পশ্চমিা বশ্বি ইসলাম ও মানবাধকিার (র্পব-৩)

লিখেছেন লিখেছেন ইজহারুল ইসলাম ০১ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:০৫:০৫ সকাল

ইজহারুল ইসলাম

মানবাধকিাররে ইতহিাস (...র্পূবরে পর)

ষষ্ঠ শতাব্দীতে মানবাধকিার

পৃথিবীর অপরাপর সভ্যতার মত আরব সমাজও তখন নানা ধরনের কু-সংস্কার এবং সামাজিক অসংগতির অন্ধকারে নিমজ্জিত। দাসপ্রথা, দাস নির্যাতন ও শিশুদের জীবন্তা প্রোথিতকরণ ইত্যকার অমানবিক আচরণে সমাজ ছিল কলুষিত। নারী সমাজ ছিল নির্যাতিত ও অবহেলিত। সুদ-ঘুষ, জুয়া ইত্যাদি ছিল তাদের সামাজিক রীতি-নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। হত্যা ও লুণ্ঠনের ঘটনা ছিল খুবই সাধারণ। গোত্রদ্বন্দ্ব তখন শত বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের রূপ নিত। ঠিক এমন একটা মুহূর্তে মুহাম্মাদ (দঃ) তাঁর শান্তির বাণী প্রচার শুরু করলেন। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুহাম্মাদ (দঃ) এবং তাঁর অনুসারী বিদগ্ধ সাহাবাগণ এ সমস্ত সামাজিক অসংগতি দূরীভূত করেন।

ঐতিহাসিকগণ একমত হয়েছেন ,

ÒMohammad preached against what he saw as the social evils of his day”

অর্থাৎ“মুহাম্মাদ (দঃ) তৎকালীন সর্ব প্রকারের সামাজিক অনাচারের প্রতিবাদ করেন”

Lecky, History of Europiean Morals, vol.2.p.162-163

ইসলাম শুরু থেকেই সামাজিক নিরাপত্তা, পারিবারিক সংগঠন, দাসদের অবস্থার উন্নয়ন, বংশীয় ভেদাভেদ দূরীকরণ এবং মহিলাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে”।

জন ইস্পোসিটো লিখেছেন,

“সংস্কারক হিসেবে মুহাম্মাদ (দঃ) মূর্তিপূজক আরবদের মধ্যে প্রচলিত মেয়ে শিশু হত্যা, দরিদ্রতা, ঘুষ, আত্মসাৎ, মিথ্যা ও অবৈধ চুক্তি ইত্যাদি প্রথা দূর করেন।”

[Esposito (2005) p.79]

বার্নার্ড লুইস (ইবৎহধৎফ খবরিং) ইসলামের সাম্যের প্রকৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন,

Represented a very considerable advance on the practice of both Greco-Roman and the ancient Persian World.

অর্থাৎ“ইসলামী সাম্যের প্রকৃতিকে প্রাচীন রোমক, গ্রিক ও পার্সি সভ্যতার তুলনায় উন্নততর মনে করা হয়।”

বাস্তব সত্য হলো, তিনি আরবের বেদুইনদের মাঝে সভ্যতা এবং সংস্কৃতির যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তার সাথে না কোন প্রাচীন সভ্যতার তুলনা হতে পারে, না ভবিষ্যতের কোন সভ্যতার!

তিনি মক্কার মধ্যে বিপ্লবের যে বীজ বপন করেছিলেন তা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সমগ্র বিশ্বকে ছায়া দান করে। প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে মুহাম্মাদ (সঃ) এবং সাহাবাগণ মদীনায় হিজরত করেন। সে সময় মদীনায় ছিল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর অবস্থান। তাদের মধ্যে শত বছরের গোত্রদ্বন্দ্ব বিরাজমান ছিল। মুহাম্মাদ (দঃ) বিভিন্ন ধর্ম এবং জাতির পারস্পরিক সহাবস্থানকে কলহমুক্ত এবং সুখময় করতে মদীনা সনদ প্রবর্তন করেন।

The constitution of Medina (صحيفة المدينة Sahifatul Madina) যাকে Charter of Medina (চার্টার অব মদীনা) ও বলা হয়। এটি ৬২২খ্রি: সম্পাদিত হয়।

মদীনা সনদ ছিল মুহাম্মাদ (সঃ) এবং মদীনার অধিবাসী বিভিন্ন জাতি ও গোত্র অর্থাৎ মুসলমান, ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মূর্তিপূজকদের মাঝে সম্পাদিত একটি চুক্তি

মদীনা সনদে অমুসলিমদের অধিকারঃ

মদীনা সনদে মদীনার অধিবাসী অমুসলিমদেরকে বিশেষভাবে নি¤েœর অধিকারগুলো প্রদান করা হয় ,

The security of God is equal for all groups

সকলের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা সমান

Article 15,as quoted in Ahmed (1979) p.46-47

 Non-Muslims members have equal political and cultural rights as Muslims .They will have autonomy an freedom of religion

অমুসলিমরা মুসলিমদের ন্যায় সমান রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার ভোগ করবে। তারা ধর্মীয় কার্যক্রমে পূর্ণ স্বাধীন।

Non-Muslims will take- up arms against the enemy of the Ummah and share the cost of war, there is to be no treachery between the two.

অমুসলিমরা চুক্তিবদ্ধ জোটের শত্রুদের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে এবং যুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতিতে সমানভাবে অংশীদার হবে। মুসলিম এবং অমুসলিম কেউ একে অপরের প্রতি প্রতারণার আশ্রয় নিবে না।

Non-Muslims will not be obliged to take part in religious wars of the Muslims

অমুসলিম সম্প্রদায় মুসলমানদের ধর্মীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে না।

বন্দীদের সাথে সদ্ব্যবহারঃ

বন্দী নির্যাতনের ইতিহাস সুপ্রাচীন। আধুনিক যুগেও মানুষ বন্দী নির্যাতনের অমানবিক লোমহর্ষক দৃশ্যের অবতারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। মুহাম্মাদ (দঃ) একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি বন্দীর সাথে সদ্ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করেন। মাওলানা মওদুদী সাহেব লিখেছেন,

“মুহাম্মাদ (স) ইসলামী সরকারের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন যে, ইসলামী সরকার যুদ্ধবন্দীদের খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে, তাদের ধর্ম যা-ই হোক না কেন। যদি বন্দী অন্য কারও যিম্মায় থাকে তবে তার খাদ্য ও বস্ত্রের দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে।”

দাস প্রথা ও নারী সমাজঃ

মানুষ সৃষ্টিগতভাবে স¦াধীন। মানুষ হয়ে তারই সমগোত্রীয়দের গোলামী করা মনুষ্যত্বের চরম অপমান। কিন্তু মানুষ নিজ স¦ার্থে এই মানুষকে গোলামে পরিণত করেছে। এমনকি একটা সময় ছিল যখন শৃংখলাবদ্ধ করে তাকে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে এক বর্বর খেলায় মেতে উঠেছিল। এভাবে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত দাস প্রথা বিশ্বব্যপী প্রচলিত ছিল।

মুহাম্মদ (সঃ) সর্ব প্রথম ব্যক্তিত্ব, যিনি দাসদের অবস্থা প্রভূত উন্নত করার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

লুইস মন্তাব্য করেছেন,

“ইসলাম প্রাচীন দাসপ্রথার ক্ষেত্রে প্রধান দুটি পরিবর্তন এনেছে, যার ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারীÑ

One of these, was the presumption of freedom; the other, the ban on enslavement of free persons except in strictly defined circumstances..

“এর একটি হল, স্বাধীনতার মৌলিক ভিত্তি স্থাপন। আরেকটি হল,কিছু বিশেষ অবস্থা ছাড়া স্বাধীন ব্যক্তিকে দাসে পরিণত করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।”

তিনি পরবর্তীতে লিখেছেন,

আরব দাসদের অবস্থা প্রভূত উন্নতি লাভ করে। ফলে তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন অস্থাবর সম্পত্তি হিসাবে আর বিবেচিত হবে না। বরং তারা মানবিক মর্যাদা তথা মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার অধিকার অর্জন করবে। ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে যথাযথ অধিকার তারা ফিরে পাবে”।

তৎকালীন বিশ্বে নারীদের অবস্থা ছিল করুণ। তাদের মানবিক-সত্তা বলতে কিছু ছিল না। তাদের পরিচয় এই ছিল যে, তারা পুরুষদের চেয়ে হীনতর; পুরুষদের গোলাম। ভোগ্য সামগ্রী হিসাবে অন্যান্য বস্তু যতটা মর্যাদা পেত, নারী সমাজ তাও পেত না।

মুহাম্মাদ (দঃ) সর্ব প্রথম মেয়ে হত্যা নিষিদ্ধ করেন এবং আরব মহিলাদেরকে তাদের স্বাধীন ব্যক্তিত্ব রক্ষার স্বীকৃতি প্রদান করেন। নারীরা সে-সময় সম্পদের মালিক হতে পারত না। তিনি নারী সমাজকে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অংশীদার করেন। এছাড়াও বিবাহের সময় মহিলাদেরকে যে পণ প্রদান করা হত, তা মেয়ের পিতার সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হত। ইসলাম এ রীতির পরিবর্তন করে।

"The dowry, previously regarded as a bride-price paid to the father, became a nuptial gift retained by the wife as part of her personal property."

“আরব মহিলাদেরকে বিবাহের সময় যে পণ প্রদান করা হত, তা পিতার সম্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা হত, ইসলাম একে মহিলাদের জন্য বিবাহ-কালীন একটা উপহার হিসাবে নির্ধারণ করে। এবং এটি ছিল তার নিজস্ব সম্পত্তি (অর্থাৎ স্বামী বা অন্য কেউ তার মালিক নয়।)”

Firestone (1999) p. 118; 2."Muhammad", Encyclopedia of Islam Online

মহিলাদের মৌলিক অধিকার দানের ক্ষেত্রে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছিল তাদের বিবাহোত্তর জীবনের নিরাপত্তা এবং উপযুক্ত অধিকার অর্জন।

“ইসলামী আইনে বিবাহ কোন প্রথা ছিল না বরং এটি ছিল একটা "contract বা চুক্তি। যেক্ষেত্রে মহিলাদের মতামত নেওয়া আবশ্যক ছিল”।

সামগ্রিকভাবে মহিলাদেরকে যে অধিকার ও মর্যাদা ইসলাম প্রদান করেছে, তা কোন দর্শন, সমাজ, রাষ্ট্র ধর্মমত প্রদান করেনি। আজ চৌদ্দশত বৎসরের ইতিহাস আমাদের সামনে; আধুনিক যুগে এসে মহিলাদের লাঞ্ছণা আর সামাজিক দুর্গতি যেন সেই জাহিলিয়্যাতকেও ছাড়িয়ে যায়। ধর্ষণ, খুন এবং ইভটিজিং এর যে চিত্র প্রতিদিন আমাদের সামনে আসছে, তা-ই প্রমাণ করে আজকের সমাজে মহিলাদের অবস্থান কোথায়। সভ্যতার নামে অসভ্যতাকে আশ্রয় করে কোন জাতি-সমাজ টিকে থাকতে পারে না। এজন্যই হয়ত ইউরোপ-আমেরিকাতে“ইসলাম বর্বর, মহিলাদেরকে হিজাব পরার কথা বলে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে, ইত্যকার হাজারও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নারীদের ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা অনেক বেশি। অনেকে তাদের সাক্ষাৎকারে বলে থাকেন যে এখন তারা বেশি নিরাপত্তা, বেশি আত্মসম্মান বোধ অর্জন করেছে।

হাদ্দাদ এবং এবং ইস্পোসিটো মন্তাব্য করেছেন,

Muhammad granted women rights and privileges in the sphere of family life, marriage, education, and economic endeavors, rights that help improve women's status in society.

“মুহাম্মাদ [সঃ] নারীদেরকে তাদের পারিবারিক, বৈবাহিক, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে তাদের বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। সাথে সাথে তাদের সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় করার পথ সুগম করেছেন।”

[চলবে]

বিষয়: বিবিধ

৯৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File