সামাজিক অবক্ষয়ের মূল্য না চুকিয়ে উপায় নেই
লিখেছেন লিখেছেন বাঘা ওসমান ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৪৯:৪৩ রাত
দরিদ্র পরিবারের যে মেধাবী তরুণীটির মৃত্যুর ঘটনায় সারা বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, সে অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যেও লেখাপড়া করে একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল। মানুষরূপী শ্বাপদের দল সেই স্বপ্নের কী অপমৃত্যুই না ঘটিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছেন, Every girl and woman has the right to be respected, valued and protected (সকল কন্যা এবং নারীর অধিকারকে সম্মান ও মূল্য দিতে হবে, তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে). তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খান তার টুইটারে মন্তব্য করেছেন, আমি এই অসুস্থ সমাজ এবং সংস্কৃতির একজন হওয়ার জন্য লজ্জাবোধ করছি। এক কথায় ভারতীয় মাত্রই এখন এক প্রকার আত্মোপলব্ধির (Soul- searching) প্রয়াসে রত হয়েছে। অবশ্য একবিংশ শতাব্দীর ধর্মহীন, জড়বাদী (materialistic) সমাজে এই ইস্যুও খুব বেশিদিন গণমাধ্যমে আলোচিত হবে, এমন প্রত্যাশা না থাকাই শ্রেয়। এসব ঘটনা সমাজ দেহে পচনের লক্ষণ মাত্র। এই পচনের পেছনে অপসংস্কৃতি এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। বলিউডের কাজ-কারবারের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করা যাক।
বলিউডের সিনেমায় কিছুদিন ধরে আইটেম সং (Item song) নামক এক প্রকার অশ্লীল নৃত্যগীতের প্রচলন ঘটেছে, যা পিতা-মাতা কিংবা পুত্র-কন্যা নিয়ে দেখা কোনো ভদ্র পরিবারে সম্ভব নয়। হিন্দি সিনেমার অশ্লীলতা নোংরা পর্নো ছবিকে পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। যে শাহরুখ খান ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অবক্ষয় নিয়ে টুইটারে হা-হুতাশ করছেন, এতদিন তার কাছ থেকে বলিউডি ছবির নোংরামি নিয়ে কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি। বছর দুয়েক আগে তিনি এবং হিন্দি ছবির আরও কয়েকজন নায়ক-নায়িকা বাংলাদেশে স্টেজ শো করতে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে তরুণীরা যেভাবে স্বল্প বসনা হয়ে উত্তেজক নৃত্য পরিবেশন করেছিল, সেটি আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সমাজ চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। দিনে চব্বিশ ঘণ্টাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে এসবের কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
সিনেমার কথা বাদ দিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞাপনের বিষয়ে ভাবুন। নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করারও বোধহয় একটা সীমা থাকা দরকার। বোতলজাত আমের রস নিয়ে এক বিজ্ঞাপনচিত্রে বলিউডের শীর্ষ নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ অভিনয় করেছেন। বিজ্ঞাপনটির প্রতিটি ফ্রেমে অর্ধ বিবসনা নায়িকার শরীরী ভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তিতে বাত্স্যায়নের কামসূত্রের প্রতিফলন রয়েছে।
পুরুষদের ব্যবহার্য ডিওড্যারান্ট (Deodorant)-এর বেশ ক’টি বিজ্ঞাপনে নারীদের কুিসতভাবে কামতাড়িত দেখানো হয়েছে। এ জাতীয় একটি বিজ্ঞাপনে পিতার বয়সী এক লোক সেই ডিওড্যারান্ট শরীরে মাখার পর তার পরনের পোশাক কন্যাসমা এক তরুণীর ঝাঁপিয়ে খুলে দেয়ার দৃশ্য দেখলে বিজ্ঞাপন চিত্রটির নির্মাতাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত মনে হওয়া উচিত। বিজ্ঞাপনটি দেখে আমার অন্তত বমনেচ্ছা হয়েছে। মোট কথা, ভারতের শো-বিজে অসভ্যতার সকল সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। সুতরাং, দিল্লির বাসে ধর্ষিত হয়ে নিহত তরুণীর মৃত্যুর দায় থেকে সংস্কৃতির নামে সমাজে অশ্লীলতা আনয়নকারীরাও মুক্তি পেতে পারে না।
আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের এই যুগে বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মিডিয়া দ্বারা ক্রমাগত আক্রান্ত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের ভারতে প্রবেশাধিকার না থাকলেও ভারতের সবগুলো চ্যানেলের অনুষ্ঠান আমাদের অন্তঃপুরে বিনা বাধায় প্রবেশ করেছে। সুতরাং, এতক্ষণ ওখানকার যেসব অশ্লীল ছায়াছবি এবং বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে আলোচনা করলাম, তার অনিষ্টকর প্রভাব থেকে আমাদের তরুণ সমাজও মুক্ত থাকতে পারছে না। এছাড়া ইন্টারনেট এবং সামাজিক নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা দেশের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর পিতা-মাতাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
তদুপরি বর্তমান সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে প্রবল প্রচারণা চলছে। ক’দিন আগে এ দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক ও সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবালের একটি কলাম পড়লাম। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘তোমরা যারা শিবির করো’ শিরোনামের কলামটিতে তিনি শিবিরের কর্মীদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করেছেন। সেই লেখার একটি অংশ আমার আজকের মন্তব্য প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে উদ্ধৃত করছি। জাফর ইকবাল শিবির কর্মীদের উদ্দেশ্য করে সখেদে লিখেছেন, ‘যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে।’ একজন অধ্যাপকের তার ছাত্রছাত্রীদের পরস্পরকে ভালোবাসায় উত্সাহিত করার এই প্রাণান্তকর চেষ্টায় আমি বিস্মিত হয়েছি। শিবির করা ছেলেদের ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয় এমন তথ্য জাফর ইকবাল কোথা থেকে পেয়েছেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন।
ব্রিটিশ ভারতে ১৯০৫ সালের পর বঙ্গভঙ্গ রোধের জন্য বাঙালি হিন্দু তরুণদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসী আন্দোলন গড়ে ওঠার সময় তাদের ভাষায় দেশমাতৃকাকে শৃঙ্খলমুক্ত করার সংগ্রামে আত্মবলিদানে ইচ্ছুকদের চিরকুমার থাকার একটা প্রথার কথা ইতিহাসের বিভিন্ন বইতে পড়েছি। চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনও চিরকুমার ছিলেন। সেইসব বিপ্লবীর জীবন নিয়েই শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘পথের দাবী’ নামক উপন্যাস লিখেছিলেন। সেই উপন্যাসের নায়ক সব্যসাচীও বিয়ে করেননি। তবে একটি প্লেটোনিক প্রেমের ইঙ্গিত বোধহয় কাহিনীতে ছিল। কিন্তু, ইসলামে এ জাতীয় বৈরাগ্যের কোনো দর্শন নেই। সুতরাং শিবির কর্মীদের প্রেম করায় দল থেকে বাধা দেয়ার কোনো আদর্শিক কারণ আছে বলে মনে হয় না।
সূরা হাদীদ-এর ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘আর বৈরাগ্যবাদ তো তাদেরই আবিষ্কৃত, আমি তো তাদের এ বিধান দেইনি।’ হাদিস শরীফেও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই। তারপরও শিবিরের ছেলেদের জীবনে কথিত প্রেমহীনতার জন্য অধ্যাপক মহোদয়ের হা-হুতাশ কি প্রগতিশীলতার নামে সমাজে উচ্ছৃঙ্খলতাকে উস্কে দেয়ার প্রয়াস? ছাত্রজীবনে আমার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সৌভাগ্য হয়েছিল। বুয়েটে পাঠদানকালে রাশভারি শিক্ষকরা সর্বদা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলতেন, কখনও প্রেম নিয়ে কথা বলেছেন এমন স্মৃতি স্মরণে আসছে না। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুড়ো বয়সে পড়েছি। সেখানে তরুণ বয়সে পড়লে হয়তো জাফর ইকবালের মতো কোনো প্রগতিশীল শিক্ষকের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হতো। এই অধ্যাপকের মতো যারা বাংলাদেশের সমাজ জীবন থেকে ইসলাম বর্জন করে জনগণের চিন্তা-চেতনাকে ভারতমুখী করতে চান, তাদের জন্য দিল্লির মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো শিক্ষণীয় হতে পারে।
বাংলাদেশের নারীরাও ধর্ষকামী পুরুষদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় টাঙ্গাইলের এক ১৫ বছরের কিশোরীর গণধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অসহায় স্কুল ছাত্রীটি ২১ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়লেও আমাদের নারী নেত্রীদের ঘুম ভাঙেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগের নেতার ধর্ষণে সেঞ্চুরির সংবাদ দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে এক সময় ছাপা হয়েছিল। ধারণা করছি, অধ্যাপক জাফর ইকবালের কাছে ইসলাম ধর্ম চর্চায় অভ্যস্ত শিবিরের ছেলেদের তুলনায় ছাত্রলীগের সেই ধর্ষক অনেক বেশি আদরণীয়।
গত চার বছরে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণা লক্ষণীয়ভাবে তীব্র হয়েছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ইসলামকে জড়িত করার একটা অপচেষ্টা এ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আমাদের অধিকাংশ নাটকেই দাড়ি-টুপিওলাদের নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা হয়ে থাকে। ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সোপ অপেরাগুলোতে পূজা-অর্চনা অত্যন্ত মহিমান্বিত করেই দেখানো হয়। আমাদের নাট্য জগতের প্রগতিশীলরা সেখানে ধর্মান্ধতা খুঁজে না পেলেও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইসলাম ধর্মের প্রবেশাধিকার প্রায় নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। শহীদ মিনারে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোতে কিংবা প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠান আয়োজনে এ দেশের সুশীলরা (?) সোত্সাহে অংশগ্রহণ করলেও সেখানে কোনো মুসলিম মনীষীর জানাজা অনুষ্ঠানে তাদের বিষম আপত্তি। আপন ধর্মের প্রতি এমন বিরাগের উদাহরণ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আমি অনেক দেশ ভ্রমণ করেও দেখতে পাইনি।
এই বিশেষ শ্রেণীটির কাছে তীব্র জাতবৈষম্যের হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস নাকি উদার, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপ্রিয়, এবং খ্রিস্টধর্ম আধুনিক রূপে বিবেচিত হলেও ইসলাম নিয়ে তাদের সমালোচনার অন্ত নেই। আলখাল্লা পরিহিত খ্রিস্টান পাদ্রিরা এদের ভাষায় সৌম্যদর্শন হলেও, পায়জামা-পাঞ্জাবি গায়ে, টুপি পরা মসজিদের ইমাম একজন ইসলামী জঙ্গির অধিক মর্যাদা পান না। অথচ, সময়ের বিচারে ইসলাম ধর্মই সর্বশেষে এসেছে। এ দেশের নারীবাদীদের অধিকাংশই হয়তো এটাও জানেন না যে প্রথম মুসলমান এবং ইসলামের প্রথম শহীদ উভয়ই মহিলা। সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া নীতিবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ধর্ম মতের প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধা থাকা আবশ্যক। ধর্ম মানুষকে পরিচিতি দেয়ার পাশাপাশি সমাজ জীবনেও শৃঙ্খলা আনয়ন করে। ইসলামের আবির্ভাব আইয়ামে জাহেলিয়াতের আরবভূমিকে সামাজিক শৃঙ্খলা ও ন্যায় বিচারের মানদণ্ডে বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূখণ্ডে পরিণত করেছিল। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সর্বপ্রকার অশ্লীলতা পরিহার করে মানব চরিত্রের রিপুকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন শরীফ একইভাবে ১৫০০ বছর আগে সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণকর বিধান রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। সূরা নূর-এর ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্তায়ালা নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।’
প্রগতিশীলতার আবরণে যারা ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করছেন, তাদেরই আজ সকল প্রকার সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দায় গ্রহণ করতে হবে। এ দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ইসলাম বিরোধীদের আধিক্য লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থার এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, কোনো ধর্মপ্রাণ অতিথি সেসব অনুষ্ঠানে ইসলামের পক্ষে মন্তব্য করতে গিয়ে রূঢ় আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কিছুদিন আগে এক টক শোতে বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয় প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক সচিব, মো. আসাফদ্দৌলাহ সুশাসনের উদাহরণ হিসেবে হজরত ওমর (রা.)-এর শাসন কালের উল্লেখ মাত্র সেই টক শোর তরুণ উপস্থাপক তাকে অত্যন্ত অভদ্রভাবে থামিয়ে দেন। স্পষ্ট ভাষণের জন্য বিশেষ পরিচিত, প্রবীণ একজন ব্যক্তির সঙ্গে সেই আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছিল এ দেশের গণমাধ্যমে ইসলাম প্রসঙ্গে আলোচনা করাটা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এই পরিবেশে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত করাও পিতা-মাতার জন্য ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে।
ক’দিন আগে ইসলাম চর্চার অপরাধে মগবাজারের এক বাসা থেকে ২০ তরুণীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একজন অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে নির্যাতনও করা হয়েছে। মহিলা পরিষদসহ বাংলাদেশের কোনো মানবাধিকার অথবা নারীবাদী সংগঠন এ বিষয়ে নিন্দাসূচক একটি বাক্যও অদ্যাবধি উচ্চারণ করেনি। আমি নিশ্চিত যে, গুলশান-বারিধারার কোনো ক্লাব থেকে নৃত্যরত তরুণীদের ৩১ ডিসেম্বর রাতে এভাবে গ্রেফতার করা হলে চারদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে যেত। ভারতের রাজধানীর এই কলঙ্কজনক ঘটনা আমাদের সমাজপতিদের জন্য শিক্ষণীয় হওয়া উচিত। সরকার এবং বিরোধী দল নির্বিশেষে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সুস্থ জাতি গঠনে অপসংস্কৃতির অবাধ আগ্রাসনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে এখনই সতর্ক হওয়া কর্তব্য। কিছু বিদেশি আপত্তিজনক চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন এ দেশে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়নসাপেক্ষে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সর্বনাশ অনিবার্য হয়ে উঠবে। মানব কল্যাণ অথবা বিপর্যয় সৃষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। পারমাণবিক চুল্লি থেকে যেমন স্বল্প খরচে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব, একইভাবে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র তৈরিতেও একই চুল্লির প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই আমাদেরও বিজ্ঞানের অশুভ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক রূপে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। সন্তানদের মঙ্গল চিন্তা অন্তত আমাদের সঙ্কীর্ণ দলীয় ভাবধারা মুক্ত হয়ে করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন