ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ও বাংলাদেশী দর্শকের মুগ্ধতা।
লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫৭:৫২ রাত
সম্প্রতি কোন এক বুজূর্গ বলেছেন- ‘ক্ষুধার্ত বাঘের মুখ থেকে মাংসের টুকরা কেড়ে আনা সম্ভব হলেও, টিভিতে ভারতীয় সিরিয়াল দেখছেন এমন কোন মহিলার হাত থেকে রিমোট কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়”। বানীটি লুফে নিয়েছেন অনেকেই এবং এই বানী নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে অনেকেই লেখালেখিও করেছেন। কথাটা সত্যই বটে। আগামীদিনে বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে, আগামী নির্বাচন আদৌ হবে কি হবেনা, না হলে কি হবে? এসব প্রশ্ন ভারতীয় সিরিয়াল দর্শকদের মধ্যে নেই, থাকলেও কেউ এ নিয়ে বিচলিত নন। তারা বিচলিত রাশি কিভাবে অপলা রায়ের মুখোশ উন্মোচন করবে, অপলা রায়ের ষড়যন্ত্র থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে অথবা বাংলাদেশে ফিরে আসা নারগিস কিভাবে তার ধর্মান্ধ বাবার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, মেখলা কিভাবে তার শাশুড়িকে বশ করে ইত্যাকার বহু চিন্তা তাদের বিচলিত করে। আমি এমনও দর্শককে চিনি যারা বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় নেত্রী কে এটাও জানেন না।কিন্তু মুম্বাই-কোলকাতার ফিল্মের আদি অন্ত খবর রাখে।
আমার প্রিয় লেখকদের একজন অরুন্ধুতি রায়। সম্প্রতি তার একটি বই আমার হাতে এসেছে। নাম ‘ দ্যা ব্রোকেন রিপাবলিক’। বইটি মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে লেখা। তিনি উড়িষ্যার দান্তেওয়াড়ার জঙ্গলে মাওবাদী কমরেডদের সাথে কিছুদিন কাটিয়েছেন।‘কমরেডদের সাথে পথচলা’ শিরোনামে সেই অভিজ্ঞতার কথা তিনি বর্নণা করেছেন বইটিতে। একযায়গাতে তিনি লিখছেন- “ আমরা মন্দির থেকে কিছুদুরের বাসষ্ট্যান্ডে গেলাম হেটেহেটে।এরই মধ্যে ভীড় জমে যাচ্ছিল।ঘটনা ঘটছিল দ্রুত। দুইজন লোক ছিল মোটর বাইকে।কোন কথা হলনা –শুধু চোখের ইঙ্গিতে চিনে নেওয়া, নড়েচড়ে বসা,ইঞ্জিনের আবর্তন।কোথায় যাচ্ছি কোন ধারণা করতে পারছিলাম না।এস পি সাহেবের বাড়ি পার হলাম।আগের বার দন্ডকারণ্যে তার সাথে কথা হয়েছিল। রসিক মানুষ। তিনি বলেছিলেন ‘সত্যি বলতে কি ম্যাডাম, এই সমস্যার সমাধান পুলিশ বা মিলিটারির কর্ম না। এই আদিবাসী ব্যাটাদের মুশকিল হল এরা লোভ জিনিসটা বুঝে না। ওরা লোভী না হয়ে উঠলে আমাদের কোন আশা নাই। আমি তো আমার বসকে বুদ্ধি দিয়েছিলাম এই বাহিনী হটিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে একটা করে টিভি সেট বসাতে। আপনাআপনি ঠিক হয়ে যেত সব”। ভারতীয় ওই পুলিশ কর্মকর্তার বুদ্ধিটা মন্দ নয়। প্রত্যেক ঘরে ঘরে যদি একটা করে টিভি দেওয়া যেত, তাহলে আদিবাসীরা সাম্যবাদ, সমাজবাদ, বুর্জোয়া, পেটিবুর্জোয়া, শোষক, অধিকার ইতাদি শব্দগুলো ভুলে যেত, এবং নতুন প্রজন্মরা এই শব্দগুলো জানতেও পারবেনা। টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো তাদের মন মগজ কে পরিবর্তন করে দিত। তারা হয়ে উঠত লোভী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা তারা হারিয়ে ফেলত।
আমাদের বাংলাদেশীদেরকেও চিন্তা করতে হবে। ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের মেয়েদের মনমগজকে ধোলাই করে দিচ্ছে। পরকিয়া, সংসার ভাঙ্গা, কুটবুদ্ধি প্রভৃতি ঐসব চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়। দেশপ্রেম সেখানে অনুপস্থিত। তাই আমাদের চিন্তা হয় এরকম চলতে থাকলে আমাদের মেয়েরা এসবের দ্বারা ভীষন ভাবে প্রভাবিত হবে। ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী মেয়েরা যেভাবে দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ হয়ে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পরেছিল, এখন যদি আমাদের দেশে এরকম সংগ্রামের প্রয়োজন হয়, তাহলে ভারতীয় সিরিয়ালে বুদ হয়ে থাকা আমাদের মেয়েরা কি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পরতে পারবে?
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন