পশ্চমিা বশ্বি ইসলাম ও মানবাধকিার (র্পব-২)
লিখেছেন লিখেছেন ইজহারুল ইসলাম ৩১ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৪৪:৫৬ সন্ধ্যা
মানবাধকিাররে ইতহিাস (র্পূবরে পর..)
ইজহারুল ইসলাম
হযরত ঈসা (আঃ) ও তার পরবর্তী যুগ:
হযরত ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে এসে অন্যায়-অরাজকতার বির”দ্ধে র”খে দাঁড়ান। সাম্য ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর প্রভুর নিকট হতে যে আদেশ প্রাপ্ত হতেন,তা বাস্তবায়ন করতেন। তিনি দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের সেবা করতেন। তাদের দুর্দশা লাঘব করতেন।
তিনি মানুষকে শান্তির পথ দেখিয়েছেন। যে অধিকারের নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তখনকার যুগে শান্তিাপ্রতিষ্ঠায় তা-ই ছিল একমাত্র মাইল ফলক। আসল সত্য হল, মানুষ ঐশী প্রেরণার মাধ্যমেই তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে; নতুবা আদিম গুহাবাসী মানুষের নিকট ন্যায়- অন্যায়ের মাঝে বিভেদ রেখা টানার মত কোন মূলনীতি ছিল না। হযরত ঈসা (আঃ) সত্য প্রতিষ্ঠায় এবং মিথ্যা ও অন্যায়কে দূরীভূত করার সাধনায় সর্বদা মগ্ন ছিলেন।
পরবর্তীতে তাঁর অনুসারীরা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। রোমকদের মধ্যে রাজা কনস্টান্টাইনের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে রোমক সভ্যতায় খ্রিষ্টধর্ম স্থায়ী আসন করে নেয়। রাজা কনস্টান্টাইন খ্রিষ্টধর্মের রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হলেও তার মাধ্যমেই খ্রিষ্টধর্মের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়। তিনি হযরত ঈসা (আঃ) এর আনীত ধর্ম বিকৃত করে তার মধ্যে পৌত্তলিকতার বীজ বপন করেন ।
ড্রেপার লিখেছেন ,
“Place, power, profit-these were in veiew of whoever now joined the conquering sect.Crowds of worldly person, who cared nothing about its religious ideas, became its warmest supporters.Pagans at heart, their influence was soon manifested in the paganization of Christianity that forthwith ensued. The Emperor, no better than they, did nothing to check their proceedings.”
“সফল ও বিজয়ী দলের সাথে যারাই হাত মেলাল এবং যে কেউ তাদের সাথে শরীক হলো তারাই বড় বড় পদ লাভ করল এবং বিরাট বিরাট সম্মান ও পদ-মর্যাদার অধিকারী হল। ফল দাঁড়াল এই যে, যে দুনিয়াদার লোকেরা ধর্মের বিন্দুমাত্র পরওয়া করত না তারাই খ্রিষ্ট ধর্মের উৎসাহী সমর্থকে পরিণত হলো। যেহেতু তারা বাহ্যত খ্রিষ্টান ছিল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ছিল মূর্তিপূজারী ও মুশরিক, ফলে তাদের প্রভাবে খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে মূর্তিপূজা ও শেরেকী উপাদানের মিশ্রণ শুরু হলো। কনস্টান্টাইন মতাদর্শগত দিক দিয়ে যেহেতু তাদেরই সমগোত্রী ছিলেনÑএমন কোন পথ গ্রহণ করেন নি, যদ্দারা তাদের এই মুনাফিকসুলভ ও প্রতারণামূলক কর্মকা-ের প্রতিবিধান করা যায়”।
J.W. Draper, History of the conflict between Religion and Science, 1927, p-34
এভাবে বিকৃতির পথ ধরে খ্রিষ্টধর্ম তার নিজস্ব আবেদন হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ধর্মীয় বিশ্বাসেও সৃষ্টি হয় আমূল পরিবর্তন। বৈরাগ্যবাদ এবং পাদ্রীদের যথেচ্ছা ধর্মের ব্যখ্যা দানের ফলে ধর্মের ভাবধারায় বিলাসিতা ও ভোগবাদীতার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। রাজাদের মনগড়া আইন এবং বাইবেলের খোদায়ী আইনের মিশ্রণে খ্রিষ্টধর্ম তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অনাচার তখন এতটা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, তা পূর্বের ধর্মহীন সমাজকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এ সম্পর্কে লেকী তার History of Europian Morals নামক গ্রন্থে লিখেছেন,
“জনগণের নীতি-নৈতিকতার মাঝে চরম অবক্ষয় শুরু হয়েছিল। রাজদরবারের বিলাস ব্যসন ও ভোগ-বিলাসিতা, দরবারীদের গোলামী স্বভাব ও দাস্য মনোবৃত্তি, বেশভূষা ও সাজ-সজ্জা প্রীতির তখন রমরমা অবস্থা। তৎকালীন দুনিয়া চরম বৈরাগ্যবাদ ও চরম পাপাচারের নাগরদোলায় দোল খাচ্ছিল, বরং কোন কোন কোন শহরে, যেসব শহরে সর্বাধিক সংখ্যক সংসারবিরাগী সাধু-সন্তু জন্ম নিয়েছিল সেসব শহরেই বিলাস ব্যসন ও অনাচারের রাজত্ব চলছিল অবাধে। মোটের ওপর অনাচার, পাপাচার ও কুসংস্কারর এমন সমাবেশ ঘটেছিল যা ছিল মানুষের আভিজাত্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অকাট্য দুশমন। জনমত এত পরিমাণ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে, অপমান দুর্নামের কোন ভয় আর অবশিষ্ট ছিল না, বরং এ সব লোকের মন থেকে একেবারে উঠেই গিয়েছিল। মানুষের মনে বিরাজিত ধর্মভয় তাকে অন্যায়Ñঅনাচার থেকে বিরত রাখতে পারত, কিন্তু এই বিশ্বাস সেই ভয়ভীতিকেও দূরীভূত করে দিয়েছিল যে, দোআ প্রভৃতির মাধ্যমে সর্বপ্রকার গোনাহ ও পাপ-তাপ মাফ হয়ে যেতে পারে। প্রতারণা, ধোঁকা, প্রবঞ্চনা ও মিথ্যা কথার বাজার ছিল গরম যা সিজারদেরও যুগেও ছিল না। অবশ্য জুলুম-নির্যাতন, জোর-যবরদস্তি, নিষ্ঠুরতা, হৃদয়হীনতা ও নিলজ্জতারও কমতি ছিল না”।
Lecky, History of Europiean Morals, vol.2.p.162-163
সামাজিক অসংগতির আবরণে মানব সত্তার মৃত্যু অবস্যম্ভাবী হয়ে ওঠে । চলমান অন্যায় ও পাপাচারে গা ভাসিয়ে মানব সমাজ ধ্বংসের উপকূলে উপনীত হয়। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সমগ্র মানবতাকে টিকিয়ে রাখতে, মানব সত্তার স্বকীয়তা বজায় রাখতে, সমাজে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ছিল অনস্বীকার্য। ষষ্ঠ শতাব্দীতে ইসলাম সমাজের পুনর্গঠনে, মৌলিক মানব অধিকার নিশ্চিত করতে পরিবর্তনের নব যুগের সূচনা করে।
[চলবে]
বিষয়: বিবিধ
১০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন