রক্তমাখা হাতে হাত মেলালেন কেন?

লিখেছেন লিখেছেন মৃনাল হাসান ০১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫৩:১২ রাত

আমেরিকা নরেন্দ্র মোদীকে ভিসা দেয়নি। কারণ, তার হাতে রক্ত, সংখ্যালঘু মুসলিমদের রক্ত।নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যসেন বলেছেন- আমি নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইনা।২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উগ্রবাদী হিন্দুরা প্রায় দুই হাজার মুসলিমকে হত্যা করে। গুজরাট বিধানসভার সাবেক সদস্য ও কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরিও ঐ দাঙ্গায় নির্মমভাবে নিহত হয়।মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঐ দাঙ্গায় তিনি উগ্র হিন্দুদের মদদ দিয়েছিলেন এবং ঐ সময়ে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দাঙ্গা প্রতিরোধে কার্যকারি কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি।বরং, পরোক্ষভাবে তিনি উগ্রহিন্দুদের উস্কে দিয়ে গুজরাট থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন।কিছুদিন আগেও এই চরম উগ্রবাদি বিজেপি নেতা বললেন- রাস্তায় একটি কুকুরের মৃত্যুতেও তিনি ব্যাথিত হন, কিন্তু মুসলমানের মৃত্যুতে তিনি কষ্ট পাননা।২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। মোদীকে সামনে রেখেই বিজেপি তাদের নির্বাচনী ছক কষছে।এতে দলের ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ জোটের উদারপন্থি শরিকেরা নাখোশ।প্রতিবাদে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার এন ডি এ জোট থেকে বেরিয়ে গেছে। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী বিজেপি’র বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি,যিনি বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার অন্যতম উন্মাদনাদানকারি এবং অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর রামমন্দির নির্মানে বদ্ধপরিকর, তিনিও দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন- মোদিকে দলের উচ্চপর্যায়ের বিশেষ প্রচারনার দায়িত্ব দেওয়ার কারনে। পরে দলের সিনিয়র নেতা ও সভাপতির অনুরোধে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেয়।নিজ দলেও মোদি একজন বিতর্কিত এবং সারা ভারতেও তিনি বিতর্কিত। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গির কারনে এবং ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম নিধনের কারনে সারা বিশ্বে তার কুখ্যাতি রয়েছে।

কয়েকদিন আগে এই নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাত করেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনার তারিক এ করিম।তার এ সাক্ষাত নিয়ে ভারতে নানা প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছে। সে দেশের টেলিগ্রাফ পত্রিকা মন্তব্য করেছে, এই বৈঠক বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগকে কতটা সাহায্য করবে তা বলা না গেলেও নরেন্দ্র মোদীর ওয়েবসাইটে এই সৌজন্য সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়েছে। অনুমান করা যায় আগামী দিনে নির্বাচনী প্রচারেও এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি তুলে ধরা বলা হবে যে, শুধু ভারতের মুসলমানদের কাছেই নয়, ভারতের বাইরের মুসলমানদের কাছেও নরেন্দ্র মোদী সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারিক এ করিমকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ভারতে হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মিঃ করিম সরকারের একজন অত্যন্ত আস্থাভাজন ও অনুগত ব্যাক্তি। সরকারের নির্দেশেই তিনি মোদির সাথে সাক্ষাত করেছেন।উদ্দেশ্য ভারতের সাথে সীমান্ত ও তিস্তার পানিবন্টন চুক্তিতে বিজেপিকে রাজি করানো।আওয়ামীলীগ ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু।ভারতও বাংলাদেশের জনগণ নয়, আওয়ামীলীগকেই প্রকৃত বন্ধু মনে করে।সেই হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে অনেক ভাল।মহাজোট সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ এই সময়ে ভারতের সাথে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া সরকারের চরম ব্যার্থতার পরিচয় বহন করে।তাই শেষ মুহুর্তে এসে সরকার ভারতের সাথে একটা চুক্তিতে পৌছাতে মরিয়া। মনমোহন সরকারের মনোভাব ইতিবাচক, কিন্তু বিরোধীদলগুলোর সমর্থন না পাওয়ায় সরকার কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারছেনা।কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের সাথে কোন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য বিরোধীদল বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে।মনমোহন সরকার এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা।কারণ, লোকসভা ও রাজ্যসভায় তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, যার জোরে তারা কোন চুক্তি বিল হিসেবে পাস করাতে পারবে।তাই বিরোধীদলের দারস্থ হতে হয়েছে।কিন্তু বিরোধীদল না রাজি।ভারত সরকার যখন ব্যার্থ তাদের বিরোধীদলকে রাজি করাতে, তখনই সেই প্রায় অসম্ভব মিশনে নেমেছে বিদেশসফরে রেকর্ডধারী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি ও ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিঃ করিম।এই কারনেই মিঃ করিম নিজ উদ্দোগে সাক্ষাত করেছেন মোদীর সাথে।

কয়েকদিন আগে দীপুমনি সাক্ষাত করেছেন লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ এবং রাজ্যসভার বিরোধী নেতা অরুন জেটলির সাথে। উদ্দেশ্য তাদের সমর্থন আদায় করা।কিন্তু কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষ্যমতে, দীপুমনিকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।দীপুমনির সর্বশেষ চেষ্টা, নরেন্দ্র মোদীর সাথে মিঃ করিমের বৈঠক, যদি তাদের মনগলানো যায়।ভারত –বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস পাঠে- মনে হয় না কিছু হবে। এই বৈঠকে লাভবান হয়েছে মোদী নিজে।সে তার কলঙ্ক আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছে।ইতোমধ্যে বিজেপি’র ওয়েবসাইটে ঐ বৈঠকের ছবি ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, ভোটারদের কাছে একটা বার্তা পৈছানো হচ্ছে যে, মুসলিম বিশ্বের কাছেও মোদীর গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে।

১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল।কিন্তু ১৯৭১ সালের পর তারা আমাদের থেকে শুধুই নিয়েছেন, কিছুই দেয়নি।আমাদের পদ্মানদী শুকে গেছে ফারক্কার কারণে, তিস্তা, ফেনী নদীর ন্যায্য হিস্যা আমরা পাইনা, সিলেটকে মরুভূমি বানাতে টিপাইমুখে বাঁধ দিচ্ছে তারা। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বিএসএফ এর নিত্যকর্ম। বাদ ছিল ট্রানজিট, সেটাও দেওয়া হয়ে গেছে। বিনিময়ে তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাও আটকে দিয়েছে বিরোধীদলের অসম্মতির অজুহাতে।আমাদের সরকার ভারতের সাথে চুক্তি করে গোপনে,বিরোধীদল ও জনগণ জানতে পারেনা। আর ভারত সরকার বিরোধীদলের সমর্থন ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তি করেনা। সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস পাঠে আমাদের বোধদয় হলনা।উদার হস্তে তাদের দিয়ে চলেছি, কিছুই আটকে রাখিনি পাওয়ার জন্য।আর সর্বশেষ এমন একজন ব্যাক্তির দারস্থ হতে হল, যার হাতে রক্ত, যার রাজনীতি সংখ্যালঘু মুসলিম হত্যার কলঙ্কে নিমজ্জিত।সরকারের কর্তা ব্যাক্তিদের সবিনয়ে প্রশ্ন করি- কেন ঐ রক্ত মাখা হাতে হাত মেলালেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File