দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপুর্ব জার্মানী- ইতালীর অবস্থা বর্তমান বাংলাদেশের চেয়ে ব্যাতিক্রম ছিল না। মৃনাল হাসান
লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ১২ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১৬:৫৬ রাত
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর প্রধান নির্বাহী আদিলুর রহমান খানকে ১১ ই আগষ্ট সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী আটক করে।ওই দিন তাকে আদালতে তোলা হলে হাকিম তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ১২ই আগষ্ট হাইকোর্ট তার রিমান্ড স্থগিত করেছে। জনাব আদিলুর রহমান খান তো গাড়ি ভাংচুর করেনাই, টেন্ডারবাজি করে নাই, খুন করেনাই, গুম করে নাই, ইভ টিজিং করে নাই, সাংবাদিক পিটাই নাই, ধর্ষন করে নাই, গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে কোন জিহাদী বই পাওয়া যাই নি। তার কার্যালয়ে পুলিশ তল্লাশী করেছে, ল্যাপ্টপ কম্পিউটার ও সি পি ইউ ছাড়া কোন জিহাদী বই পাওয়া যাইনি। তিনি কারো বিলবোর্ড দখল করে নিজের প্রচারনা চালাইনি। তারপরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগটা হচ্ছে- ৬ মে হেফাযতের সমাবেশ নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। ৬ মে রাতে শাপলা চত্বরে পুলিশের অভিযানে ৬১ জন হেফাযত কর্মী নিহত হয় বলে রিপোর্ট করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। মিথ্যাচারই বটে! প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- শাপলা অভিযানে হতাহতের কন ঘটনা ঘটে নাই, হেফাযত কর্মীরা রঙ মেখে শুয়ে ছিল। মন্ত্রীরা বলেছেন- হেফাযত কর্মীরা কোরান শরিফ পুড়িয়েছে, ঢাকা শহরে গাছ কেটেছে ইত্যাদি। পুলিশ বলেছে- হেফাযত কর্মীরা পুলিশ হত্যা করেছে, ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করেছিল। কালো বিড়ালখ্যাত একমন্ত্রী বলেছেন- হেফাযত কর্মীরা সুভানাল্লা, সুভানাল্লা বলে পালিয়ে গেছে। মিডিয়া ( বিদেশী মিডিয়া ও দেশীয় বস্তুনিষ্ঠ মিডিয়া বাদে) রিপোর্ট করেছে-হেফাযত তান্ডব চালিয়েছে। জনাব আদিল সরাকার ও তার মদদপুষ্ট মিডিয়ার সাথে সুর না মিলিয়ে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেছেন। এটাই তার দোষ- এটাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। এটাই তথ্য প্রযুক্তি আইনের লঙ্ঘন।
হেফাযতের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানের নাম ছিল- অপারেশন ফ্লাশ আউট। বাথরুমের কমোডের মলমুত্র ফ্লাশের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়। সরকারের কাছে হেফাযতের আলেমগন বাথরুমের মলমুত্রের চেয়ে বেশী মুল্য পাইনি, তাই সরকার অপারেশন ফ্লাশ আউট চালিয়ে আলেমদের হত্যা করে শাপলা চত্বর পরিষ্কার করেছে। সরকারের কাছে মুল্যহীন এই অবহেলিত আলেমসমাজ,যাদের অনেকেই এতিম, সরকারী আনুকুল্য বাদে পবিত্র কোরান হাদিসের শিক্ষা নিয়েছেন। সরকারের কাছে যে আলেমসমাজের মুল্য খড়কুটার চেয়ে বেশী নয়, তাদের জন্য দরদ উথলে উঠেছে আদিলুর রহমান খানের। এটা কি অপরাধ নয়? তিনি কেন ডঃ মিজানের মত নির্লজ্জভাবে সরকারের সুরে সুরে গাইলেন না?
জনাব আদিলের আরো একটি অপরাধ – তিনি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনাও মেনে নিতে পারেনি। অর্থমন্ত্রীর ভাষায় – রাজনীতি তো দুরের কথা, যাদের এদেশে থাকার অধিকারই নেই, তারা গুম, খুন যাই হোক না কেন, তাদের প্রতি দরদ দেখানো কি অপরাধ নয়?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পুর্ব জার্মানি ও ইতালীর অবস্থাও বর্তমান বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন কিছু ছিলনা। জগতবিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন নাতসী বাহিনীর অত্যাচারে জার্মানী ছেড়ে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী ডঃ ইউনুসকে সরকার যেভাবে হেনস্থা করেছে, তাতে যথাযথ সম্মান নিয়ে এদেশ টিকে থাকা তার পক্ষে কি সম্ভব? সেই সময়ে জার্মানী ও ইতালীতে মানবাধিকার বলে কিছু ছিলনা। সরকারের বিরুদ্ধাচারন যারাই করেছে, তাদেরকেই জীবিন দিতে হয়েছে। ইহুদীদের প্রতি সহানুভুতিসম্পন্ন কোন জাতিয়তাবাদী জার্মানও বেচে থাকতে পারেনি। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা ছিলনা।To serve Hitler is to serve of Germany, to serve Germany is to serve of God. এটাই ছিল তাদের থিওরি। তেমনি এই বাংলাদেশে যারা সেকুলারিজমের খেদমত করছে, আলাহ- রাসুলের বিরুদ্ধে ব্লগ লিখছে তারাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, আর যারা ইসলামের পক্ষে কথা বলছে, মানবাধিকারের কথা বলছে, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার। তাদের যায়গা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন