জাবি ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারের শিবির তত্ত্ব!
লিখেছেন লিখেছেন ইমদাদ হক ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫৯:১১ রাত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন প্রসঙ্গ
অধ্যাপক আবুল হোসেন, অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, অধ্যাপক আমির হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহছান
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ২০১২ সালের ২০ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেছিলেন, দল-মত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে জাবিকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলবেন। জাকসু নির্বাচন দেবেন। সব মতের শিক্ষার্থীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, রাজনৈতিক অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান এবং শিক্ষা, উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবেন। তাঁর কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি। বরং গত এক বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। এ শিক্ষাঙ্গনের গৌরবময় ঐতিহ্য, স্বকীয়তা, আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, ভূদৃশ্য ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য, পরিবেশের ভারসাম্য, পারস্পরিক সামাজিক ও পেশাগত সম্পর্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্বার্থ প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষা-কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ও গতি বৃদ্ধি, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রক্ষা করতে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা এখন শূন্যের কোটায়। উপাচার্য হিসেবে কেউই তাঁকে মানছে না। তথাকথিত স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে দুঃস্বপ্নের আতঙ্ক।
তাঁর ভ্রান্তনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করা, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, মাত্রাতিরিক্ত বিভ্রান্তিমূলক রাজনৈতিক বক্তব্য, মিথ্যাচার, কূটকৌশল, শিক্ষা-উন্নয়ন-প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে উদাসীনতা, শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হেয় বা অপমান করা, দায়িত্বে অবহেলা, ইচ্ছেমতো স্থায়ীকরণ ও আপগ্রেডিং আটকে দেওয়া, নিয়োগ, পদোন্নতি, স্বায়ীকরণ ও আপগ্রেডিংয়ে স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, সাড়ে ছয় বছর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনুগত শিক্ষককে অনৈতিকভাবে অধ্যাপক বানানোর বেপরোয়া উদ্যোগ, সুকৌশলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটানো, শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা, নিরাপত্তাহীনতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, বিভিন্ন দায়িত্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগদান, শিক্ষক পদে আবেদনের অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছাত্র ভর্তি, প্রশাসনিক অযোগ্যতা বা অদক্ষতা, জনবিচ্ছিন্ন অগ্রহণযোগ্য তাঁবেদার প্রশাসন সৃষ্টি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে জাহাঙ্গীরনগর পরিবার তাঁর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছে। তাঁর সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এক বছরে মাত্র দুটি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর আচরণ শিক্ষাঙ্গন সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রাহ্মণ হয়ে এ ক্যাম্পাসে বিনোদন করতে এসেছেন বলে অনেকের অভিযোগ। এই শিক্ষাঙ্গনের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা, দায়িত্ববোধ ও দরদ নেই, এটা সর্বজনস্বীকৃত।
গত এক বছরে ছাত্র কর্তৃক ছাত্রী নির্যাতিত হয়। উপাচার্যের অনুগত শিক্ষকের কিল-ঘুষি-লাথি খেয়ে আহত হয় একাধিক ছাত্র। উপাচার্য নিজেও ছাত্রের গায়ে হাত তোলেন। শিক্ষক লাঞ্ছিত হন ছাত্র কর্তৃক। পুলিশকে হলে প্রবেশের নির্দেশ দিয়ে ভয়ানক অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। এই নির্দেশের কারণে হল প্রভোস্ট ও তাঁর পরিবারের জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। এমনকি শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে তাঁর গাড়িটি ভাঙচুর করে। প্রক্টোরিয়াল বডি বহু কষ্টে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের প্রাণ রক্ষা করে। শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার ব্যাপক ভাঙচুর করে উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষকের বাসা, অফিস, আসবাবপত্র, গাড়ি ইত্যাদি। