নির্বাচন নিয়ে জনমনে সংশয় !!!

লিখেছেন লিখেছেন কিং মেকার ১০ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:৩২:৫৬ সন্ধ্যা



নির্বাচন হবে কি না-এমন প্রশ্ন সর্বত্র। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে বড় দুই জোটের বিপরীতমূখী অবস্থানের কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।

দেশের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে চায়ের টেবিল পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সবার একই প্রশ্ন, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কি? হলে কীভাবে হবে?

যেখানেই আড্ডা সেখানেই আলোচনা। আর আলোচনার বিষয়বস্তু, আগামী কয়েকমাসে দেশে কি হতে যাচ্ছে। ঈদতো গেল এখন কি হবে? দুই দলের অনমনীয় মনোভাবের কারণেই দেশের মানুষের মধ্যে এমন সংশয়।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ -বিএনপির একগুয়েমির সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তি আবারও দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে। অথবা দেশে অরাজক পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে।

এর পেছনে তাদের যুক্তি হলো, ক্ষমতাসীন দল কিছুইতেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। কারণ দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে। আওয়ামী লীগও ইতোমধ্যে বুঝতে পেরেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনরায় তাদের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে যাওয়া মানেই তাদের জয়ের সম্ভবনা খুব কম। তাই তারা নির্দলীয় সরকারে যেতে চাচ্ছে না।

অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মনে করে নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন দিলে ক্ষমতাসীনরা ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাবে। এজন্য তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে নির্বাচনে যাবে না। এমনকি বিভিন্ন সভা সমাবেশে তাদের নেতারা বলছেন, ওই ধরণের একদলীয় নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েক দিন ধরে বলছেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তিনি গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তার সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রমজানে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে বলেছেন,দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।’ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

দুই নেত্রীর এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণেই দেশের মানুষের মনে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের সর্বশেষ সময়। সে অনুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দশম জাতীয় সংসদের তফশীল ঘোষণা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রাইমখবরকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন হবে এটাই স্বাভাবিক। যে দলকে জনগণ সমর্থন করবে তারা দেশ পরিচালনা করবে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিটা আসলেই কলুসিত। আমরা এখনো নিজের পরাজয়টা মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। ক্ষমতায় যাওয়া মানে দেশ আমার কথায় চলবে, দেশের সব সম্পদ লুটে খাওয়ার সার্টিফিকেট পেয়ে গেছি। এমন মানসিকতার কারণেই ক্ষমতা আকড়ে থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।

অন্যদিকে যারা বিরোধীদলে থাকেন তারাও ক্ষমতার ওই স্বাদ গ্রহণের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মানেই ক্ষমতা। আর ক্ষমতা মানেই সম্পদ, এই মানসিকতা থেকে বের হতে না পারলে এধরণের সংঘাত চলতেই থাকবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখীদল। আমরা চাই দেশের জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে যাকে ভোট দেবে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেই দেশে সংকট তৈরি করেছে। তাই এই সংকট তাদেরই সমাধান করতে হবে। যদি তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো পথ থাকবে না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. নাসিম বলেন, নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো হুমকি ধামকিতে ভয় পাওয়ার দল না। আমরা দীর্ঘ আন্দোলন করেই এ পর্যায়ে এসেছি। সুতরাং বিএনপির হুমকিতে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না।

সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারা অনুযায়ী মেয়াদ শেষে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন হতে হবে। নবম সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি বসেছিল প্রথম অধিবেশন। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File