রা.বি. সোহরাওয়ার্দী হলে কয়েক সেকেন্ড।
লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:২৭:০২ রাত
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের সময়কাল খুব সংক্ষিপ্ত।কেউ বলেছেন পাঁচ সেকেন্ড, কেউ বলেছেন ঊনষাট সেকেন্ড। যাই হোক এর সময়কাল সেকেন্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মিনিট- ঘন্টার মধ্যে নয়। আমার বিশ্বাসও একই। এমনই এক স্বপ্ন ভ্রমনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঢুকেছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে, যে হলে আমার সাতটি বছর অতিবাহিত হয়েছে, থেকেছি ১১ টি রুমে। স্বপ্নের না থাকে ভাল শুরু, না থাকে ভাল শেষ। কোথায় থেকে কিভাবে ঢুকলাম জানিনা, আবার হঠাত করে স্বপ্নটা ভেঙ্গেও গেল। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে যাচ্ছিলাম মসজিদের দিকে, আসরের নামাযের সময় তখন। ভাবছি নাময পড়ব। আবার ভয় লাগছিল ছাত্রলীগের কেউ দেখে ফেলে কিনা। নামায পড়তে দেখে তারা আমাকে ছাত্রশিবির হিসাবে চিনে ফেলে কিনা। বাস্তবে, তারা নামাযি ছাত্র দেখে শিবির হিসাবে ট্রিট করে কিনা জানিনা, কিন্তু তখন আমার ঐ রকমই ধারণা হচ্ছিল।মসজিদের ইমাম সাহেব মৌলানা মুস্তাফিজুর রহমান আমাকে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। কুশল বিনিময় হল। মসজিদের ভিতরে তাবলীগ জামাতের লোকদের দেখতে পেলাম। বাইরে দেখলাম শিবির কর্মীদের। তাদের কাউকে আমি চিনিনা, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল সবাই শিবির কর্মী এবং আমার পরিচিত। তারা আমাকে বলল – তারা সবাই হলে থাকে। আমি বিশ্বাস করছিলাম না এবং আমি আমার ভয়ের কথা জানালাম। তারা বলল- সে যুগ আর নেই, ছাত্রলীগ আর নেই, তারা বিতারিত। আমি বললাম- আমি কল্পনাই করতে পারছিনা। আমাকে আশ্বস্ত করল। ঠিক যেন সেই আসহাবে কাহাফের মত অবস্থা। দীর্ঘ তিনশত সাত বছর একটি গুহায় ঘুমিয়ে থাকার পর যখন তারা জেগে উঠল, তখন তাদের খাদ্যের প্রয়োজন হল। তারা ভাবতে পারেনি যে, তারা এতোদিন ঘুমিয়ে আছে এবং দেশের শাসনব্যাবস্থা খোদাভীরুদের হাতে এসেছে। তিনশত বছর পুর্বের মুদ্রা নিয়ে তাদের একজন বাজারে গেল খাদ্য কিনতে। দোকানদার তাকে চিনতে পেরে জনসমক্ষে নিয়ে গেল। এতে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু জনগণ তাকে আশ্বস্ত করল, ভয় নেই দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে এবং খোদাভীরুরা শাসক হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের শিবিরকর্মীরা আমাকে সেইভাবে আশ্বস্ত করছিল। হলের গেটে এসে দেখি তুষার ভাই, প্রানরসায়ন বিভাগের, আমিও একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। সে জানাল – সে গতকাল এসেছে। আমি আমার আশ্চর্যের কথা জানালাম, বললাম- আমি কল্পনাই করতে পারছি না। দেখা হল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ফজল মাহমুদ ভাই আর নুর আলম ভাইএর সাথে। আমি আর তুষার ভাই যাচ্ছিলাম স্টেশন বাজারের দিকে। রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে যে ফটোকপির দোকান আর সেলুন আছে তার একটাতে দেখা হল রসায়নের মুহিন ভাইএর সাথে। মুহিনের বড় ভাই শাহিন তুষার ভায়ের বন্ধু, তুষার ভাই তার সাথে মোবাইলে কথা বলতে লাগল। এই তো শেষ। ঘুম ভেঙ্গে গেল।
সাড়ে তিন বছর হয়ে গেল রাবি ক্যাম্পাসে যাইনি। সাড়ে তিন বছর আগে ছাত্রলীগের তান্ডবে এক বস্ত্রে হল ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আর ও মুখো হইনি। আমার সব জিনিস্পত্র লুট হয়ে গেছে। গণিমতের মালের মত সব লুটে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। আমি জীবনে ঘুমের মধ্যে হাজার হাজার বার স্বপ্ন দেখেছি। কোন স্বপ্নই সত্য হইনি। কিন্তু আজ সকালে যে স্বপ্ন দেখেছি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এস্বপ্ন সত্য হবেই। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মীরা আবার নির্বিঘ্নে পড়াশুনা ও সাংগঠনিক কার্যকলাপ চালাতে পারবে। সারাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতা মনে এ আশা পোষন করে- আবার ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে মতিহারের সবুজ চত্ত্বর। যে চত্ত্বরে ১৭ জন শহীদের রক্ত ঝরেছে। বিশেষ করে শহীদ শরিফুজ্জামান নোমানীর একটি আঙ্গুল এখনও ঐ মতিহারের সবুজ রক্তাক্ত চত্ত্বরে পরে আছে। ওই পবিত্র শহীদী আঙ্গুল এর পবিত্রভুমি মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে ঐ আঙ্গুলের পাহারায় নিয়োজিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিটি কর্মী তাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও আল্লাহু আকবর স্লোগানকে উচ্চকিত করবেই করবে।
বিষয়: বিবিধ
১৮২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন