স্যরি বলে মাফ চাইলেন জাবি ভিসি!

লিখেছেন লিখেছেন ইমদাদ হক ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:১৪:১৪ রাত

জাবিতে শিক্ষকদের ফাইল আটকে দেবার অভিযোগ

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের তোপের মুখে নিজের আচরণের জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে ‘স্যরি’ বললেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে তার কাছে আটকে থাকা আন্দোলনরত বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও সেমিনারে গমনেচ্ছু শিক্ষকদের ফাইলও স্বাক্ষর করে দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে শিক্ষকদের অবরোধের কারণে ক্যাম্পাসে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন পরিস্থিতি আরো জটিল করে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়েনের ব্যাপারটি অস্বীকার করা হয়।

শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে সেমিনার ও গবেষণা কাজে বিদেশে গমনেচ্ছু ৫ শিক্ষকের ফাইল স্বাক্ষরের জন্য উপাচার্যের বাসভবনে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে উপাচার্যের অনুগত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক উবায়দুর রহমান সিদ্দিকীর ফাইল স্বাক্ষর করা হয়। এছাড়া উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত একই বিভাগের খন্দকার হাসান মাহমুদ ও সাইফুজ্জামান, মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের আলী আজম তালুকদার এবং প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের মেহেদী হাসানের ফাইল স্বাক্ষর না করে আটকে রাখেন উপাচার্য। এতে ক্ষিপ্ত হন আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষক সমিতির প্রায় শতাধিক শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে হই চই শুরু করেন। এ সময় উপাচার্য দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। উপাচার্য তার রুম থেকে বের হয়ে আসেন। শিক্ষকরা উত্তেজিত কন্ঠে বলতে থাকেন, ‘আপনি একজন ব্যর্থ উপাচার্য। আপনি একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না । আপনার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা চলে এসেছে। আপনি এ ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেন।’

আন্দোলনরত শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ‘বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষকদের ফাইল স্বাক্ষর না করে উপাচার্য তাদের ডেকে দলীয় পরিচয় জানতে চান।’ উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে দর্শন বিভাগের শিক্ষক কামরুল আহসান বলেন, ‘আপনি পত্রিকায় লিখেছেন, গুটি কয়েক শিক্ষক আন্দোলন করছে। আপনার পক্ষে কারা আছে তাদের একটি তালিকা দেন। আপনি মিথ্যাবাদী’।

সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন ছাড়াই উপাচার্যের ব্যক্তিগতভাবে সম্প্রতি পূর্ণখনন করা ৭টি লেকের নামকরণের বিরোধিতা করে শিক্ষকরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আপনি কোন নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে ব্যক্তিগত ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের বিরোধী।’ তারা অভিযোগ করেন, ‘নবনিয্ক্তু কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন পদে থাকার বৈধতা হারালেও উপাচার্যের অনুগত হওয়ায় পদাধিকার বলে আগের ডীনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হচেছ না।’

এসময় উপাচার্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা শেষ না করেই রুমের ভিতরে চলে যান। একই সময় আশুলিয়া থানার কিছু দাঙ্গা পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এতে শিক্ষকরা আরো ক্ষুব্ধ হন। এর কিছুক্ষণ পর উপাচার্য আবার তার রুম থেকে বের হয়ে এলে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহছান বলেন, কথা শেষ না করে আপনার চলে যাওয়া শিক্ষকদের অপমান ও লাঞ্ছণার শামিল। আপনি একই ভুল বারবার করেন। আপনার এরকম অভদ্রজনিত আচরণে আমরা বিব্রত ও লজ্জিত। উপাচার্য তার ভুল স্বীকার করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের কাছে হাত জোড় করে ‘স্যরি’ বলে ক্ষমা চান। শিক্ষকদের তোপের মুখে তাদের উপস্থিতিতেই তার বাসায় গিয়ে কাছে থাকা ফাইলগুলো স্বাক্ষর করেন। পুলিশ প্রবেশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও শিক্ষকদেরকে আশ্বস্ত করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসভবনের অবরোধ তুলে নেন। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমির হোসেন, কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহছান, পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক আবুল হোসেন, অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক নুরুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসানসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষক অবরোধ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করলে তিনিও শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়েন।

শিক্ষা ছুটিতে কানাডায় গমোনেচ্ছু শিক্ষক খন্দকার হাসান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে ছুটির ফাইলে স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি আমাকে দল ত্যাগ করে তার পক্ষে যোগ দেবার শর্ত জুড়ে দেন। শর্ত না মানায় তিনি আমার ফাইল আটকে দেন।’

প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিন (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), অধ্যাপক আফসার আহমদ কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের, রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক, প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবর রহমান প্রমুখ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদ সাংবাদিকেদর বলেন, জরুরী ফাইল স্বাক্ষরে উপাচার্য শিক্ষকদের রাজনৈতিক দল খুঁজে বেড়ান। তার পক্ষের শিক্ষক না হলে তিনি ফাইল স্বাক্ষর করেন না। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করেন।

পুলিশ মোতায়েনের ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনের ডাকে না, এমনিতেই টহল দিতে ক্যাম্পাসে এসেছি।’ উপাচার্যের বাসভবনে কেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

বিষয়: বিবিধ

১৭০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File