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়। কিছু ছাত্র কর্তৃক অপমানিত হয়ে পদত্যাগ করেন একজন প্রভোস্ট। সেই প্রভোস্টের বাসা রক্ষার জন্য হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক ছাত্রদের ধাক্কা খেয়ে অপদস্ত হন। জনৈক ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চরম অদক্ষতার পরিচয় দেন এবং বিতর্কিত আচরণ করেন। শিক্ষকদের কাছে অঙ্গীকার করেন, অভিযুক্ত ছাত্রটিকে বহিষ্কার করবেন। ছাত্রদের বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রটি কোনো অপরাধই করেনি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী লেলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও করেন। ছাত্রদের বাঁশের লাঠি নিয়ে শিক্ষককে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান (উপাচার্যের বক্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে)। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন নিজে একজন নির্বাচিত ডিনের সঙ্গে রাস্তায় কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সামনে অসৌজন্যমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে বেকায়দায় পড়েন। তিনজন সহকারী প্রক্টর ও উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সামনে অপ্রাসঙ্গিকভাবে 'মস্তিষ্ক বিকৃতি' আছে বলে একই ডিন সম্পর্কে কটূক্তি করেন। জুনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর আচরণ ভীষণ আপত্তিকর। তির্যক ভাষায় তিনি তাঁদের আক্রমণ করেন, শিক্ষা ছুটি, পদোন্নতি ইত্যাদি আটকে দেওয়ার হুমকি দেন। জুনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে ১৮ জুলাই সাধারণ শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসায় গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন। দাঙ্গা পুলিশ এনে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করলে ১৮ জুলাই ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষকের আপগ্রেডিং আটকে রেখে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরামর্শ না নিয়ে বিভাগকে এড়িয়ে তিনি তাঁর অনুগত শিক্ষককে আনুকূল্য প্রদর্শনের মাধ্যমে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার নিমিত্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অধ্যাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন এবং প্রভাব খাটিয়ে অনুগত শিক্ষককে ওই পদে নিয়োগের সুপারিশ করেন। যদিও অনুগত শিক্ষক বিজ্ঞাপনের কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেননি। সিলেকশন বোর্ড উপাচার্যের চাপে অনুগত শিক্ষককে বিজ্ঞাপিত অধ্যাপক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে। একই সুপারিশে অন্য একজন শিক্ষককে সিনিয়র করার মত ব্যক্ত করে সিলেকশন বোর্ড নজিরবিহীন অনিয়ম করে। কারণ বিজ্ঞাপিত অধ্যাপক পদে ওই শিক্ষক আবেদনই করেননি। ইংরেজি বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সিজিপিএ/জিপিএ চাওয়া হয়েছিল ৩.৫। এই শর্ত পূরণ করে না এমন একজন প্রার্থীকে উপাচার্য কৌশলে সিলেকশন বোর্ডের সামনে হাজির করে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেন। বিষয়টি সিন্ডিকেট সদস্যদের নজরে এলে তাঁরা নিয়োগ সুপারিশটি বাতিল করেন। উপাচার্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও সিন্ডিকেট সদস্যদের সম্মতি আদায় করতে ব্যর্থ হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেলে বিধি অনুয়ায়ী সে সময় তিনি আর শিক্ষক পদে, বিভাগীয় সভাপতি কিংবা ডিনের দায়িত্বে থাকতে পারেন না। কিন্তু অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একজন উপ-উপাচার্যকে চারুকলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে রাখার অপচেষ্টা করেন। প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত চারুকলা বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। '৭৩-এর অধ্যাদেশকে অবজ্ঞা করে একই উপ-উপাচার্যকে তিনি ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। বিধান অনুয়ায়ী জাবি স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যসংখ্যা সাতজন। এর অতিরিক্ত সদস্য রাখার বিধান নেই। বিধি ভঙ্গ করে ওই উপ-উপাচার্যকেই তিনি অষ্টম সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রায় এক মাস হলো জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বিধিমোতাবেক ট্রেজারার ডিনের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। বর্তমান ট্রেজারার অবৈধভাবে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে চারটি বিভাগ শুরু হয়েছিল কয়েকজন প্রভাষক দিয়ে। তাঁদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন। সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষক ছাড়া কোনো বিভাগ বা অনুষদ বিকশিত হতে পারে না। রহস্যজনক কারণে উপাচার্য বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন না।
ভর্তির বিধিবিধান না মেনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপাচার্য দুজন ছাত্রকে ভর্তি করান পরিসংখ্যান ও দর্শন বিভাগে। প্রথমে চেষ্টা করেন এ দুজন ছাত্রকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি করাতে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও এদের নাম মুক্তিযোদ্ধা কোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি করাতে ব্যর্থ হন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য যে তালিকা করা হয়েছিল, এই ছাত্ররা সে তালিকায় ছিল না এবং তারা মৌখিক পরীক্ষা না দিয়েই ভর্তি হয়। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করেছে এমন চারজন শিক্ষার্থীকে পোষ্য কোটায় ভর্তি করা হয় চারুকলা বিভাগে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল করতে গিয়ে তিনি একদিকে ভূদৃশ্য ধ্বংস করেন, অন্যদিকে মাটি কাটার জন্য অপচয় করেন লাখ লাখ টাকা। বিজয় র্যালির নামে মিডিয়ায় নিজেকে প্রদর্শন করেন দেড় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে। উপাচার্য ভবনসংলগ্ন লেকে জলসাঘর বানিয়ে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে, নৌকায় ভ্রমণ করে বিনোদনে মেতে থাকেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। প্রাক-সিনেট সভার কোনো দৃষ্টান্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। প্রাক-সিনেট সভার আয়োজন করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ অপচয় করেন। উপাচার্যের বাসভবনে মুরগির খোঁয়াড় বানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করেন। তাঁর মুরগি ও কুকুর পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। কাবিখা প্রকল্পের টাকা ব্যয় করে উপাচার্য ভবনসংলগ্ন লেকের পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অর্থ অপচয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিধন এবং লেকটি আত্মস্ত করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। একই প্রকল্পের ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃত্রিম পানির ফোয়ারা নির্মাণ করছেন, যা জাবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান এবং কাবিখা প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যপরিপন্থী। এই কাজগুলো করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মতামত, সিন্ডিকেটের অনুমোদন এবং টেন্ডার ছাড়াই।
হীনস্বার্থে কথায় কথায় অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে জামায়াত-শিবির বলে আখ্যায়িত করেন। হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী-বিএনপিপন্থী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক- কেউই এই আখ্যা থেকে বাদ পড়ছেন না। তাঁর মতের বিরুদ্ধে গেলেই সবাই জামায়াত-শিবির-হেফাজতে ইসলাম হয়ে যান বা তিনি 'শিবিরতত্ত্ব' প্রয়োগ করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি একজন ছাত্র অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উপাচার্য তখন এডওয়ার্ড কলেজে শিবির তাড়াচ্ছিলেন। নিহত ছাত্রের প্রতি নূ্যনতম সহানুভূতি না দেখিয়ে তিনি জনৈক সাংবাদিককে বলেন যে নিহত ছাত্রটি শিবিরের কর্মী এবং ছাত্রটির হলের প্রভোস্টও শিবির (যিনি আসলে আওয়ামী লীগপন্থী)। তাঁর নাম না উল্লেখ করে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট হিসেবে বিষয়টি প্রকাশের জন্য সাংবাদিককে নির্দেশ দেন (উপাচার্যের মন্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে)। শিক্ষক সমিতির আন্দোলনকে হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত আন্দোলন বলে দাবি করেন উপাচার্য (The Independent, ১২ মে ২০১৩)। তাঁর তল্পিবাহক না হলেই সম্মানিত শিক্ষক 'মস্তিষ্ক বিকৃত' বা 'শিবির' খেতাব লাভ করেন। কোরআন তেলাওয়াত শোনার কারণে তিনি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র একজন হকারের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন, ওয়াজ শোনার কারণে এক রিকশাওয়ালাকে ধমক দেন এবং অপছন্দের পত্রিকা বলে কর্মচারীর হাত থেকে সেই পত্রিকাটি কেড়ে নেন।
সামনে দুজন আনসার, দুটি কুকুর, একজন গানম্যান, কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে তিনি প্রাতঃভ্রমণে বের হন। এ রকম নজিরবিহীন দৃশ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আর কখনো দেখেনি। তারপর কোথায় হারিয়ে যান কেউ জানেন না। গভীর রাতে তাঁকে দেখা যায় টিভি টক শোতে।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উপাচার্য পদটিকে কলঙ্কিত করেছেন। এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান রাখা হলে, আর যা-ই হোক শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ সেখানে থাকে না। জাহাঙ্গীরনগরেও তা-ই হয়েছে। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যৌক্তিক কারণেই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে জাহাঙ্গীরনগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে।
লেখকবৃন্দ : গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ, আইন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও প্রত্নতত্ত্ব
অনুষদের ডিন
বিষয়: রাজনীতি
১৯৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন