চোখ খুলুন , আর কতদিন ঘুমাবেন ?
লিখেছেন লিখেছেন কিং মেকার ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৪২:৫২ রাত
আশাকরি আজকের সকালটা আপনার খুব ভাল যাবে । ঘুম থেকে উঠেছেন সকালে নিশ্চয়ই অফিসে/ ভার্সিটির ক্লাসে যাবেন ? আর যদি চিকিৎসক হন তাহলে তো আপনার ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাবেন। যেখানেই যান কতটা নিশ্চিত আপনি যে আপনার গন্তব্যে নিরাপদে এবং ঠিক সময়ে পৌছতে পারবেন ? আপনার ক্লাস সকাল ০৯৫০ এ আর এখন বাজে ১০২০। নিজেকেই গালি দিচ্ছেন হয়তবা কাল কেন অত রাত জেগে ফোনে কথা বলেছিলেন ? কিংবা রাতে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের খেলা না দেখলে হয়ত আজ ক্লাসটা মিস করতেন না। তাই না ? কাওরানবাজার ও শাহবাগের জ্যাম পার হয়ে আপনি যখন কাম্পাসে ঢুকলেন তখন বাজে ঘড়িতে ১১৩০। একে তো তিনটা ক্লাস মিস তার উপর আজকে ছিল দুইটা কুইজ। নিজেকে অনেক গালি দিচ্ছেন কিংবা মন খারাপ করে ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আছেন। এখানেই বসে একটু চিন্তা করুন ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে কতো মানুষ থাকতে পারে ? প্রতি বর্গকিলোমিটারে যদি ১০ হাজার মানুষও থাকে তাহলে এই শহরে মানুষ ৩৬ লাখ। কিন্তু আসলে এর তিনগুণ মানুষ এই ঢাকাতে বসবাস করছে। কত অনুমান করছেন ? হ্যাঁ, প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। এত মানুষের চাপে যেকোনো শহরের অবকাঠামো ভেঙ্গে পরে। দিল্লীর মত শহরে (আয়তন ১৪৮৩ বর্গকিলোমিটার) ১ কোটি মানুষের চাপ সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় নগর প্রকৌশলীদের। আর সেখানে আমাদের রাজউকের প্রকৌশলীরা ফাইল টেবিলের উপত রেখে দিব্বি ঘুমান। কারণ ? একটাই, উপর থেকে কোন চাপ নেই। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যেন একটা হাসি খেলার রঙ্গমঞ্চ। বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকা ভুম্পিকম্পের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু সেখানে আমাদের রাজউক বিল্ডিংকোডের তোয়াক্কা না করেই বিল্ডিং নকশা অনুমোদন করে দিচ্ছে। আপনি মনে করছেন তাহলে মন্ত্রিরা কি করছে ? মন্ত্রিরা আপনার আমার কথা ভেবে কাজ করে বলে আপনার মনে হয় ? ২০০৫ সালে সাভারে এক গার্মেন্টসবিল্ডিং ধসে যে নিরীহ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করল তারপরেও যখন এদের টনক নরে না, যখন আড়াই বছরের এক শিশু প্রান হারায় এবং তারা বলে “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেসে......” হ্যাঁ সেটা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল। তখন তো বিরোধীদলে আওয়ামী লীগ ছিল তারা এর প্রতিবাদে একটা মানবন্ধন বা হরতাল করেছিল বলে আপনার মনে হয় ? তারা করবেনা কারণ তারা রাজনীতি করে নিজেদের পরিবারের স্বার্থে , নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ।
আপনি সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়ান এই দেশে তারা কখনো এটা চায় না- একটি ঊদাহরন দিই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্চের অক্সফোর্ড , দেখুন তো এই প্রাচ্চের অক্সফোর্ডের এখন কি অবস্থা ? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই আমাদের ভাষা আন্দলন, আগরতলা মিথ্যা মামলা , ছয় দফা আন্দলন সহ আমাদের গৌরবান্বিত মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। স্বৈরাচার সরকার পতন করে দেশে গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিল। বিশটি বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গর্ব করে বলতে পারত “আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি ।“ কিন্তু এখন ? শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালইয়েই না সারা দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে একটু চোখ বুলান দেখুন তো ছাত্র রাজনীতির নামে কি হচ্ছে ? আমরা স্বাধীনতার পূর্বে এমন রাজনীতি করেছিলাম ? সোজা কথায় আপনি যাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসছেন তারা আপনার সমস্যা সমাধানে “বদ্ধ পরিকর নয়” ।
নির্বাচনে তাদের উল্লেখযোগ্য ওয়াদাগুলো দেখুন –
২০০১ নির্বাচন (বিএনপি) –
* ৫০০ আসনবিশিষ্ট সংসদ
* মুক্তিযোদ্ধা , প্রবাসী ও গার্মেন্টস এর জন্য মন্ত্রনালয় গঠন
* নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ
* স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন
* সবার জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা
বিগত বিএনপি সরকার ২ নং ওয়াদা ছাড়া আর কোনটি বাস্তবায়ন করেছে ? আর এই ২ নং ওয়াদা পূরণ করলেও মন্ত্রণালয় তিনটি কি আদৌ কোন কাজ করেছে ? ২০০৪-০৫ থেকে BGMEA এর European Union ও USA তে শুল্কমুক্ত কোটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই গার্মেন্টস মন্ত্রনালয় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। Bureau of International Labor Affairs এর ২০০২ সালের প্রতিবেদনে বঅলা হয় - শিশুশ্রম নিষেধাজ্ঞা আরেপ করে ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ড ৮,৪০,৭৭৯ মার্কিন ডলার (১৯৯৬) থেকে নামিয়ে ৩,৭৫,৫৭২ মার্কিন ডলারে আনা হয়। এই ফান্ড আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোন চেষ্টা করেনি এই গার্মেন্টস মন্ত্রনালয়। পঙ্গু মুক্তিজদ্ধাদের চিকিৎসার বিন্দুমাত্র কোন বেবস্থা নেয়া হয়নি । তাদের পরিবারের দিকে না তাকিয়ে ওনারা তাকিয়েছিলেন বিরোধীদলের পরিবারের দিকে , এমনকি “স্বেস্তপ্ত্র” নামে ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির এক খসড়া তৈরি করেছেন। স্বাধীন দুর্নীতি কমিশন কি ২০০১-২০০৬ আমলে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে স্বাধীন ছিল ? সবাই কি বিদ্যুৎ পেয়েছিল বিএনপির (২০০১-০৬) আমলে ?
এবার আসুন একটু আওয়ামী লীগের দিকে তাকাই –
২০০৮ নির্বাচন (আওয়ামী লীগ) –
* ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব
* রাজাকারদের বিচার করব
* ২০ টাকার ভাত ১০ টাকায় ভাত খাবো
ডিজিটাল বাংলাদেশে আজো মানুষ হারিকেন জালিয়ে পড়ালেখা করে, আজো ঢাকা – রাজশাহী সহ অন্যান্য মহাসড়কে ভারী যানবাহন উল্টে পড়ে থাকে। ডিজিটালের ছোঁয়া বোধকরি শুধু ওনাদের ঘরেই লেগেছে , তাইতো ওনারা LEXUS এ করে যাতায়াত করেন। অর্ধেক সময় পারহয়ে গেলো তবুও রাজাকারদের বিচারের কাজ শুরু হলনা। হ্যাঁ , যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের নামে অভিযোগ আছে জানি। কিন্তু প্রশ্ন হল রাজাকার কি শুধুই বিএনপি ও জামায়াত দলেই আছে ? ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়ার কথা কিন্তু এখন তো না খেয়ে থাকার উপদেশ দিচ্ছেন ওনারা। মানুষ কম খেলেই নাকি জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকবে - এমন হাস্যকর কথা শুনলে বলতে হয় ওনারা মানসিক রোগীদের চাইতেও ভয়াবহ। আজ (১৭ই আগস্ট ) পত্রিকায় দেখলাম অর্থমন্ত্রী বলছেন “যোগাযোগমন্ত্রী না বুঝেই এসব কথা বলছেন।“ প্রশ্ন হল “ যিনি যোগাযোগমন্ত্রীকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন , উনিও কি না বুঝেই দিয়েছেন ?”
আপনারা সবাই যদি না বুঝে কাজ করেন তাহলে বুঝে ক্ষমতা নিলেন কার স্বার্থ উদ্ধারে ? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ? নাকি সুদূর আটলান্টিক মহাসাগর তীরবাসী আপনাদের মনিবদের ?
গত ১৩ ই আগস্ট মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমাদের দেশের কয়েকটি মেধাবী প্রান ঝড়ে গেলেও এই অবুঝ মন্ত্রী-মহদয়গণদের কিছু যায় আসেনা। শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষদের একটু আবেগ দেখিয়েই তারা তাদের সচিবালয়স্থ রঙ্গমঞ্ছে ফিরে যান। এসব দেখে বলতে ইচ্ছে করে “ ইশ বাস ড্রাইভারটা যদি তারেক ভাইয়ের মাইক্রবাসের বদলে কোন মন্ত্রীর LEXUS এ আঘাত করত, তাহলে সামান্যতম হলেও রাস্তাঘাটের সংস্কার হতো আর ভুয়া ড্রাইভারদের লাইসেন্স বাতিল হতো।“ বিরোধীদলীয় নেত্রীর এর বিরুদ্ধে কোন হরতাল বা মানববন্ধন কর্মসূচী দিলো না। দুই নেত্রী শুধু শোক প্রকাশ করেই উধাও। আমার, আপনার মত মানুষদের জন্য আফসোস এই অবুঝ মন্ত্রিরা তারেক মাসুদের জন্য ৫ মিনিটের লোক দেখানো আবেগ দেখালেও আপনার বা আমার দুর্ঘটনার জন্য ৫ সেকেন্ডের জন্যও তাদের কোন অনুশচনা হবেনা। তাই অনুরধ এইসব অবুঝ লোকদের আর ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবেন না।
আশাকরি ভাল থাকবেন এবং নিরাপদেই থাকবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৪১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন