হিসাব মেলাতে পারিনা। মৃনাল হাসান

লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ১২:০৩:০৯ রাত

মিশরে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্টকে উতখাত করেছে সেনাবাহিনী। তাতে সমর্থন দিয়েছে সেকুলার বিরোধীদল এবং নাস্তিক্যবাদী বামরা। যদিও মিশরে বামদের অবস্থা বাংলাদেশের মতই নেতাসর্বস্ব, মিডিয়া নির্ভর।মিশরের পাচ হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি, তার বিরুদ্ধে, আমেরিকা-ইসরাইলের পুতুল সেকুলার বিরোধীদল ও জনপ্রত্যাখাত বামদের অভিযোগ মুরসি ও তার দল মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং অন্য কোন দলকে তারা ক্ষমতার ভাগ দিচ্ছেনা।যদিও নির্বাচনের মাধ্যমে এইসব বামদের নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা ভোগ করার মত সামর্থ্য নেই। মিশরের আরেক মীরজাফর এল বারাদেই, আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের প্রধান ছিলেন। ইহুদী – খ্রিষ্টানদের পা চেটে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এই পরিচয়ে ভর করে তিনি নেমেছিলেন রাজনীতিতে, হতে চেয়েছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু জনগণ তাকে প্রত্যাখান করেছে।গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়- এই উপলব্ধি যখন তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে, তখন থেকেই তিনি ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন, কিভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করা যায়। এ লক্ষেই আমেরিকা – ইসরাইলের ক্রীড়ানক এল বারাদেই, সেকুলার বিরোধীদল ও পতিত বামরা মিলে আন্দোলন শুরু করে এবং এই আন্দোলনে অতি দ্রুত সাড়া দেয় মিশরের নব্য ফেরাউন সেনাবাহিনী প্রধান আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি। তিনি মুরসিকে অপসারন করে ক্ষমতা দখল করেন। আন্দোলনকারিরা সবাই ক্ষমতার ভাগ পেয়েছে।এল বারাদেই এখন মিশরের ভাইস প্রেসিডেন্ট। অভ্যুথানে ক্ষমতাদখলকারী সেনা সরকার ইসলামপন্থীদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করেছে। আজ ১৪ আগষ্ট তারিখে তারা প্রায় পাচ শতাধিক ইসলামপন্থীকে হত্যা করেছে।

সেনাবাহিনী ক্ষমতাদখল করার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াগুলো ছিল লক্ষনীয়। সেনাবাহিনীর অভ্যুথানকে যেসব রাষ্ট্র সমর্থন দিয়েছে সেসব রাষ্ট্রে সৈরশাসকেরা চেপে আছে জনগণের উপর। এমনই একটি রাষ্ট্র হচ্ছে সৌদি আরব। এই রাষ্ট্রটিতে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। রাজা এবং রাজপরিবার সর্বক্ষমতার অধিকারী। দেশটাই রাজপরিবারের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি, আর জনগণ তাদের প্রজা এবং অনুগ্রহ লাভের অধিকারী।ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বললেও , সত্যিকার অর্থে তারা ইসলামী নয়। কিছু শরিয়া আইন ( চোরের হাতকাটা, জনসমক্ষে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া)তারা জনগণের উপর কার্যকারী করলেও রাজপরিবারের সদস্যরা সব সময় থেকে গেছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে।তাদের অপরাধের কথা আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলতে জানতে পারি, কিন্তু এজন্য রাজপরিবারের কোন সদস্যের উপর শরিয়া আইন কার্যকারী হয়েছে- এমন খবর আমরা কোন দিন শুনিনাই। তারা কি শরিয়া আইনের আওতামুক্ত? রাসুল (সঃ) বলেছেন- ‘আমার কন্যা ফাতেমা যদি চুরি করত তাহলে আমি তার হাত কাটার নির্দেশ দিতাম’। রাষ্ট্রের সম্পত্তি যারা ব্যাক্তিগত সম্পত্তি মনে করে তার কখনো ইসলামী হতে পারেনা। হযরত উমার (রাঃ) বায়তুল মালের সম্পদকে ইয়াতিমের সম্পদের মত মনে করতেন, এবং একটি অনু পরিমান সম্পদও তিনি ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহার করতেননা।

পৃথিবীতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক বেশী ভালো না। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় খ্রিস্টান দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক খুব মধুর। সৌদি বাদশাহ হিন্দরাষ্ট্র ভারত সফর করলেও মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ সফরে আসেনি। ইরানের সাথে তাদের সম্পর্ক সাপে নেউলে। যদিও ইরান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। বন্ধু রাষ্ট্র আমেরিকার স্বার্থরক্ষার জন্য তারা ইরানের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত। ইসলামী রাষ্ট্র ইরানকে তারা সহ্য করতে পারেনা, মিশরের ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্টকে উতখাতের জন্য তারা প্রত্যক্ষ অর্থ বিনিয়োগ করে। অথচ, যে ছয়টি দেশ আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল তার একটি এই সোউদি আরব। পতিত সৈরাচারদের খোয়াড় এই সৌদি আরব। ইদি আমিন, বেন আলীর মত জনধিকৃত সৈরাচারেরা সৌদি আরবে আশ্রয় পেয়েছে। বঙ্গদেশীয় পতিত সৈরাচার এরশাদের সাথে তাদের খুব মধুর সম্পর্ক ছিল, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে যা নেই। ইসলামের কথিত ধজ্জাধারী সৌদি বাদশাহ মিশরের ইসলামপন্থি সরকারকে উতখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে খবর বেড়িয়েছে। মিশরজুড়ে বিক্ষোভরত মুরসি সমর্থকদের হটানোর জন্য কাড়ি কাড়ি পেট্রডলার তারা মিশর সেনাবাহিনীকে দিয়েছে।

সমগ্র মিশরে ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন চলছে। সমগ্র বিশ্বের ইসলামপন্থী জনতা মিশরের মজলুমদের জন্য দোয়া করছে। আমরা বাংলাদেশের মুসলমানরা মিশরের মুসলমানদের দুঃখে দুঃখভারাক্রান্ত। আশ্চর্যের বিষয় এখানেই, হিসাব মেলাতে পারিনা এখানেই, যখন আমরা মিশরীয় মুসলিমদের জন্য দোয়া করছি, ঠিক সেই মুহুর্তেও মিশরের ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতনের জন্য ইসলামবিরোধীদের অর্থযোগান দিচ্চে, ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতনে যারা খুশি হচ্ছে , সেই সৌদি রাজপরিবারকে আমরা ইসলামের কেন্দ্র বিবেচনা করছি। আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা সোউদি রাজপরিবারকে ইসলামের খাদেম মনে করে এবং বিপদে তাদের কাছেই ধর্না দেয়। কয়েকদিন আগে পাকিস্তান জামায়াত ইসলামের আমীর মুনাওয়ার হাসান বলেছেন- বাংলাদেশে জামায়াত কে রক্ষার জন্য সৌদি আরবকে এগিয়ে আসতে হবে। কষ্ট পেয়েছি। সোউদি আরব নয় আল্লাহর উপর ভরষাই জামায়াতকে রক্ষা করতে পারবে। সৌদি আরবের উপর ভর করে টিকে থাকার চেয়ে আল্লাহর উপর ভরষা করে ধংস হয়ে যাওয়া সহস্রগুনে ভাল। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য মিশরের ইসলামপন্থীদের উতখাত করে, তারা সেই স্বার্থের জন্য একদিন বাংলাদেশী ইসলামপন্থীদের ফাসিতে ঝুলাবে না- তার কোন নিশ্চয়তা আছে?

বিষয়: বিবিধ

১৬০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File