে বিজিবি ছাড়াও কোথাও কোথাও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে খুন হয়
দেড় শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদরাসা শিক্ষক, ছাত্র, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ ইসলাম অবমানকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
অন্যদিকে দেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সমন্বয়ে গঠিত ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন মুসল্লিরা। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর হেফাজতে ইসলামের মুসল্লিরা রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান করলে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর পৈশাচিক কায়দায় গুলি চালায় পুলিশ, র্যাব, বিডিআরের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। গভীর রাতে পুরো মতিঝিল এলাকায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যৌথবাহিনীর নির্বিচার গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ এবং বেধড়ক পিটুনিতে প্রাণ হারান বহু ইসলামপ্রিয় মানুষ।
পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ সময় সারাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বিএনপি দাবি করেছে, তাদের ৩০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত ঘটেছে। বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশ ঘটনারই চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ; এমন কি এসব হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদেরও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৪৫ বিরোধী নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্বিচারে চালানো গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চার বছরেই রাজনৈতিক সহিংসতা ও দুর্বৃত্তায়নের ফলে ৭৭৫ জন নিহত হন। চলতি বছর সহিংসতা আরও বেড়েছে। অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে ১৭ জন নিহত এবং ১৬৪৩ জন আহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ভুয়া মামলা, শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ড, গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার সংস্থার ওপর আক্রমণের মধ্য দিয়েই বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে। স্বৈরাচারী মহাজোট সরকারের এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে আজ দেশে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত এবং বিপন্ন। পাঁচ বছরে দেশে এমন বহু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার ভয়াবহতা বর্ণনা করলে শিউরে উঠতে হয়। সরকারের শুরু থেকেই পুরো মেয়াদজুড়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে মিছিল-সমাবেশে নির্বিচারে চালানো হয় গুলি।
ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের আমলে নতুন মাত্রায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছে গুম এবং গুপ্তহত্যার। সরকারের যাত্রা শুরুর পর থেকেই গুপ্তহত্যা ও গুমের মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে চার বছরে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ দেশে দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর গুম-হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এখনও গুম হচ্ছে মানুষ। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা অসহায় হয়ে পথ চেয়ে আছেন। আদালত-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মানবাধিকার সংস্থা, রাজনৈতিক নেতা, পত্রিকার অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও স্বজনের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। জানতে পারছেন না তাদের স্বজন বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিরা জীবিত না থাকলে তাদের অন্তত লাশ ফেরত চাইছেন স্বজনরা সংবাদ সম্মেলন করে। সে অধিকারটুকু থেকেও তারা আজ বঞ্চিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পৌনে চার বছরে বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। দুবছর পার হলেও বিএনপি নেতা ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের খোঁজ মেলেনি। একইভাবে গুম হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী। গুম হয়েছেন তার গাড়িচালক আনসার আলীও। শ্রমিক নেতা আমিনুল গুম হওয়ার ক’দিন পর তার লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রশিবির নেতা ও সিলেট ছাত্রদলের দুই নেতাও গুম হয়েছেন। একের পর এক গুমের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও গুমের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদল, যুবদল, শিবির নেতা, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও বিরোধী মতের মানুষ। এ তালিকায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। গুম হওয়ার পর কারও লাশ পাওয়া যায় নদীতে, ডোবায়, জঙ্গলে ও ঝোপের মাঝে। তবে অনেকেরই খোঁজ পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব পরিচয়ে আটক করে নেয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আল-মোকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহর খোঁজ মেলেনি ৭ মাসেও। ঢাকায় ব্যক্তিগত কাজ শেষে হানিফ এন্টারপ্রাইজের গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন তারা। রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কল্যাণপুর বাস কাউন্টার থেকে ঝিনাইদহ-৩৭৫০ নম্বর গাড়ির সি-১ ও সি-২ সিটে বসে ক্যাম্পাসে আসার পথে রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মাঝামাঝি সময়ে সাভারের নবীনগর পৌঁছালে র্যাব-৪-এর সদস্য পরিচয় দিয়ে গাড়িটি থামানো হয়। এ সময় র্যাবের পোশাক ও সাদা পোশাকধারী ৮-১০ ব্যক্তি গাড়িতে উঠে আল-মোকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় বলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে নিশ্চিত করেন গাড়িতে অবস্থানকারী যাত্রী এবং সুপারভাইজার সুমন। এরপর থেকে র্যাবের হাতে আটক দুই ছাত্রের কোনো সন্ধান পাচ্ছে না তাদের পরিবার। র্যাব তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনারকে গত বছর ১ এপ্রিল র্যাব আটক করে গুম করেছে বলে অভিযোগ করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। অন্যদিকে গত ১৩ আগস্ট সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ৪ যুবককে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা হলো—তুষার, মোহন, মিঠু ও মোস্তফা। আজও তাদের খোঁজ মেলেনি। এছাড়া বরিশাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি ফিরোজ খান কালুর খোঁজও মেলেনি। চট্টগ্রাম নগরীর ঈদগাহ এলাকার ভাড়া বাসার কাছ থেকে কালুকে জোরপূর্বক কে বা কারা একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী আমেনা আক্তার দীপ্তি।
অপরদিকে ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা বিএনপি সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে র্যাব সদস্যরা গাজীপুর থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। গাজীপুর-জয়দেবপুর বাইপাস রোডের চৌরাস্তা এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী ৪-৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তার গাড়ি থেকে জোর করে অন্য একটি গাড়িতে তুলে নেয়। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ নেই।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৫০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন