একটি বিয়ের মৃত্যু
লিখেছেন লিখেছেন আনিছুর রহমান ২৬ মে, ২০১৫, ০১:০৬:০৩ রাত
শীতের দুপুর। নির্মল আকাশ। হালকা বাতাস বইছে। মাঠের পর মাঠ শরিষার ক্ষেত। হলুদ ফুলগুলা মাথা দুলাচ্ছে। মৌমাছি ফুলে ফুলে নেচে নেচে মধু সংগ্রহ করছে। অপূর্ব লাগছে শাকিলের। এই শরিষার ক্ষেত সে জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে। কিন্তু আজ যেন সবকিছুই তার কাছে নতুন অর্থ প্রকাশ করছে। শরিষার ফুলগুলো যেন মাথা দুলিয়ে তার বিয়ের আন্দনে নৃত্ত করছে। দূরের নীল আকাশ যেন তার প্রিয়ার নীল শাড়ির রংয়ে সেজে আছে। বর বেশে শাকিল মাইক্রোর জানালা দিয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কথা গুলো। অজানা আনন্দে, ভয়ে, শিহরণে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি শাকিল।
বরযাত্রী সবাই গাড়িতে উঠেছে। শাকিলের বড় দুলাভাই এখনও গাড়িতে উঠেনি। তার জন্যই দেরী করা। এখনই গাড়ি ছাড়বে। হঠাৎ কণের বাড়ি থেকে ফোন এল। এই মাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার নোটিশ পাঠিয়েছে যে, আপনার মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয় নাই। এমতাবস্খায় যদি আপনার মেয়ে কে বিয়ে দেন তা হলে আইন অনুয়াযী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব।
রান্না কম্পিলিট। এখন এই খাবার গুলি কে খাবে? মেয়ের বাড়ি থেকে সিদ্ধান্ত জানান হলো যেহেতু রান্না হয়ে গেছে কাজেই বর ছাড়া সবাই এসে যেন খেয়ে যায়। খবরটা শোনার পর শাকিল তার গলার মালা একটানে ছিঁড়ে ফেলে মাথার মুকুটা খুলে সিটের উপর ফেলে রেখে মাইক্রো থেকে নেমে যথা সম্ভব একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল যাতে তার চোখের কোনের পানি কারো নজরে না পড়ে।
বর ছাড়া বরযাত্রী সুস্বাদু খাবার গলাধকরনের সময় অস্পষ্ট স্বরে বলতে লাগল, আইনের হাত ভাল লম্বা হয়েছে যে তা বেডরুম পযর্ন্ত পৌঁছে গেছ। আইনের এই উন্নতীর কথা চিন্তা করে অনেকেই গর্বিত হয়ে গেলে। তারা এ্ও বলল । সন্ত্রাস, দূর্ণিতি ইত্যাদির বিষয়ে যদি এই ভাবে আইনের প্রয়োগ হতো তা হলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতো না সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ হতে চাইত। কিছু দুষ্টু পুলাপান অবশ্য লেখার অযোগ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগল। ব্রিজের উপর প্রায় রাতে ছিন্তাই হয় সেটা আইন বন্ধ করতে পারেনি বলে কি বিয়ে বন্ধ করা যাবেনা। যত সব। এসব দুষ্টু পুলাপান যাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নাই এরা কখনও মানুষ হবেনা। যাহোক আইন চলবে আইনের গতিতে। যে যা বলে বলুক। পাবলিকের মুখত ধরে রাখা যায় না। লেখার উদ্দেশ্যও এটা নয়। শাকিলের মনের আবস্থা কি হোল সেই দিকে নজর দেওয়া যাক।
শাকিলের জন্য হতে যাওয়া স্বাশুড়ী একপাতিল গোস্ত সহ বিভিন্ন রকম খাবার পাঠিয়েছে। যদিও শাকিল সেগুলা ছুয়েও দেখল না। তিন দিন কেটে গেল শাকিল কিছু খায় না, কোন কাজ করেনা। যে কর্মঠ্য ছেলে। কর্ম করে অনেক টাকার মালিক হেয়েছে। তার বাবা মারা যায় যখন তার বয়স দশ বছর। বিধবা মা তাকে মানুষ করে। লেখাপড়া তেমন করতে পারে নাই । ইন্টার পাস করে গ্রামে পুকুর,জমি, মুরগীর ফার্ম, গরু ইত্যাদি পালন করে ভালই কামাই তার। মাসে পঞ্চাশ যাট হাজার টাকার মত আয় থাকে তার। সেই ছেলের কি হলো? বহু কষ্টে মানুষ করা এই ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারেনা তার মা। উঠানের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শাকিল। তার মা ভাত বেড়ে ডাকছেন আর আচল দিয়ে চোখ মুছছেন।
অনেক পিড়াপিড়ি আর প্রতিবেশিদের অনুরোধে ভাত খেতে বসল শাকিল। শাকিলের মা বললেন, তোকে ১৮ বছরের বেশি বয়সের মেয়ের সাথেই বিয়ে দিব। শাকিল শুধু ভাত নারে। আর অল্প করে মুখে দেয়। ভাত যেন তার গলা দিয়ে কিছুতেই নামতে চায়না।
বাবা ঠিকমত না খেলে শরীর ভেঙ্গে পড়বে না।
- খেতে ইচ্ছা করেনা কি করব।
- মেয়ে দেখি?
- না। যাকে বিয়ে করতে চেয়ে বিয়ে করতে পারলামনা এ জীবনে আর বিয়েই করব না।
ছেলের এই কথায় মায়ের চোখদিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে লাগলেন তুই আমার বহু কষ্টের ছেলে। তোর জন্মের সময় না তোর বাঁচার আশা ছিল না আমার। তোর বাবা মারা যাবার পর কত কষ্ট করে তোকে এত বড় করেছি। ও আল্লাহ তুমি আমায় একি পরীক্ষায় ফেললে? তুমিত রাহমানির রাহিম। তুমি একটা পথ দেখাও । আমি এখন কি করব।
ঐ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে আরো ২ বছর বাঁকি। মেয়ে পক্ষ বলেছে, আপনারা যদি অপেক্ষা করেন তাহলে আমরাও অপেক্ষা করবো।
কিন্তু শাকিল কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছেনা।ছেলের এহেন অবস্থা দেখে দুএক জন বিশ্বস্থ লোক নিয়ে মেয়ের বাবাকে তৃতীয় স্থানে ডেকে এনে পরামর্শ করা হলো। মেয়ের নানা বাড়ি প্রতিরাজপুরে রেজি: ছাড়া বিয়ের কার্য সম্পন্ন করা হলো এই শর্তে যে, ২ বছরের মধ্যে বিষয়টা গোপন রাখা হবে। গড়ে প্রতিদিন ১ ঘন্টা হিসাবে সুপার এফএনএফ নাম্বারে মাসে ৫১৭.৫০ টাকা বিল আসতে লাগল এই যা।
বি:দ্র: এটি একটি সত্য ঘটনা। তবে স্থান, কাল, পাত্রের উপর একটু রং মাখান হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
টুডে ব্লগে প্রকাশিত আপনার প্রথম লেখা আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি!!! লেখা পোস্ট ও মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের মাধ্যমে ব্লগিং উপভোগ করবেন এটাই প্রত্যাশা। শুওরের ব্লগিং....।
আর টুডে ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
আর ও বেশি বেশি লিখুন ।শুভ কামনা রইল ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন