আপনার সন্তানকে শিবিরে ভর্তি করেছেনতো? ( পর্ব ৩)
লিখেছেন লিখেছেন ঊর্মি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩৬:২২ বিকাল
শিরোনাম দেখে চমকে গেলেন? না, আপনি ভুল দেখেননি! লাখো তরুনের নৈতিক-আধ্যাত্মিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ভার্সিটি ভর্তি হয়ে বাড়ি হতে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে বাজারের একটি দোকানে বসে কাকা বলছিলেন, “শিবির করো ভালো কথা! একটা বিষয় মনে রাখবা, পড়াশোনা ঠিক না থাকলে শিবির করে লাভ নাই। খারাপ ছাত্রদের শিবির মূল্যায়ন করেনা। রেজাল্ট খারাপ হলে ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে, শিবির হতেও বের করে দিবে। অতএব ঠিকমতো পড়াশোনা করবা”।
কাকার এক বন্ধু পাশেই বসা ছিলেন, তিনি হৈ হৈ করে উঠলেন, ‘না না, রাজনীতি করার কি দরকার?’
কাকা তাকে থামিয়ে দিলেন, দরকার আছে বলেইতো বলছি, রাজনীতি করার দরকার নাই, শিবির করার দরকার আছে।
সেদিন কাকার কথার পূর্ণ অর্থ বুঝতে পারিনাই, ভেবেছিলাম কাকা যে সংগঠন পছন্দ করেন আমিও সে সংগঠন করছি তাই হয়তো তিনি আমাকে সাপোর্ট করছেন।
বেশ কিছুদিন পরে কাকার কথার অর্থ বুঝতে পেরেছিলাম, কয়েকটি ঘটনার পরে। সেগুলোই উল্লেখ করলাম।
এক
আমাদের এলাকার এক ছাত্রকে সংগঠনের দাওয়াত দিয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম, প্রতিদিন ফজর নামাজে তাকে জাগিয়ে দিতাম, ছাত্রটির অভিভাবক চরম বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলেই বলতেন ‘ও অনেক রাইতে ঘুমাইছে, এখন জাগাইয়োনা!’ আমরাও প্রতিদিন তাকে ডাকতাম কিন্তু তার মায়ের অনুরোধে তাকে ঘুম হতে জাগাইতামনা।
ছেলেটিও আর জাগেনাই! ফলাফল, বেশ কয়েকবার রেজাল্ট খারাপ করে ছাত্রত্ব বাতিল। ছাত্রটির বাবা মাঝে মধ্যেই আমার সাথে দেখা করে অনুরোধ করতেন, তোমরা আমার ছেলেটিকে একটু দেখো, তাকে তোমাদের সাথে রেখে কিছু বুঝাও, দেখো ঠিক করতে পারো কিনা!
দুই
আমাদের এলাকার এক প্রভাবশালী মুরব্বি, তার দৈনন্দিন কাজের রুটিন ছিলো, শিবিরের কর্মীদের বাসায় গিয়ে তাদের অভিভাবকদের কাছে নালিশ জানানো, ‘আপনার পোলায়তো বড় নেতা হয়ে গেছে, শিবির করে! এলাকার সব পোলাদের শিবিরের প্রগ্রামে নিয়া নষ্ট করে ফেলতেছে, এখনো সময় আছে পোলারে সামলান!”
এলাকার অধিকাংশ ছেলেকে শিবিরের প্রগ্রামে নিয়ে নষ্ট করতে সক্ষম হলেও সেই মুরব্বির ছেলেকে নষ্ট করতে পারিনাই। তার ছেলে এখন ইয়াবা খায়, মাঝে মধ্যে গাঁজা খেয়ে রেললাইনের পাশে বসে বসে ঝিমায়! পড়াশোনা টেনেটুনে এসএসসি!
তিন
এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের এক ছাত্রকে শিবিরের কর্মী বানাবো বলে টার্গেট নিলাম। একদিন ফজরের নামাজের পরে, তাকে ঘুম থেকে তুলে অজু করিয়ে মাত্র মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়েছি, এমন সময় কোথা হতে তার বাবা এসে হাজির!
এই কই যাস?
কাচুমাচু হয়ে ছেলেটি জবাব দিলো, নামাজ পড়তে যাচ্ছি!
গর্জন করে উঠলো তার বাবা, সারাদিন নামাজের নাম নাই! এখন কামের টাইমে তোর নামাজের কতা মনে হইছে!
তারপরে শুরু হলো, অকথ্য ভাষায় গালা-গালি!
আমার সামনে অপমানিত হওয়ায় রাগে ক্ষোভে ছেলেটি মসজিদে না গিয়ে দুপ ধাপ পা ফেলে ঘরে চলে গেলো।
এরপরে বিভিন্ন সময়ে ছেলেটিকে শিবিরের প্রগ্রামে দাওয়াত দিলেও পারিবারিক নানা বাধ্যবাধকতায় আর শিবিরের প্রগ্রামে হাজির করাতে পারিনাই।
অনেক দিন পরের ঘটনা, ছেলেটি জড়িত হয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে, ছোট খাটো চুরি করাও শুরু করে। আসক্ত হয় পড়ে ইয়াবা, গাঁজা সহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্যে। ছেলেটির বড় ভাই মাঝে মধ্যেই ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে অনুরোধ করতো, তোমরা থাকতে আমার ভাই এমন হয় কিভাবে? পার্সোনালী ওকে একটু সময় দাও, দেখো ঠিক করতে পারো কিনা।
ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, কাচামাটি পরিশ্রম করে মনের মতো আকৃতি দেয়া যায়, পোড়ামাটির রুপ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
অবশেষে একদিন ধর্শনের মামলায় এলাকা ছাড়া হয় ছেলেটি, ছেলেকে না পেয়ে তার বাবাকেই ধরে নিয়ে যায় পুলিশ!
পরিশিষ্ট্যঃ
যে কথা বলছিলাম, কাকার নসিহতের কারণ এখন বুঝেছি, ভাতিজা পরিবারের বাইরে একা একা শহরে থেকে পড়াশোনা করবে। তার নৈতিক-আধ্যাত্মিক সুরক্ষায় সম্ভবত শিবিরের বিকল্প কিছুর সন্ধান খুজে পাননাই কাকা, তাই তিনি শিবির করার ব্যাপারটিকে এ্যাপ্রিসিয়েট করেছিলেন। শিবির একজন ছাত্রের জন্য অভিভাবকের চাইতেও বড় অভিভাবক,
আপনাকেই বলছি, হ্যা আপনাকেই! আপনার সন্তানকে শিবিরে ভর্তি করেছেনতো?
----শামীম রেজা
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন