দেখেন ছাত্রশিবিরের এক ক্যাডার কি করে একজনের রগ কেটে পঙ্গু বানিয়ে দিলঃ
লিখেছেন লিখেছেন ঊর্মি ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৫৭:১৫ রাত
রগ কাটা ঘরে বন্দী আমিঃ
কিশোরকন্ঠ নিয়ে শিবিরের ঐ ক্যাডার ঘুরতেন প্রতিদিন বিকেলে। কিশোরকন্ঠের ভক্ত বলে তার সাথে পরিচয় হল। একদিন বললাম- ভাই আমার থাকার সমস্যা। বোর্ডিং এ ছাত্রলীগের ছেলেরা অনেক ডিস্টার্ব করে। আমাকে একটা থাকার জায়গা ঠিক করে দিন। কয়েকদিন পরে তিনি তার রুমেই আমাকে নিয়ে এলেন । এটা আমার বন্ধুরা দেখার পরই বলল, “তুই এটা কি করেছিস? জানিস তুই ঐ লোকটা কত ভয়ংকর! অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে। ওর কথা না শুনলে শেষে একদিন তোর রগ কেটে দিবে”। সেই সময় আমি প্রথম জামায়াত-শিবির-মুক্তযুদ্ধ-রাজাকার এই কথাগুলো শুনি। ওদের কথা শুনে ভয়ে আমি কয়েকরাত ঘুমাতে পারিনি ভয়ে। উনি কি করেন সেটা নিয়ে টেনশানে। তবে উনাকে যেরকম পেয়েছি--
---> খুব সকালে উঠে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন। আমি তখন নিয়মিত নামাজ পড়ি না। শুধু শুক্রবার পড়ি। তিনি মাঝে বলতেন, মুসলমান হিসেবে তো আমাদের পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া উচিত তাই না?
--->নামাজ শেষে এসে সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আমি তখনও কুরআন পড়া শিখিনি। তাকে বললাম, আমায় কুরআন শিখাবেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হচ্ছে কুরআন শিখানো। আমি তোমাকে শিখাতে পারলে আমারই লাভ।
---> মাঝে মাঝে সুললিত কন্ঠে ইসলামী সংগীত গাইতেন। এই সময়ে বাংলা ছায়াছবির গানের খবু ভক্ত। বাজনা ছাড়া এইরকম সুন্দর গান হতে পারে এটা আমি জানতামই না।
---> আমার রাতের খাবারের পর টিভি সিরিয়াল দেখার অভ্যেস তৈরী হল। তিনি সম্ভবত আমার পিছু নিয়ে দেখেছিলেন ব্যাপারটা। আমায় বললেন, রাতে খাবার পর প্রায় দুঘন্টা নষ্ট হলে তোমার জন্য খুব ক্ষতিকর সেটা (মনে মনে বললাম—বড়ভাই গিড়ি একটু কম করেন মিয়া)
---> বিকেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে মাগরিবের নামাজ না পড়ে একদিন ফিরলাম—তিনি কিভাবে জেনেছেন জানিনা বললেন, বন্ধুদের সাথে বিকেলে ঘুরাটা ভাল তবে বন্ধুদের নিয়ে নামাজ পড়তে পারলে আরো ভাল হত ( মনে মনে বললাম—কবে যে এই বড়ভাইগিরি বন্ধ হবে!)
---> প্রায়ই দেখতাম তিনি ভোর রাতে উঠে চলে যেতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, আজ শহরের শেষ মাথায় এক ভাইকে নিয়ে ফজেরর নামাজ পড়েছি।
--->কয়েকদিন চেষ্টা করে তিনি আমায় কুরআন পড়তে শিখিয়ে দিলেন। আমি বুঝতেও পারলাম না—কি করে সম্ভব হল। মাত্র চারদিনে কুরআন পড়তে শুরু করে দিলাম। তিনি ছিলেন গাইড। মনে মনে তাকে ভয় পেলেও, অপছন্দ করলেও এই কারণটার জন্য তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।
---> সকালে ঘুম থকে ওঠা আমার জন্য খুব কষ্টকর ছিল। তিনি এই কাজটা একদম সহজ করে দিয়েছিলেন। আমি জানতাম আমি যত রাত করেই ঘুমাই না কেন তিনি আমায় নিশ্চিত নামাজ পড়তে জাগাবেন। তাই রাত জেগে পড়তে পারতাম নিশ্চিন্তে। তাই নবম শ্রেনীতে বিশ এর পরে থাকা রোল নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় সরাসরি দ্বিতীয় হয়ে গেলাম।
--->আমার বাড়ি থেকে টাকা পয়সা আসতে মাঝে মাঝেই দেরি হত। তিনি নিজের পকেট থেকে আমার রুম ভাড়া, খাবার টাকা, এমনকি মাঝে মাঝে প্রাইভেট স্যারের টাকাও দিয়ে দিতেন।
এত কিছুর পরও শিবিরকে এবং শিবিরের কারনে এই মহান ভাইটিকে আপন করে ভাবতে পারতাম না।
যেদিন রগ কাটা হলঃ
রমজান মাসের একদিন। ইফতারীর পরই আমি পেটের যন্ত্রনায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রচন্ড যন্ত্রনায় আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম। এই ভাইটি দৌড়ে ঔষধ নিয়ে এলেন। আমি প্রচন্ড যন্ত্রনার কারনে কাহিল হয়ে পড়েছিলাম। নড়বার শক্তিটুকুও ছিল না। তিনি আমার মাথাটা কোলে তুলে নিলেন। ভাত এনে নিজে মাখিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। সে সময়েও ব্যাথাটা মাঝে মাঝেই আসতে ছিল। আমার চোখ দিয়ে জল ঝড়ছিল। তবে সেটা সেই পেটের যন্ত্রনার জন্য যতটানা তার চেয়ে বেশীছিল এই উপলদ্ধির কারনে যে আজ থেকে আমি শিবিরকে আর এই ভাইটিকে ভাল না বাসি তবে কোণদিন ঘৃনা করতে পারব না। এবং এটাও বুঝেছিলাম যে সেদিনই ঐ ভাইটি আমার রগ কেটে আমায় চিরদিনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছিলেন যাতে আমি কোন দিন শিবিরকে ঘৃনা করতে না পারি।
এখনও আমি আমার এই ভাইটির সাহচর্যে অনুপ্রানিত হই। আমার এই ভাইটির জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে আজীবন দ্বীনের পথে অবিচল রাখেন।
সালাউদ্দিন নাসিম ভাইয়ের লেখা
বিষয়: বিবিধ
২১৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন