ভাগ্যিস! আমার কোন সরকারি চাকরি হয়নি।
লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:২১:১৫ রাত
কথায় আছে – আমি হলাম ফকির, দেশে আসল আকাল। আমার যখন পড়াশুনা শেষ হল, তখন আওয়ামীলীগ আসল ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আমি নই, বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের বিপরীত আদর্শের সমর্থক বলে কিছুটা পরিচিতি ছিল। তাই এই মহাজোট সরকারের আমলে আমার কোন সরকারি চাকরি হবেনা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। তাই বলে সরকারি চাকরির জন্য দরখাস্ত করিনি, তা কিন্তু নয়। অনেকগুলি সরকারি চাকুরির দরখাস্ত করেছিলাম, কয়েকটিতে ভাইভাও দিয়েছি। কিন্তু হয় নাই। একটি সরকারি ব্যাংকে ভাইভা দিয়েছিলাম, আশা ছিল হয়ে যাবে। কিন্তু হইনি, ভেবেছিলাম মেধায় হেরে গিয়েছি। কিন্তু না, পরে শুনলাম আমি নাকি ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের সৈনিক নই। যাই হোক, না পাওয়ার একটা বেদনা মনে ছিল। কিছুদিন হলে এই বেদনাটা আর নেই। কারণ, আমার এক কাছের বন্ধু, আমার মতই ননসেক্যুলার, একটি সরকারি গণমাধ্যমে চাকরি করে। তাকেও একদিন যেতে হয়েছিল শাহবাগে, তথাকথিত রজাকারদের ফাঁসির দাবিতে। যদিও সে শাহবাগীদের ঘৃণা করে। শাহবাগের মত একই দাবিতে দেশের জেলাশহরগুলোতে যে মঞ্চ তৈরি করেছিল ভারতের দালালেরা, সেখানে যাওয়ার জন্য কেউ আমাকে বাধ্য করেনি, কেউ যেতেও বলেনি। আমি সেই শাহবাগীদের বিরোধীতা করেছি, করতে পেরেছি। কারন, আমি সরকারি চাকরি করিনা।শাহবাগের যেসব নাস্তিকেরা আমার প্রিয়নবী (সঃ) এবং ইসলামকে নিয়ে যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের ফাঁসির দাবিতে আল্লামা আহমদ শফীর আহবানে সাড়া দিয়ে মিছিল করেছি।
গতকাল আওয়ামীলীগ নেতা নাসিম সরকারি কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন – আমাদের কথা না শুনলে খবর আছে।আওয়ামীলীগ সরকারি কর্মচারিদের হুমকি ধামকি দিয়ে কোন মতে একটি নির্বাচন করে আবার পাচ বছরের জন্য জগদ্দল পাথরের মত জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে চায়। আর যেসব সরকারি কর্মচারি আওয়ামীলীগের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের সহযোগী হবেনা, তাদের খবর আছে। তাদের চাকুরিচ্যুত করা হবে, তাদের নামে হয়রানিমুলক মামলা দেয়া হবে, আর ও এস ডি করা তো ডালভাত।
মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, তিনি সরকারের অংশ নয়। তার দল ক্ষমতায়, তিনি দলের দায়িত্বশীল, সরকারের কোন দায়িত্বে নেই। এমনকি তিনি বর্তমানে কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিও নন। তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের এভাবে হুমকি দিতে পারেননা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরা তার বয়ান শুনতে বাধ্য নয়। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা ভিন্ন। ছাত্রলীগের পাতিনেতার কথায় ওঠ বস করে থানার ওসি। যুবলীগের কর্মীর কথা না শুনে পারেনা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এলজিইডির টেন্ডার বন্টন হয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার নির্দেশে। শ্রমিকলীগ নেতা বালুমহাল, খাসজমি দখল করে এসি ল্যান্ডের কিছুই করার থাকেনা।ছাত্রলীগ নেতার ভয়ে পালিয়ে বেড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর জয়নাল আবদিন ফারুক, বিরোধীদলের চীফহুইপ, তাকে পিটিয়ে জামা খুলে নেয় পুলিশ। সবই ক্ষমতাসীন দলের আঙ্গুলি হেলনে।সরকারি দলের অশুভ খায়েশ পুরনের হাতিয়ার সরকারি কর্মচারি। তাই বলি, ভাগ্যিস আমার কোন সরকারি চাকরি হইনি। হইলে হয়তো সরকারিদলের কর্মী, পাতিনেতা আর চেলাচামুন্ডাদের কথায় ওঠ বস করতে হত।
বিষয়: বিবিধ
২৪০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন