এবার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পাননি শেখ হাসিনা : এটি একটি রিকগনিশন ক্রেস্ট : সাউথ-সাউথ নিউজ কর্তৃপক্ষ।
লিখেছেন লিখেছেন কিং মেকার ০২ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৫৮:৩৯ রাত
এবার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অ্যাওয়ার্ড প্রদানকারী সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাউথ-সাউথ নিউজ থেকে ‘রিকগনিশন ক্রেস্ট’ নিয়েছেন। অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২০১৩ সালের অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রাপ্ত ক্রেস্টের কোনো সম্পর্কই নেই। তার ‘অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির রেকর্ড’ ভারী করতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বিশেষ লবিংয়ে তাত্ক্ষণিক এই ক্রেস্টের ব্যবস্থা করা হয়। সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ক্ষমতাও নেই শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সাউথ-সাউথ নিউজের। নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে অনুসন্ধান চালালে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।
সাউথ-সাউথ নিউজের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস লোরেনজোর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলে তিনি অ্যাওয়ার্ড প্রদানকারী মূল প্রতিষ্ঠান সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ম্যাথিউ ম্যাককালেবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ম্যাথিউর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৩ সালের সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের ওয়েবসাইটে তার নাম কোথাও উল্লেখ করেননি কেন? তিনি নিজের ডেস্কে গিয়ে কম্পিউটারে অ্যাওয়ার্ডের ফোল্ডার দেখলেন। এরপর ডেস্কে রাখা ফাইলগুলো দেখে নিলেন। পরে জবাবে বললেন, ‘নো, শেখ হাসিনা ডিড নট গেট দ্য অ্যাওয়ার্ড দিস ইয়ার। সি হ্যাজ গট ইট অ্যাট ২০১১।’ (অর্থাত্ না, শেখ হাসিনা এ বছর অ্যাওয়ার্ড পাননি। তিনি ২০১১ সালে এটি পেয়েছিলেন।)
‘গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই অফিসেই শেখ হাসিনাকে সাউথ-সাউথ নিউজের প্রেসিডেন্ট ফ্যান্সিস লোরেনজো একটি ক্রেস্ট তুলে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করতেই ম্যাথিউ জবাব দিলেন—হ্যাঁ, সেটা ছিল একটি রিকগনিশন ক্রেস্ট। সেটা কোনো অ্যাওয়ার্ড নয়।’
এদিকে সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড না পেয়েও দেশ-বিদেশে ব্যাপক মিথ্যা প্রচারণা চালানোয় নিউইয়র্কে বাংলাদেশী প্রবাসীরা লজ্জিত। প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে সোমবার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি ছিল বাঙালি পাড়ায় টক অব দ্য ডে। জ্যাকশন হাইট, জ্যামাইকা, ম্যানহাটন ডাউন টাউন, ব্রুকলেনে এটি ছিল সবার মুখে মুখে।
আর ‘শেখ হাসিনার সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তির খবর মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে জানালে সাউথ-সাউথ নিউজের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইটস্্ ইওর রং। ইউ ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড দ্য ফ্যাক্ট। ইটস্্্ এ পলিটিক্যাল ম্যাটার।’ (অর্থাত্, এটা তোমাদের ভুল। তোমরা বিষয়টি বুঝতে পারনি। এটা একটি রাজনৈতিক ব্যাপার।)
সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ম্যাথিউ ম্যাককালেব আরও জানালেন, ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। রিকগনিশন ক্রেস্ট প্রদানের বিষয়টি কোনো শিডিউলে ছিল না। এটা হঠাত্ করেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয় ছিল এই ‘সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড’। এজন্য স্থানীয় সময় ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে হোটেল হিল্টনে কোটি টাকা খরচ করে সংবর্ধনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে শেখ হাসিনাও সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেন। ওইদিন এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মুখ বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল হয়। আর বিএনপি এলে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হয় বাংলাদেশ। এবারের সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডকে প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি উত্সর্গ করেন। এমনকি সোমবার ঢাকায় ফিরলে দলের নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গণসংবর্ধনা দেয়।
এমন আকাশচুম্বী আলোচনার মধ্যেও ২০১৩ সালের সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের তালিকায় শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না থাকার সন্দেহ থেকেই আমার দেশ অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে প্রকৃত তথ্য। ‘গ্লোবাল গভর্ন্যান্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামের এই সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবার দেয়া হয় কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা শিলশিলা মিরান্ডা, বাইরাইনের প্রধানমন্ত্রী খলিফা বিন সালমান আল খলিফা এবং ফিজির প্রধানমন্ত্রী জোসাইয়া বরেক বাইনিমারামাকে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, তার স্ত্রী গ্রাসা ম্যাশেল এবং আমেরিকার সঙ্গীতশিল্পী ডেভিড পাইচকেও এই পুরস্কার দেয়া হয়।
গত ১২ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীতদের নাম প্রকাশ করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়ায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেয়া হয়।
এমডিজি অর্জনে সাফল্য অর্জনকারী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি খাতের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উত্সাহিত করার জন্যই ‘গ্লোবাল গভর্ন্যান্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামে সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আফ্রিকার দেশ এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার জাতিসংঘের স্থানীয় মিশন, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, জাতিসংঘের লোকপ্রশাসন নেটওয়ার্ক (ইউএনপ্যান), দ্য ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন (আইওএসএসসি), জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবং সাউথ-সাউথ নিউজের আয়োজনে ২০১০ সালে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হয়। জাতিসংঘের এমডিজি লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক হলো এই অ্যাওয়ার্ড প্রদানের প্রধান সমন্বয়ক। আর ইভেন্ট বাস্তবায়নে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করে থাকে এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাউথ-সাউথ নিউজ। পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে থাকে জাতিসংঘে তৃতীয় বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্থায়ী মিশন। এর মধ্যে রয়েছে মালাউই, ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র, জাম্বিয়া, তাজিকিস্তান, এল সালভাদর ও হন্ডুরাস।
২০১৩ সালের অ্যাওয়ার্ড প্রদানের একদিন পর নিউইয়র্কে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ম্যানহাটনের সেকেন্ড এভিনিউতে অবস্থিত সাউথ-সাউথ নিউজের কার্যালয় থেকে একটি ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই রিকগনিশন ক্রেস্ট দেয়া হয় বলে জানান আইওএসএসসি’র প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ম্যাথিউ ম্যাককালেব। শেখ হাসিনার নাম সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৩-এর স্মরণিকা, ওয়েবসাইট এমনকি কর্তৃপক্ষের অ্যাওয়ার্ড ফাইলেও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তড়িঘড়ি করে রিকগনিশন ক্রেস্ট ম্যানেজ করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন। বলা যায়, এটা নিউইয়র্কে ড. মোমেনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটি বিশেষ গিফট। এজন্য বড় ধরনের অর্থ খরচেরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ অভিযোগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ড. আবদুল মোমেনের নিউইয়র্কের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন