তেতুল তথ্য ও পর্দার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপস্ ৩০ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৪৪:০৮ রাত
সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ইসলামের প্রতি অনুগত হয়ে প্রবাস জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও বিবেকের তাড়ণায় লিখছি। আমরা যারা মুসলিম বাংলাদেশী তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আমরা কি শুধু নামেই মুসলমান, নাকি মানুষের তৈরী রাজনৈতীকের জন্য ইসলাম ধর্ম কে অবমাননা ?
ইসলামিক দৃষ্টি কোন এবং পবিত্র কোরআনের বাণী ও বিজ্ঞান অনুসারে পুরুষ হলো বিদ্যুৎ এবং নারী হলো চুম্বকিয় একে অপরের পরিপূরক। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্'তাঅলার স্পষ্ট ঘোষনা আছে ইসলামে নারীদের পর্দা সম্পর্কে। আজ আমরা পশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরনের ফলে মুসলিম সমাজ যে চরম অবনতির শিকার হচ্ছি এই ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে হযরত নবীয়ে মুস্তফা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তম আদর্শের অনুসরণের পথে ইসলামী শরী'য়াতের বাস্তবায়ন ছাড়া ইহলৌকিক ও পরলৌকিক শান্তি ও মুক্তির আর অন্য কোন বিকল্প নেই।
সাধারণত দু'ধরনের মানুষ পর্দার বিরোধিতা করে থাকে এক ধরনের মানুষ হলো যারা মূলতঃ ইসলাম ও শরী'য়াতের ধার ধারে না। পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণ করে নিজেকে ধন্য ও স্মার্ট মনে করে। তাদের ধারণা বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নগ্নতা হলো আর্ট, অপরপক্ষে আল্লাহ্ ও তার প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষা হলো মধ্যযুগীয় এবং নারীদের বাহিরে না যাওয়ার জন্য অহেতুক প্রতিবন্ধকতা, সমাজে উচ্চ আসনে বসা নারীদের প্রতি অসন্মান করা। এ শ্রেনীর লোকেরা যেহেতু জন্মসূত্রে মুসলমান এবং মুসলিম পরিবারের সাথে সামাজিক সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু স্পষ্টভাবে ইসলাম তথা পবিত্র কোরআন-হাদীসকে অস্বীকার করার দুঃসাহস তারা দেখাতে পারে না। কিন্তু ইসলামী শরী'য়তের পর্দার বিধানকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য যেন এরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন মূল্যে সমাজ থেকে পর্দার বিধানকে উৎপাটিত করতে এরা বদ্ধপরিকর। উল্লেখ্য যে, ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত না হেনে পরিকল্পতভাবে ও সুকৌশলে তারা একথা বুঝাতে চেষ্টা করছে যে, আসলে কোরআন-হাদীসে পর্দার হুকুম নেই। পর্দা প্রথা হচ্ছে সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরামদের মনগড়া একটি বিধাণ রাজনৈতিক ও গনমাধ্যমের ভাষায় যা "তেতুল তথ্য"। তারা পর্দানশীল নারীদের বিভিন্ন ভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকে এবং অশ্লীলতা ও নগ্নতার প্রতি তাদেরকে আহ্ববান করে। অথচ, পবিত্র কোরআন-হাদীসের অকাট্য দলীল এবং আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পর্দার আবশ্যকতাকে স্পষ্টভাবে প্রমানীত করে। যারা এ অপবাদ রটানোর চেষ্টা করছে যে, পর্দার বিধাণ পবিত্র কোরআন শরীফে নেই এবং এটি সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরামদের মনগড়া একটি বিধাণ তাদের, ধিক্কার জানাই। মহান রাব্বুল আলামিন তাদের হেদায়াত দান করুণ (আমিন)।
আরো এক ধরনের লোকেরা পর্দার বিরোধীতা করে থাকেন, যারা মাঝে মাঝে নামায-কালাম আদায় করে সাথে দু'এক শব্দ আরবীও জানে। এদের বক্তব্য হলো, ইসলামে পর্দার হুকুম আছে কিন্তু পর্দার এ কঠোরতা সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরামদের মনগড়া জিনিস। পবিত্র কোরআন শরীফে এবং হাদীসের কোথাও পর্দা সম্পর্কে এমন বাড়াবাড়ি নেই। প্রকৃত অর্থে, এই শ্রেনীর লোকেরাও প্রথম প্রকারের লোকদের দ্বারা কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত। ইসলামের সাথে যাদের সামান্যতম সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার হীনমনাষ্কতা থেকে একটা শয়তানী চাল যে, জাহিলিয়্যাতের এ যুগে শরী'য়াতের যে সব হুকুম-আহ্কাম মনৎপূত না হয়, তা সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরামদের মনগড়া বলেই সেগুলোকে তরা বাস্তবতা বিবর্জিত মনে করে। সেই সাথে একথা বলে গা বাঁচিয়ে নেয় যে, আমরা তো পবিত্র কোরআন হাদীসকে উপেক্ষা করছিনা বরং শুধু সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরামদের বানানো মনগড়া ভুল মাস্আলাকে উপেক্ষা করছি।
আসলে সন্মানীত আলেম উলামায়ে কিরাম কখনো মনগড়া হুকুম-আহ্কাম বর্ণনা করেন না। বাস্তবিক ভাবে যেহেতু আলেম উলামায়ে কিরাম সরাসরি পবিত্র কোরআন-হাদীস থেকে শরী'য়াতের হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত বিস্তারীত জ্ঞান অর্জন করেন সেহেতু সমাজকে তাঁরা মুখে অথবা কলমের মাধ্যমে বিস্তারীত মহান আল্লাহ্'তাআলার হুকুম-আহকাম জানাতে দায়িত্ব পালন মনে করেন। এবং মুসলিম ভাই-বোনদের কে শরী'য়তের মুতাবিক জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে ঈমানী দায়িত্ব মনে করেন। যা বর্তমান জীবন ধারায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে "মৌলবাদীত্ব" হিসেবে রাজনৈতিক স্বার্থে কতিপয় রাজনৈতীকবিদ ও নাস্তিক বুদ্বিজীবি গন ব্যবহার করছে।
অপরদিকে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে অর্ধশিক্ষিত বা শিক্ষিত তথাকথিত 'বুদ্বিজীবিদের' যেহেতু শরী'য়াত সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই, তাই শরী'য়তের স্পষ্ট ও সর্বসম্মত বিষয়গুলোকেও উপেক্ষা করার লক্ষ্যে তা আলেম উলেমায় কিরাম সম্প্রদায়ের মনগড়া বলে পাশ কেটে যান। আথচ মজার ব্যপার হলো যে সকল বিষয় তাদের মনঃপূত হয় না সেগুলোর ব্যাপারেই তাদের এই বাহানা। আর যেগুলো উপেক্ষা করার ইচ্ছা না হয় এবং নিজেরাও আমল করে থাকে, যেমন নামায, রোযা, প্রতিযোগীতা মূলক কোরবানী ইত্যাদী এবং শরী'য়তের অন্যান্য বিষয়াদি সেগুলো ঠিক স্বীকার করে নেন। বাস্তবিকতায়, এগুলোও পবিত্র কোরআন এবং হাদীস থেকে সন্মানীত আলেম উলেমায় কিরামেরই আহরণকৃত বিষয়। তাদের স্বরণ রাখা উচিৎ যে, হাশরের ময়দানে যখন মহান আল্লাহ্'র দরবারে উপস্হিত হতে হবে তখন এধরণের হাস্যকর হিলা-বাহানা কোন কাজেই আসবেনা।
পরিশেষে উপরোউল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে সকল মুসলিম ভাই বোনদের আমার অনুরোধ এই যে, কোন নাস্তিক বা বুদ্বিজীবিদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে বরং ইসলামের আদর্শে আর্দশীত হয়ে পবিত্র কোরআনের মহান বানী এবং হাদীস কে অনুসরণ করুণ।
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন